শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে পাশে পেতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। দলীয় ও কূটনীতিক চ্যানেলে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ওপর। দ্বিধাবিভক্ত দলের নেতারা। তবে নেতাদের একটি বড় অংশ সরকারের সঙ্গে সঙ্গ ত্যাগের পক্ষে। এমন অবস্থান দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদেরও। সব মিলিয়ে প্রচণ্ড চাপে এরশাদ। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। নেতাকর্মীদের মতামত নিচ্ছেন। যোগাযোগ হচ্ছে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গেও। সরকারের তরফে ‘সর্বদলীয়’ মন্ত্রিসভা গঠনের তোড়জোড় চললেও এরশাদ এনিয়ে অনেকটাই নীরব। তার দলের একমাত্র নেতা জিএম কাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার পর গত দু’দিন ধরে অফিস করছেন না। মন্ত্রিসভায় না যেতে তার ওপরও নেতাকর্মীদের প্রবল চাপ। এমন অবস্থায় এরশাদ জানিয়েছেন, সব দল ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। সব দল না এলে তার দলও নির্বাচনে যাবে না। এ জন্য তিনি তফসিল ঘোষণা ও মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। তাই নির্বাচনকালীন ‘সর্বদলীয়’ মন্ত্রিসভায়ও যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি জাতীয় পার্টি। গত দু’দিন ধরে এরশাদ অনেকটা অস্বস্তি নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন। কয়েক দফায় বাসার বাইরে বের হলেও তিনি কোথায় গিয়েছেন নেতাদের বলে যাননি। ফলে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এখন নানা প্রশ্ন এরশাদ শেষ মুহূর্তে তাহলে কি করছেন? একেক সময় একেক কথা বলে সমালোচিত হওয়া এ নেতা শেষ মুহূর্তে নতুন কোন আলোচনার জন্ম দেন কিনা- এ নিয়ে আলোচনা আছে দলের ভেতর। জাতীয় পার্টির সিনিয়র কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, সরকারের তরফে অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ চলছে। নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় যোগ দেয়ার কথাও বলা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন কূটনৈতিক সূত্র থেকে জাপা চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। সূত্রটি জানিয়েছে, সরকারের অংশ নিলে জাতীয় পার্টিকে সুযোগ-সুবিধা দেয়ার প্রস্তাবও এসেছে। নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় অন্তত দু’জন সদস্য দেয়ার প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে। তবে এসব প্রস্তাবে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে সাড়া মেলেনি। সূত্র জানিয়েছে, বাইরের সূত্র থেকে জাপা চেয়ারম্যানের মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে তাকে সতর্কও করা হয়েছে। তবে দলের নেতারা সব ক্ষেত্রে এরশাদকে অভয় দিয়ে তাকে দৃঢ় থাকার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল দলের নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেন এরশাদ। এরই এক পর্যায়ে কথা বলেন মানবজমিনের সঙ্গে। বলেন, দেশের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। আবারও এক-এগারোর মতো পরিস্থিতি হতে পারে। আমি ঠিক জানি না, কি হবে? একমাত্র আল্লাহ জানেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে একতরফা নির্বাচন ও সর্বদলীয় সরকারে অংশ নেবে না জাতীয় পার্টি। এটিই আমার শেষ কথা। এরশাদ বলেন, আমি তো অনেক আগেই ঘোষণা দিয়েছি। সব দল অংশগ্রহণ না করলে, সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। আর সে নির্বাচনে জাতীয় পার্টিও অংশগ্রহণ করবে না। এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে আমাদের। আমরা সব আসনে প্রার্থীও পেয়েছি।
সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রিসভায় আমন্ত্রণ পেয়েছেন কিনা-এ প্রশ্নে এরশাদ বলেন, আমি তো মহাজোটে আছি। আমার কাছে অফার তো আসবেই। সে প্রস্তাব এখনও বিবেচনা করিনি। আর ওখানে গেলে নির্বাচনের কথা আসবে। আমি বলছি নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পর সব দল এলে মনোনয়নপত্র জমা দেবো। তিনি বলেন, সরকার জনগণের পাশাপাশি সব দলের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। বিরোধী দল মনে করছে, তারা যদি ক্ষমতায় থাকেন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। এ জন্য তারা নির্বাচনে আসতে ভয় পাচ্ছে। বিএনপি নির্বাচনে না গেলে জাপা যাবে কিনা? এ প্রশ্নে এরশাদ বলেন, বিএনপি কি বলেছে, না বলেছে তা আমার কথা নয়। আমার সাফ কথা; আমরা কারও ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হবো না। আমাদের কথা একটাই সব দল না এলে সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। এ নির্বাচন হবে অর্থহীন-এটাই আমার ফাইনাল কথা। জাপা চেয়ারম্যান চলমান সঙ্কট প্রসঙ্গে বলেন, উদ্যোগ নিয়েছি। সঙ্কট সমাধানের চেষ্টা করেছি। চিঠি লিখেছি, সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারা একদলীয় নির্বাচন করবেন। ক্ষমতায় থাকবেন। যতদিন পারেন! কোন চাপে আছেন কিনা- এমন প্রশ্নে সাবেক প্রেসিডেন্ট গাড়িতে ওঠার সময় প্রসঙ্গ কিছুটা হালকা করে দিয়ে হেসে হেসে বলেন, চাপ তো আমার দলের পক্ষ থেকে আছে। বাইরে থেকে নয়। তবে আমার দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘আমরা নির্বাচনে যাবো না’। মন্ত্রিসভায় আমরা যাবো কিনা-এ প্রসঙ্গে দল আমাকে বলেছে, আমাদের যাওয়া ঠিক হবে না। যেহেতু আমরা নির্বাচন করবো না।