আগামী সপ্তাহে আবারও ৬০ ঘণ্টার হরতাল আসছে। তবে এবারের হরতাল সপ্তাহের শেষ তিন দিনে হবে বলে বিএনপির একাধিক নেতা ইঙ্গিত দিয়েছেন। সারাদেশে ব্যাপক ধরপাকড়, নির্যাতনের পরও দারুণ আত্মবিশ্বাসী বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে অনড় বলে জানিয়েছেন নেতারা।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকে একটানা চারদিনের হরতাল গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় শেষ হয়। এর আগের দুই সপ্তাহেও তিন দিন করে হরতাল পালন করেছে বিরোধীদলীয় জোট। কিন্তু নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নেয়ার ব্যাপারে সরকারের দিক থেকে কোনো অনুকূল সাড়া না পাওয়ায় এবং বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতারের পর বিএনপি আবারও কঠোর কর্মসূচির কথাই ভাবছে।
অবশ্য গত অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির সভায় এবং জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার সিদ্ধান্ত হয়। গুরুত্বপূর্ণ ওই বৈঠকে ধাপে ধাপে আন্দোলনকে তীব্রতর করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিশেষ করে নির্বাচনকে ঘিরে সরকারের গৃহীত কর্মতত্পরতার আলোকে হরতাল, অবরোধ, ঘেরাও, অসহযোগ ও গণকারফিউর মতো কর্মসূচি রয়েছে।
পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির দফতরের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, কর্মসূচি আগেই ঠিক করা আছে। সরকার দাবি না মানা পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। তবে শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার-পরবর্তী পরিস্থিতি বিবেচনা করে নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে চেয়ারপারসন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। দু’-একদিনের মধ্যে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ঢাকার কেরানীগঞ্জ অথবা গাজীপুরে বিএনপির উদ্যোগে জনসভার আয়োজন করা হবে। ওই সভায় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ভাষণ দেবেন। রাজধানীতে বড় ধরনের জনসভার অনুমতি না পাওয়ার আশঙ্কা থেকে পার্শ্ববর্তী এলাকায় এ জনসভার আয়োজন করা হচ্ছে বলে সূত্র জানায়।
চেয়ারপারসন কার্যালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, চলমান সঙ্কট নিরসনে সরকারের দিক থেকে কোনো উদ্যোগ বা সাড়া গতকাল পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাই পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী আগামী সপ্তাহেও টানা ৬০ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি দেয়া হবে। তবে আগামী ১৭ ও ১৮ নভেম্বর অর্থাত্ রোব ও সোমবার হরতাল কর্মসূচি না দেয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ, ১৬ নভেম্বর শনিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল ঢাকায় আসছেন। তিনি ১৭ ও ১৮ নভেম্বরের যে কোনো একদিন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সাক্ষাত্ চেয়েছেন বলে জানা গেছে। এখনও সময় চূড়ান্ত করা না হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন তাকে সময় দেবেন। বৈঠকটি রোব বা সোমবারে হতে পারে। সুতরাং ওই দু’দিন বিএনপি হরতালের কর্মসূচি দেবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ নেতা জানান, একদলীয় নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি বিএনপির রয়েছে। নির্বাচন কমিশন একদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে তফসিল ঘোষণা করলে কর্মসূচির দ্বিতীয় ধাপে যাবে বিএনপি।
বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় নেতারা কেউই আত্মগোপন করেননি। সরকারের হার্ডলাইন মোকাবিলায় হাইকমান্ডের পরামর্শে তারা আপাতত সরে আছেন। চূড়ান্ত কর্মসূচিতে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই মাঠে নেমে আসবেন।
এদিকে সারাদেশে ব্যাপক ধরপাকড়, নির্যাতনের পরও দারুণ আত্মবিশ্বাসী বেগম খালেদা জিয়া। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে অনড় তিনি। গেল তিন সপ্তাহে ২০৪ ঘণ্টার সফল হরতালে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা। টানা ছয়দিন নিজ বাসভবনের চার দেয়ালে স্বেচ্ছায় বন্দিত্ব থেকে গতকাল সন্ধ্যায় গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আসেন তিনি। এ সময় উপস্থিত নেতাদেরকে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনাও দেন খালেদা জিয়া। এছাড়া চলমান আন্দোলনে গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং দায়ের করা মামলার ব্যাপারে আইনি সহায়তা দেয়ার জন্য দলের আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন তিনি।
এদিকে আগামীকাল শুক্রবার টাঙ্গাইলের সখিপুর থেকে সরকারকে নতুন করে আল্টিমেটাম দেয়া হতে পারে জানা গেছে। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আয়োজিত এ জনভায় সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ছাড়াও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা একই মঞ্চে বক্তব্য রাখবেন।
নির্দলীয় সরকারের দাবিতে তারা সবাই একই মঞ্চে আন্দোলনের ঘোষণা দেবেন এখান থেকেই।