চেহারা বদল হতে শুরু করেছে আমলা থেকে শুরু করে কামলাদের পর্যন্ত। তাঁরা ধরেই নিয়েছেন, আওয়ামী লীগের দিন শেষ এখন জামায়াত আর বিএনপির দিন শুরু তাই। জামায়াত বা বিএনপি, আওয়ামী লীগ বা বামপন্থি যেই ক্ষমতায় আসুক সেটাতে আমাদের কিছুই যায় আসে না। কারণ আমরা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। আমরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আয় করে সৎ পথে উপার্জন করে সৎভাবে বেঁচে থাকতে এবং স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাই।
শুরুটা এমনভাবে হোক, সরকারের যেখানে যেখানে খন্ডকালীন অথচ বিজ্ঞ এবং উপযুক্ত কর্মকর্তারা ছিলেন সবচেয়ে আগে বাদ দেয়া শুরু হয়েছে তাদের। অথচ এই আমলারাই তাঁদের জ্ঞান ও মেধা কাজে লাগিয়ে কেবিনেট মিটিংয়ে পেপার উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রীর বাহবা কুড়িয়েছেন। এসব গুণীজদেরকে যে হঠাৎ ছুড়ে ফেলে দেয়া হচ্ছে– সেটা কেউই জানেন না বোধহয়। বিশেষত সরকার প্রধানরাও জানেন না। কারণ সরকারের শেষ সময়ে নাজুক প্রশাসনিক অবস্থাই গড়ে তোলা এই সব আমলাদের লক্ষ্য। একমাত্র সরকারকে বিপদে ফেলতে পারে মেধাহীন অর্থ লিপ্সু কয়েকটি মানুষ ।
আর আমলারা? তাঁরা তো জন্মেছেই রাজনীতিবিদদের কীভাবে বিপদে ফেলতে হয় সেটার জন্যে । দেশ বা জাতির কোনো মঙ্গলের জন্যে নয়। এই আমলাদেরকেই আবার আমরাও আমাদের নেতা-নেত্রীরা বিশ্বাস করি। যাদের একমাত্র কাজই হল সরকারে বসে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতন ও উপরি আদায় করে রাজনীতিবিদ ও জনগণকে ‘পঞ্চমুখি ওল’-এর স্বাদ সেবন করানো।
মোটামুটি তাঁরা ধরেই নিয়েছেন যে, মহাজোট বা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসছে না। তাই সরকারের প্রতিটি স্তরে যেখানে যেখানে দক্ষ, যোগ্য রাজনীতির সাথে বিন্দু বিসর্গ সংস্পর্শ নাই (হয়ত মনে প্রানে আওয়ামী লীগ) তাদেরকে ছাঁটাই-বাছাই করে জামায়াত ও বিএনপিপন্থি কানা-লুলা গুলোকে বসাচ্ছে ।
যদি বিএনপি-জামায়াত কাউকে বসাতেই চান তাহলে অন্তত যোগ্য লোকদের বসান। যারা আওয়ামী লীগ সরকারকে যাই দিক সেটা সহ্য হবে । কারণ তাঁরা যোগ্য মানুষ। কিন্তু এ কী ? যতসব চামচা আর ভাঙাচোরাদের সরকারের গুরুত্ব পূর্ণ পদে প্রতিস্থাপন ?
বর্তমান সরকারের উচিৎ ছিল নির্বাচন প্রাক্কালে “এই ধরনের গোপন অথচ গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের দিকে অত্যন্ত সুনজর রাখা। কিন্তু সরকার তা করেনি। এই ব্যর্থতার দায় সকারের হলেও জাতিকে পোহাতে হচ্ছে এর ভোগান্তি। বেশিরভাগ সরকারি অফিসে কাজে গেলেই বোঝা যায়, যাচ্ছে – বাতাস আরাম দায়ক নয়। তবে সময় এখোনো ফুরিয়ে যায় নি। সরকার চাইলে তাঁর বিশ্বস্ত বাহিনী কাজে লাগাতে পারেন।
এবার আসি এলাকার ‘চ্যালা’দের বিষয়ে। ছিল একটি মফঃস্বল শহরের খুচরা চাল বিক্রেতা। হঠাৎ করে কোনো এক আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ হাতে পেয়ে কোনো একটি রাজনৈতিক দলে ভীড়ে প্রথমে হয়ে গেল পাইকারি চাল বিক্রেতা। তারপর এলাকার মেম্বার। পরবর্তীতে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী । ব্যস আর ফিরে তাকাতে হয়নি পিছনে। একদল ষণ্ডা মার্কা ভাইদেরকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে ভিড়িয়ে ক্ষমতার যত্ত প্রকার অপ ব্যবহার করা যায়- এলাকায় জমি দখল থেকে শুরু করে বাড়ী দখল, হোটেল দখল এমন কি বাজারও দখল করে শহরের যত প্রকার অপকর্ম আছে – সব তাদের দ্বারা সংঘটিত হয়েই চলেছে। বোমা বানাতে গিয়ে কোন ভাইর হাতের আঙ্গুল উড়েছে। কোন ভাই র্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে । কিন্তু তাতে কী ? ফি বছর তো পবিত্র হজ্ব বা ওমরা পালন করেই চলেছে।
উদীচীর অনুষ্টানে বোমা মারার দায় থাকার পর ও এই পাঁচ বছর ঘাপটি মেরে বসে থাকা এই পরিবারটি ধারণাই করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় আসতে পারছে না। তাই তাদের স্বরূপ আবার বের হয়েছে।
আবার শুরু করেছে নারকীয় তাণ্ডব যশোর নামের একটি ছোট্ট শহরে। যেখানে একদিন ছিল শিক্ষা – সংস্কৃতির ভাণ্ডার। যেখানে একদিন সবদলের – মতের – ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ বসবাস , যেখানে একদিন ছিল গর্ব করার মত বহুল ঐতিহ্য আজ সেখানে এই রকম কয়েকটি গুন্ডা বাহিনীর জন্যে সাধারণ মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত !
কেন এই অবস্থা ? রাজনীতি যে কেউ করতে পারে এটা ব্যক্তিগত ব্যাপার। গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু রাজনীতির নামে গুণ্ডামি, ধর্মের নামে ভণ্ডামী ? কোন রাজনৈতিক দলেরই উচিৎ না এইসব গুণ্ডা বা ভণ্ডদের কোনো অবস্থাতেই আশ্রয় বা প্রশ্রয় দেয়া।
দেশ, জাতি, দল বা যদি আমাদের রাজনীতিবিদেরা নিজেদের কথাও ভাবেন তাহলে তাদের জান মালের নিরাপত্তার স্বার্থে এই সব গুণ্ডাদেরকে সমূলে উৎখাত করা প্রথম কাজ হওয়া উচিৎ। নইলে আপাত দৃষ্টিতে কিছু না মনে হলেও এই সব বর্ণ চোরা আমলা ও রাজনৈতিক গুন্ডারা পারে না এমন কোন কাজ নাই।
আমরা বাস করতে চাই অভয়ারণ্যে। বর্ণচোরা গিরগিটিদেরকে আমরা ভয় পাই বৈকি!কারণ তাঁরা যে বর্ণচোরা !!!!!!!!!!!
লেখক: আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী