সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রী সচিবালয়ে অফিসে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ আসলেও কোনো ফাইলে সই করছেন না। অবশ্য দুই একজন আগের মতই দাফতরিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে প্রশাসনের শীর্ষ আমলারা পদত্যাগকারী মন্ত্রীদের এড়িয়ে চলছেন। সচিবালয়ে উপস্থিত মন্ত্রীরা না ডাকলে আমলারা আর আগের মতো স্বেচ্ছায় মন্ত্রীর কাছে যাচ্ছেন না।
বুধবার সচিবালয়ে একাধিক মন্ত্রীর দফতরে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মন্ত্রণালয়ের কোনো বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন না। মন্ত্রীদের পদত্যাগকে তিনি সংবিধানসম্মত হয়নি বলেও মঙ্গলবার সাংবাদিকদের কাছে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি নিজেও অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রীয় কোনো ফাইলে সই করতে নারাজ। পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর সচিবালয়ে নিজ দফতর থেকে ব্যক্তিগত ও প্রয়োজনীয় ফাইল ও কাগজপত্র এমনকি পাসপোর্টও তিনি সরিয়ে নিয়েছেন। ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য অনেক সামগ্রীও তিনি তার বাসায় নিয়ে গেছেন। মন্ত্রীর দফতরকেন্দ্রিক সব ধরনের কাজকর্ম থেকে তিনি বিরত রয়েছেন। গত দুই দিনে তিনি আইনজীবী ছাত্র এবং ব্যক্তিগত আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে আলাপচারিতা ছাড়া মন্ত্রণালয়ের কোনো কাজ করেননি। দফতরে বসেই ব্যক্তিগত কাজ সেরে নিচ্ছেন।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গত সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকের পরপরই তার নির্বাচনী এলাকা সিলেটে ছুটে যান। তিনিও সপ্তাহ পার করে ফিরবেন। বুধবার সচিবালয়ে জাতীয় পদক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে তার থাকার কথা থাকলেও তিনি বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াসেফ ওসমান মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর থেকে তার দফতরে আসলেও কোনো কাজ করেননি। তিনি মন্ত্রণালয়ের কোনো ফাইলে সই করবেন না বলে সচিবকে ডেকে জানিয়ে দিয়েছেন।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী মঙ্গলবার সকালে একনেকের বৈঠকে অংশ নেন। কিন্তু দুপুরের পর থেকে মন্ত্রণালয়ে কোনো কাজ করেননি। ওইদিন তিনি তার নির্বাচনী এলাকা শেরপুরের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ে বসে সময় কাটান। বুধবার তিনি মন্ত্রণালয়ে আসেননি। আর সচিব দেশের বাইরে থাকায় মন্ত্রণালয়ে তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না। ফাইল আটকা থাকলেও সই হচ্ছে না।
বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর থেকে সচিবালয়ে তার দফতরে আসছেন না। তার চোখে সমস্যা থাকায় তিনি এক সপ্তাহ বাসায় বিশ্রামে থাকবেন বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়। তবে বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে তার নিজের লেখা দুটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা।
যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর থেকে দফতরের কাজকর্ম গোছাচ্ছেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর থেকে তিনি আর তার দফতরে যাননি। বুধবার তিনি তার নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালীতে রয়েছেন। সেখান থেকে আগামী সপ্তাহে ঢাকায় ফিরবেন বলে তার দফতর থেকে জানানো হয়েছে।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী দুই দিন ধরে সচিবালয়ে আসেননি। তিনি তার নির্বাচনী এলাকা টাঙ্গাইলে আছেন। সেখান থেকে আগামী সপ্তাহে তিনি ঢাকায় ফিরবেন বলে তার দফতর থেকে জানানো হয়েছে।
কর্মসংস্থান মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুকে তার দফতরে পাওয়া যায়নি। তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. সুজাউদ্দৌল্লা জানান, মন্ত্রী বাসায় আছেন। এছাড়াও শ্রম সচিব মিকাইল শিপারের দফতরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর কোনো ফাইল মন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়নি। এমনকি মন্ত্রীর দফতর থেকেও কোনো ফাইল সচিবের দফতরে আসেনি।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর যথারীতি তার দফতরে আসেননি। তিনি এর আগেও বেশিরভাগ সময় মন্ত্রণালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন।
নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান অসুস্থ থাকায় সচিবালয়ে যাননি। তার দফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন চলতি সপ্তাহে মন্ত্রী নাও আসতে পারেন।
সর্বদলীয় সরকার গঠনে সবার আগে সাড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী। তিনিও দুই দিন ধরে কোনো ফাইলে সই করেননি। মন্ত্রণালয়ের কোনো সভাও করেননি।
এছাড়াও আরো কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ে আসলেও দাফতরিক কোনো কাজ করছেন না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।