নিজামীর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

0
189
Print Friendly, PDF & Email

একা্ত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে আটক জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ পেয়েছে আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। নিজামীর অভিযোগগুলো ঢাকাটাইমসের পাঠকদের জন্য দেয়া হলো:

এক : ১৯৭১ সালের ৩ আগস্ট নিজামী চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে শহর ছাত্রসংঘের এক সুধী সমাবেশে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বক্তব্য দেন। ওই সভায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রসংঘের সভাপতি আবু তাহের হিন্দু সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করার হুমকি দেন। নিজামী ওই সভায় উপস্থিত থেকেও আবু তাহেরের বক্তব্যের বিরোধিতা না করে মৌন সম্মতি দেন।

দুই : একই বছরের ২২ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক একাডেমী হলে আল-মাদানী স্মরণসভায় স্বাধীনতাকামীদের নিশ্চিহ্ন করতে নেতাকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করেন।

তিন : একই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন প্রাঙ্গণে এক ছাত্রসমাবেশে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন নিজামী।

চার : একই বছরের ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর যশোর বিডি হলে ছাত্রসংঘের মিটিংয়ে জিহাদের সমর্থনে বক্তব্য দেন। নিজামী ওই মিটিংয়ে নিরীহ বাঙালি হত্যার নির্দেশ দেন।

পাঁচ : একই বছরের ১৪ মে নিজামীর নেতৃত্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, রাজাকার, আলবদররা পাবনার ডেমরা ও বাউসগাতি গ্রাম ঘেরাও করে। এরপর ৪৫০ হিন্দুকে এক জায়গায় জড়ো করে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। সেখানে মহিলাদের ধর্ষণ করা হয়।

ছয় : নিজামীর নির্দেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় একই বছরের ৮ মে পাবনার সাঁথিয়া থানার করমজা গ্রামে লোক জড়ো করে নির্বিচারে সুরেন্দ্র নাথ ঠাকুরসহ অসংখ্য লোককে হত্যা করা হয়। ধর্ষণ করা হয় মহিলাদের।

সাত : একই বছরের ২৭ ও ২৮ নভেম্বর পাবনার সাঁথিয়া থানার ধোলাউড়ি গ্রামে ডা. আবদুল আওয়ালের বাড়ি ও আশপাশের বাড়িতে হামলা চালিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয় ৩০ জনকে। সেখান থেকে চারজনকে ধরে ইছামতি নদীর পারে নিয়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। সেখানে শাহজাহান আলীকে গলাকেটে ফেলে যাওয়া হলে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি।

আট : ১৬ এপ্রিল ঈশ্বরদী থানার আটপাড়া ও বুথেরগাড়ি গ্রামে হামলা চালিয়ে ১৯ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

নয় : ১০ জুন আতাইকুলা থানার মাতপুর গ্রামের মাওলানা কছিমউদ্দিনকে ধরে ইছামতি নদীর পারে নিয়ে হত্যা করা হয়।

দশ : ৯ আগস্ট পাবনা শহরের নূরপুর ওয়াপদা মোড় থেকে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মাজেদসহ দুজনকে ধরে নিয়ে হত্যার পর পাবনা সুগার মিলের পাশে লাশ ফেলে দেয়া হয়।

এগারো : ৩ ডিসেম্বর বেড়া থানার বিছাখালী গ্রামে হামলা চালিয়ে ৭০ জনকে হত্যা করা হয়।

বারো : আগস্টের কোনো একসময় সাঁথিয়ার সোনাতলা গ্রামে হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়।

তেরো : মে মাসে ঢাকার মোহাম্মদপুরে শারীরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও রাজাকাররা ক্যাম্প স্থাপনের পর সেখানে গোলাম আযম ও নিজামী নিয়মিত যাতায়াত করতেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে সলাপরামর্শ করতেন। তারই ফসল হিসেবে সারা দেশে হত্যা ও নির্যাতন।

চৌদ্দ : ৩০ আগস্ট রাতে পুরাতন এমপি হোস্টেলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ক্যাম্পে বন্দি জালাল, রুমী, বদিসহ বেশ কয়েকজনকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন নিজামী ও মুজাহিদ। এরপর তাঁদের হত্যা করা হয়।

পনেরো : একই বছরের ৫ মে থেকে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে পাবনার সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে রাজাকার ক্যাম্পে মাঝেমধ্যে যেতেন নিজামী। সেখানে রাজাকার কমান্ডার সামাদ মিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য সলাপরামর্শ করেন।

ষোল : সারা দেশে ছাত্রসংঘ ও আলবদর বাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী হিসেবে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তার দায় নিজামীর। কারণ নিজামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ও আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে ওই সব কর্মকাণ্ডের উসকানিদাতা, মদদদাতা, পরিকল্পনাকারী।

শেয়ার করুন