প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া মন্ত্রিসভার সব সদস্য একযোগে পদত্যাগ করার পর এখন সাংবিধানিক গ্যাঁড়াকলে পড়েছে সরকার।
পদত্যাগী মন্ত্রীদের নিয়ে সরকার পরিচালনা করে সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করে চলেছে সরকার। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। তারা বলেছেন, পুরো মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করার পর প্রধানমন্ত্রীও আর দায়িত্ব পালন করতে পারেন না।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মন্ত্রীদের কেউ কেউ বলছেন, তারা সংবিধান মেনে পদত্যাগপত্র জমা দেননি। কোনো কোনো মন্ত্রী আবার বলেছেন, পদত্যাগপত্রে ‘তারিখ দেইনি’।
তবে পদত্যাগ করে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মন্ত্রীরা যে সাংবিধানিক গ্যাঁড়াকলে পড়েছেন তা তাদের অসংলগ্ন কথাবার্তায়ই স্পষ্ট।
কার্যত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক ইচ্ছায় সংবিধান সংশোধন করার পর এবার সেই সংবিধান নিয়েই ছেলেখেলা শুরু করেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার।
মহাজোটের পদত্যাগ করা মন্ত্রীরা তাদের পদত্যাগপত্র নিয়ে গতকাল বিভ্রান্তিকর ও পরস্পরবিরোধী, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্ববিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন।
সংবিধান অনুসারে এসব মন্ত্রীর পদ শূন্য হয়ে গেলেও তারা অবৈধভাবে সদম্ভে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। অথচ দেশের একজন সংবিধান বিশেষজ্ঞও তাদের এই কাজকে সমর্থন করেনি, বরং জোরাল বিরোধিতা করেছেন সবাই।
গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে মহাজোটের মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর নিকট পদত্যাগপত্র জমা দেন।
তাদের এ পদত্যাগের সংবাদটি সরকারিভাবে ঘোষণা করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয়গণ আজ (সোমবার) মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট তাদের নিজ নিজ পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।’
সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রীদের মন্ত্রিত্বও শেষ হয়ে গেছে। তারা বলেন, পদত্যাগের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার পরপরই মন্ত্রীরা শপথের আওতা থেকে বেরিয়ে গেছেন। তারা এখন মন্ত্রী নন।
বর্তমান সরকারের সময়ে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ছাপানো সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদের দফা ১-এর ‘ক’ উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী ব্যতীত অন্য কোনো মন্ত্রীর পদ শূন্য হইবে যদি তিনি রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করিবার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট পদত্যাগপত্র প্রদান করেন।’
সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সংবিধানের এ অনুচ্ছেদের বক্তব্য অন্য কোনো অনুচ্ছেদ দ্বারা খর্ব বা রহিত করা হয়নি। অন্য আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, মন্ত্রীদের পদত্যাগের বিষয়ে এ অনুচ্ছেদই প্রাধান্য পাবে। অথচ সংবিধান লঙ্ঘন করে দায়িত্ব পালনকারী মন্ত্রীরা উল্টো সংবিধানের অপব্যাখ্যাও দিচ্ছেন। পদত্যাগ নিয়ে সাংবিধানের অপব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণে নাস্তনাবুদ হন পদত্যাগী আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। সাংবাদিকদের যুক্তির মুখে তিনি স্বীকার করতে বাধ্য হন যে, ‘আমাদের পদত্যাগপত্র পেশ করাটা সংবিধানসম্মত হয়নি। পদত্যাগের উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা পদত্যাগপত্র পেশ করিনি। এটি একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।’
আইনমন্ত্রীর এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন পদত্যাগী তথ্যমন্ত্রী ও নিষিদ্ধঘোষিত সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন জাসদ গণবাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা হাসানুল হক ইনু। সংবিধানের অপব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, আমরা সংবিধান মেনেই যথাযথ নিয়মে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। তিনি এটি রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করবেন।’
একই কথা বলেছেন পদত্যাগী খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, মন্ত্রীরা সংবিধান মোতাবেকই নিজ নিজ পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছে। তবে তিনি বলেন, ‘পদত্যাগপত্রে আমরা তারিখ দেইনি।’
এদিকে পদত্যাগের পর গতকাল আর সচিবালয়ে আসেননি বাণিজ্যমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদের।
সংবিধান বিশেষজ্ঞরা সর্বসম্মতভাবে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মন্ত্রীদের পদ শূন্য হয়ে গেছে। মন্ত্রীরা এখন অবৈধভাবে সরকারি গাড়ি ও অন্যান্য সুবিধা ভোগ করছেন।
গতকাল প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সহ-সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, সংবিধান অনুসারে মন্ত্রীরা যে মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন, সেই মুহূর্ত থেকে তা কার্যকর হয়ে গেছে। এরপর মন্ত্রীরা যা করবেন তা রাষ্ট্রদ্রোহিতার সমতুল্য হবে।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. তুহিন মালিক গতকাল এক নিবন্ধে লিখেছেন, “সংবিধানের ব্যাখ্যা অত্যন্ত স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র দেয়ামাত্রই মন্ত্রীদের পদ সংবিধান অনুযায়ী শূন্য হয়ে যাবে। সংবিধানের এই অনুচ্ছেদে কোনো ধরনের ব্যাখ্যা বা শর্ত প্রয়োগ করা হয়নি। অন্য কোনো পদ্ধতি অনুসরণের প্রয়োজনের কথাও বলা হয়নি। এই অনুচ্ছেদে কোনো ‘যদি’ বা ‘তবে’ বা কোনো ফরমালিটির উল্লেখ করা হয়নি। মন্ত্রীরা পদত্যাগপত্রটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেবেন। আর প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র পৌঁছামাত্র তাদের পদ শূন্য হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শুধু পোস্টবক্স হিসেবে কাজ করবেন।”
তিনি লিখেছেন, পদত্যাগটি ছিল পুরো মন্ত্রিপরিষদের অর্থাত্ গোটা কেবিনেটের। এটা কোনোভাবেই কোনো একজন বা একাধিক মন্ত্রীর পদত্যাগ নয়। তাই এটা আইনের দৃষ্টিতে কোনো মন্ত্রীর ব্যক্তিগত পদত্যাগ নয়; বরং গোটা কেবিনেটের পদত্যাগ। এক্ষেত্রে গোটা কেবিনেট ভেঙে গেলে শুধু প্রধানমন্ত্রী একা স্বপদে বহাল থাকাটাও যে নৈতিকতা ও সংসদীয় গণতন্ত্রের পরিপন্থী তা বোধহয় আলাদা করে বলার অবকাশ নেই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাংবিধানিকভাবে গতকাল থেকেই মন্ত্রীদের সবার অর্থাত্ পুরো কেবিনেটের পদ শূন্য হয়ে গেছে। এখন কোনো মন্ত্রী আর বেতন-ভাতা, বাংলাদেশের পতাকা ব্যবহার ও অন্যান্য সুবিধাদির কোনোটারই অধিকার রাখেন না।
তার মন্তব্য, পদত্যাগী মন্ত্রীদের দেয়া সব বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা অবৈধ। তাদের নীতিনির্ধারণী, ফাইলে স্বাক্ষর ও নোটিংসহ সব কাজকর্ম অবৈধ।
গতকাল বিকেলে বিএনপির নয়াপল্টন অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘পদত্যাগের পর যেসব মন্ত্রী নিজেদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা নিয়ে যাতায়াত করছেন, আপনারা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিন। তা না হলে প্রমাণিত হবে আপনারা সরকারের প্রাইভেট বাহিনীর দায়িত্ব পালন করছেন।’ একই সঙ্গে মন্ত্রীদের কাছে পাঠানো কোনো ফাইলে দেয়া স্বাক্ষর অবৈধ গণ্য হবে বলে রিজভী মন্তব্য করেন।
বর্তমান মন্ত্রিপরিষদকে অবৈধ মন্তব্য করে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেছেন, ‘পদত্যাগ করার পরে কেউ আর মন্ত্রী থাকেন না। পদত্যাগের পর সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে তারা সংবিধান পরিপন্থী কাজ করছেন।’
সোমবার একটি টিভি টক শোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, মন্ত্রীরা পদত্যাগ করেছেন। সরকারের আর কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই। তিনি বলেন, এখন বিষয়টি হয়েছে যে, সংবিধানে কী রয়েছে সেটা বড়কথা নয়। প্রধানমন্ত্রী কী চান, সেটাই হচ্ছে বড় বিষয়। সংবিধানে কী লেখা রয়েছে, সেটা কোনো বিধান নয়। আওয়ামী লীগ বা এ দলের প্রধান শেখ হাসিনা যেটা বলেন, সেটাই হচ্ছে বিধান।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদ অত্যন্ত স্পষ্ট। মন্ত্রীরা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন, এটাই চূড়ান্ত পদত্যাগ বলে গণ্য হবে। তবে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে অন্য মন্ত্রীরা পদত্যাগ না করলেও তারা পদত্যাগ করেছেন বলেই গণ্য হবে। এই ক্ষেত্রে তাদের অন্য কোনো উত্তরাধিকারী দায়িত্বভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তারা নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
নাস্তানাবুদ ব্যারিস্টার শফিক
সংবিধানের অপব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণে নাস্তানাবুদ হয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন পদত্যাগী আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই একজন সাংবাদিক ব্যারিস্টার শফিককে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমরা কি মাননীয় মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছি, নাকি সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের সঙ্গে কথা বলছি?’ শুরুতেই এ প্রশ্নে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন ব্যারিস্টার শফিক। একপর্যায়ে তিনি সংবিধানের অপব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, আমরা তারিখ উল্লেখ করিনি এবং কাউকে সম্বোধনও করিনি। কাজেই প্রধানমন্ত্রী যেদিন পদত্যাগপত্রটি রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেবেন, সেদিন থেকেই এটি কার্যকর হবে। এর আগপর্যন্ত মন্ত্রীদের সরকারি সুবিধা গ্রহণ অবৈধ হবে না।
আইনমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর তাকে সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদটি পড়ে শোনানোর অনুরোধ করলে তিনি সংবিধান হাতে নিয়ে ৫৮ অনুচ্ছেদটি পড়তে শুরু করেন। এতে স্পষ্টভাবেই উল্লেখ রয়েছে যে, ‘মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর নিকট পদত্যাগপত্র জমা দিলেই তাদের পদ শূন্য হয়ে যাবে।’ এই অনুচ্ছেদটি পড়ার পর মন্ত্রী নিজেই নিজের ভুল বুঝতে পেরে বলেন, ‘আমরা যে পত্রটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছি, এটিকে পদত্যাগপত্র বলা যাবে না। এটি সংবিধান সম্মতভাবে আমরা দিইনি।’ একজন আইনজীবী হিসেবে আপনি কীভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে এ পত্রটি জমা দিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী শুধু চুপ করে থাকেন। সরকার পদত্যাগ নাটকের নামে জনগণের সঙ্গে সাংবিধানিক প্রতারণা করেছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা কোনো প্রতারণা করিনি।
আপনি বলেছেন, জমা দেয়া পত্রটি পদত্যাগপত্র নয়। তাহলে এটি কী পত্র? জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আপনারা যা খুশি নাম দিয়ে নিয়েন।
পদত্যাগ করার পরও আপনারা অবৈধভাবে সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগের দায়ে ভবিষ্যতে আপনাদের নামে দুর্নীতির কোনো মামলা হবে কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা বৈধভাবেই দায়িত্ব পালন করছি। আপনাদের এ পদত্যাগকে ‘পদত্যাগ নাটক’ বলা যাবে কিনা? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবও দেননি আইনমন্ত্রী।
ইনুর স্ববিরোধী বক্তব্য
পদত্যাগ নিয়ে গতকাল স্ববিরোধী মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। একবার তিনি বলেছেন, সংবিধান অনুসারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগ দিয়েছেন। সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগ দেয়ার পরই মন্ত্রীদের পদ শূন্য হয়। অথচ তিনি আবার বলেছেন, ‘পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন না হওয়া পর্যন্ত বা যতক্ষণ পর্যন্ত সই না করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত মন্ত্রীরা দাফতরিক ও নির্বাহী দায়িত্ব পালন করবেন।’
গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইনু বলেন, ‘সংবিধান মেনেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র দেয়া হয়েছে, তবে সেটা রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন না হওয়া পর্যন্ত বা যতক্ষণ পর্যন্ত্র সই না করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত মন্ত্রীরা দাফতরিক ও নির্বাহী দায়িত্ব পালন করবেন।’
ইনু আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী সরকার পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার সময়কাঠামোর সাথে মিলিয়ে যাদেরকে রাখবেন আর যাদেরকে রাখবেন না, সেভাবে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র দেবেন, রাষ্ট্রপতি তার ভিত্তিতে নতুন মন্ত্রী নিয়োগ দেবেন।’
এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে কেউ পদত্যাগপত্র জমা দিলে সংবিধানের বিধান অনুযায়ী তা রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করার পরই সে পদ শূন্য হবে বলে জানান তিনি।
অবৈধ মন্ত্রীদের সঙ্গে কাজ করতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আমলারা
পদত্যাগের পর মন্ত্রীরা সচিবালয়ের দফতরে গেলে সেটা অবৈধ হবে—গত সোমবার থেকে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সিনিয়র আইনজীবীদের এই অভিন্ন মতপ্রকাশের পর গতকাল সচিবালয়ে দেখা গেছে এক ভিন্ন ধরনের চিত্র। জাতীয় পার্টির নেতা জিএম কাদের ছাড়া অন্য মন্ত্রীরা সচিবালয়ে গতকাল সকালে এলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে দেখা গেছে গাছাড়া ভাব। দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও হয়রানির শিকার কর্মকর্তারা সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ঊর্ধ্বতন আমলাদের মধ্যে কেউ কেউ অবৈধ মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করতে গেলেও মাঝারি ও নিম্নস্তরের কর্মকর্তারা একাট্টা হয়েছেন। ভবিষ্যতে ঝামেলায় পড়ার আশঙ্কায় তারা দাফতরিক কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখেন। ফাইলের নথিতে নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করছেন এসব কর্মকর্তা। আইন মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব বলেন, সমস্যায় আছি। পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার পর সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রী মহোদয়ের মন্ত্রণালয়ে আসার কথা নয়। কিন্তু তিনি এসে মন্ত্রীর চেয়ারে বসেছেন। এখন তার নির্দেশ না মানলে সরকার অসন্তুষ্ট হয় কিনা? এটা নিয়ে মহা চিন্তায় আছি। তার চেয়েও বড় টেনশনে আছি—অবৈধ মন্ত্রীর নির্দেশ পালন করে ভবিষ্যতে কোনো সমস্যায় পড়ি কিনা। গতকাল সচিবালয়ে ছিল না তদবিরবাজদের ভিড়। সচিবালয়ে ভেতরে ও বাইরে চোখে পড়ার মতো কোনো তদবিরবাজ ছিল না।