ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে জেনেভায় ছয় জাতির সঙ্গে তেহরানের আলোচনা কোনো চুক্তি ছাড়াই শেষ হয়েছে। তবে চুক্তি না হলেও আলোচনা ‘গঠনমূলক’ ছিল বলে আশ্বস্ত করেছেন অংশগ্রহণকারী কূটনীতিকেরা। ২০ নভেম্বর দুই পক্ষ আবার আলোচনায় বসার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ কথা জানিয়েছেন।
ইরানের বিতর্কিত পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে তেহরানের সঙ্গে তিন দিনব্যাপী এই আলোচনায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্যরাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে জার্মানি অংশ নেয়। এই ছয় জাতির পক্ষে আলোচনায় নেতৃত্ব দেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রধান কূটনীতিক ক্যাথরিন অ্যাশটন।
তিন দিনের আলোচনা শেষে গত শনিবার রাতে অ্যাশটন সাংবাদিকদের বলেন, তিন দিন ধরে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। তবে তেহরান ও ছয় জাতির নেতারা আবার আলোচনায় বসবেন। তিনি বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রেই সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। তার পরও কিছু কিছু বিষয় অমীমাংসিত রয়ে গেছে। আমাদের উদ্দেশ্য হলো একটি সমঝোতায় পৌঁছানো। এ কারণে আবারও বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
আলোচনায় কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও হতাশ নন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ। তিনি বলেন, ‘আমি হতাশ নই। দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের খুব ভালো আলোচনা হয়েছে। আশা করছি আবার বৈঠক হলে একটা সমঝোতায় পৌঁছাতে পারব।’
শনিবার প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলে। সমঝোতা না হওয়ায় কিছুটা হতাশার সৃষ্টি হয়। তবে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে এই আলোচনায় বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। এক দশক ধরে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের চরম তিক্ত সম্পর্কের পর এই বৈঠক নিঃসন্দেহে একধরনের অর্জন।
বৈঠক শেষ হওয়ার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেন, ‘আমরা আগে যে অবস্থানে ছিলাম, এখন তার চেয়ে অনেক বেশি কাছাকাছি চলে এসেছি—এ ব্যাপারে আমার মনে কোনো সংশয় নেই।’
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই একটি সমঝোতায় পৌঁছার আশা প্রকাশ করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ। গতকাল রোববার তিনি বলেন, ‘ইরানের বিষয়ে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সমঝোতায় পৌঁছানোর ভালো সুযোগ রয়েছে। আমরা সময় অপচয় করতে চাই না। আর এই পরিস্থিতিটা ধরে রাখা অপরিহার্য।’
গণমাধ্যমের তথ্যমতে, ইরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করার প্রস্তাব দেওয়া হবে। এর বিনিময়ে দেশটির ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের অভিযোগ, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির উদ্দেশ্যে তার বিতর্কিত কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও ইরান বলে আসছে তার পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্যই।
পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ হবে না: রুহানি
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি গতকাল রোববার বলেছেন, তাঁর দেশ পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করবে না। এটা তাঁদের অধিকার। পারমাণবিক কর্মসূচির আওতায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণও চালিয়ে যাবে ইরান। পার্লামেন্টে বক্তৃতায় রুহানি বলেন, ‘ইরানের অধিকার ও জাতীয় স্বার্থের বিষয়টিই আমাদের কাছে চূড়ান্ত বিষয়। তাই আন্তর্জাতিক বিধি মেনে পারমাণবিক কর্মসূচি চালানো আমাদের অধিকার।’
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া: ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল বলেছেন, ইরানের সঙ্গে ছয় পরাশক্তির ‘বাজে ও বিপজ্জনক’ সমঝোতা ঠেকাতে তাঁর দেশ সম্ভব সবকিছুই করবে।
এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর এই অবস্থান জানানো হয়। নেতানিয়াহু এতে বলেন, ‘ছয় পরাশক্তির প্রতি আমার পরামর্শ হলো চুক্তি করতে অপেক্ষা করা। আশা করছি ভালো একটি সমঝোতায়ই পৌঁছাবেন তাঁরা। আল-জাজিরা, এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসি।