নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়সহ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। বিশেষ করে বিএনপির পাঁচ নেতা গ্রেফতারের পর শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় সেই চ্যালেঞ্জ আরও বড় হয়ে উঠেছে।
এদিকে সরকারও সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। মন্ত্রীরা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এ অবস্থায় বিএনপি তাদের দাবি আদায়সহ নির্বাচন ও আন্দোলনে কতটুকু সফল হবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এবারের ‘চ্যালেঞ্জ’ মোকাবেলার ওপর দলটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎও অনেকাংশে নির্ভর করছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ সরকার একতরফা নির্বাচনের উদ্যোগ নিলে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিএনপিকে তা মোকাবেলা করতে হবে।
একইভাবে তত্ত্বাবধায়কের দাবিও তাদের আদায় করতে হবে আন্দোলনের মাধ্যমে। এসব ইস্যুতে দেশী-বিদেশী শক্তির সমর্থন আদায়ের চ্যালেঞ্জও রয়েছে দলটির সামনে।
আবার সমঝোতা হলেও নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য রয়েছে আরেক ধরনের চ্যালেঞ্জ। তবে দলটি মনে করছে বিএনপি সামনে কোন চ্যালেঞ্জ নেই, বরং গণঅভ্যূত্থানের ভয়ে সরকারই চাপে আছে।
যেমনটি বলেছেন বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। রাইজিংবিডি.কমকে তিনি বলেন, ‘আন্দোলন করতে গেলে গ্রেফতার-নির্যাতন আসবে, এতে ভীত নই। এগুলো যত বেশি হবে আন্দোলন তত জোরদার হবে। আন্দালনের সাইন্স হচ্ছে এটা। বিএনপি কোন চাপে নেই, সরকারই চাপে আছে। হামলা-মামলার ক্ষেত্রে আমরা সবসময়ই প্রস্তুত আছি।
রিজভী বলেন, ‘গনঅভূত্থানের ভয়ে সরকারই চাপে আছে। তারা পাপ করে করে এমন একটি জায়গায় এসেছে যে, তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।’
‘বিএনপি এর আগেও এমন অবস্থার মুখোমুখি হয়েছে। নেতৃবৃন্দ দৃষ্টি এড়িয়ে আছে। এটিই হতে পারে। আন্দোলন সংগ্রামে পৃথিবীর অনেক বড় বড় নেতাদেরও পুলিশের দৃষ্টি এড়িয়ে থাকতে হয়েছে।’
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডক্টর মিজানুর রহমান শেলী রাইজিংবিডি.কমকে বলেন, ‘পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে দাবি আদায়ে বিএনপি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। দেশের মানুষও একধরনের চ্যালেঞ্জে পড়বে। সবকিছুই এখন পর্যন্ত অনিশ্চিত। তবে সরকারের কৌশলগত অবস্থান এবং বিএনপির ক্যালকুলেশনের ওপর নির্ভর করছে আন্দোলনে বিএনপি কতটুকু সফল হবে।
দলীয় সূত্র জানায়, সরকারের হার্ডলাইন অবস্থানে বিএনপি কিছুটা চাপে পড়লেও দলীয় পরিকল্পনায় কোনভাবেই প্রভাব পড়বে না। এমনকি পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি ও সিদ্ধান্ত বিরোধী দলীয় নেত্রী একাই নিতে পারেন।
তবে এই মুহুর্তে আন্দোলনের পাশাপাশি নির্দলীয় সরকারের দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে দেশের সুশীল সমাজ ও মিডিয়ার সমর্থন পাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো হচ্ছে।
নির্দলীয় সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়-এ বিষয়ে জনমত তৈরি করতে মিডিয়ার সহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করছে দলটি। মিডিয়ার মাধ্যমে দেশের সুশীল সমাজও যাতে ওই দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরেন সে পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের। এতে বহির্বিশ্বে নির্দলীয় সরকারের দাবির প্রতি সমর্থন বাড়বে বলে মনে করছে দলটি।
আন্দোলনের এই পর্যায়ে নির্বাচন এবং আন্দোলন নিয়ে কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি বিএনপি স্বীকার করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান রাইজিংবিডি.কমকে বলেন, ‘যে কোন দাবি আদায়ে চ্যালেঞ্জ তো আসবেই। আমরা আন্দোলনে পথেই আছি।
বিএনপি আশা করছিলো সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হোক। কিন্ত বাস্তবতা যে পর্যায়ে এসেছে তাতে আন্দোলন ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। কারন নির্দলীয় সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এ দাবি এখন গনমানুষের।
তিনি বলেন, ‘সংলাপ হচ্ছে গনতন্ত্রের ভাষা। দেশের মানুষ থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত সংলাপের বিষয়টি প্রত্যাশিত ছিলো। কিন্তু সরকারের কার্যকলাপ সংলাপের সম্ভাবনা বন্ধ করে দিচ্ছে। তবে এখনো সময় শেষ হয়ে যায়নি, সুযোগ আছে। সরকারের উচিৎ সেই সুযোগ গ্রহণ করা। তা না হলে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর করা হবে।’