এই মাসে অহন পর্যন্ত লস ১০ হাজার টাকা। আগের মাসেও একই অবস্থা ছিল। লস দিতে দিতে দেয়ালে পিঠ ঠেইক্যা গ্যাছে। সংসার চালাইতে হিমশিম খাইতাছি। খরচ অইয়া গ্যাছে ডবল। অবস্থা যা দেখা যাইতাছে, তাতে মনে অইতাছে পথে বইস্যা যাইতে অইবো।’
টানা হরতালে ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এভাবে ক্ষোভ ঝাড়েন রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সিরাজ। বাজারের ডিআইটি মার্কেটের ফুটপাতে শিল-পাটা খোদাই করে বিক্রি করেন তিনি।৩০ বছর ধরে এ কাজ করছেন সিরাজ। থাকেন কামরাঙ্গীর চরে ভাড়াবাসায়। তিন সন্তানের বাবা মোহাম্মদ সিরাজ বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এক মেয়ে স্নাতক ও ছোট ছেলে দশম শ্রেণীতে পড়ছে।
সিরাজের চার সদস্যের পরিবারের দিন কোনো রকমে চলে যায়। টানা হরতাল তাঁর জীবনযাত্রার গতিকে অনেকটাই লাগাম টেনে ধরেছে বলে মনে করেন তিনি। সিরাজ বলেন, ‘আমাগো নেতা-নেত্রীরা আমাগো মতো গরিব মাইনষের কথা ভাবেন বলে মনে অয় না। কে প্রধানমন্ত্রী থাকব আর কে প্রধানমন্ত্রী অইবো, হেইডা নিয়াই হ্যারা ব্যস্ত।’
তিনি জানান, ফুটপাতের এই দোকানের আয় দিয়েই তাঁর সংসার চলে। হরতালের কারণে আয় যেমন কমে গেছে, তেমনি খরচও বেড়ে গেছে। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘বাজার করতে গেলে মাথায় যেন বাজ ভাইঙা পড়ে। হরতালে ৫০ টাকার শিম ১০০ টাকা, ২০ টাকার সবজি ৪০ টাকা। আমরা কম দামে তরকারি খাওয়ার লাইগ্যা যেই আলু খাইতাম, হেইডার দামও বাইড়া গেছে। ১৫ টাকার আলু কিনতে অইছে ২৫ টাকায়। আমরা গরিবেরা বাঁচুম ক্যামনে? নেতারা কি এইডা বোঝেন?’
সিরাজ জানান, হরতালের মধ্যেও প্রতিদিনই কামরাঙ্গীর চর থেকে কারওয়ান বাজারে এসে দোকান খোলেন তিনি। আশা, যদি কিছুটা বিকিকিনি হয়।
তিনি বলেন, ‘৬০ টাকা গাড়িভাড়া দিয়া আসি, যাইতেও একই ভাড়া। দোকান ভাড়া দিনে ৫০ টাকা। অন্য খরচও আছে। সব মিলাইয়া খরচই তোলা দায়।’
দোকানে লগ্নি হিসেবে একটি সমিতির কাছ থেকে ঋণ করতে হয়েছে সিরাজকে। এ ঋণ শোধ করতে গিয়ে প্রতি সপ্তাহে তাঁকে এক হাজার ৯০০ টাকা জমা দিতে হয়। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে যেভাবে হরতাল হচ্ছে, তা নিয়ে আতঙ্কিত সিরাজ। পুঁজি হারিয়ে পথে বসে গেলে সংসার কীভাবে চালাবেন, তা নিয়ে শঙ্কিত এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
সিরাজ মনে করেন, দেশের সব মানুষই এই ধারাবাহিক হরতালে ক্ষতির শিকার। এ বিষয়টি রাজনীতিবিদেরা মাথায় রেখে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাবেন, এটাই তাঁদের কাছে প্রত্যাশা।
সিরাজ বলেন, ‘একদল ক্ষমতায় আছে, মেয়াদ শ্যাষ অইলেই নির্বাচন অইবো, যারা জিতব তারা ক্ষমতায় আইবো। এইডাই তো সিস্টেম হওয়া উচিত। এই সিস্টেম হ্যারা বানায় না ক্যান? খালি খালি আমাগো মতো গরিবরে কষ্ট দেয় ক্যান?’