সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য সৃষ্ট সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা বাতিল হচ্ছে। এ ব্যাপারে নিয়োগ কমিটির পক্ষ থেকে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া গেলেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) সূত্র। গত শুক্রবার সারা দেশে এ নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের যে সব এলাকায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে সেসব এলাকার পরীক্ষা প্রাথমিকভাবে বাতিলের সুপারিশ করা হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র মোবাইল প্রযুক্তিতে সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রটি মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র বিলিবন্টন করেছে। গতকাল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে (ডিপিইতে) সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য গঠিত নিয়োগ কমিটির জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এ কমিটির চেয়ারম্যান হচ্ছেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ। গতকাল সকালে রাজধানীর মীরপুরে ডিপিইর সভাকক্ষে নিয়োগ কমিটির চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় আড়্ইা ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক চলে। বৈঠকে গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষার সামগ্রিক বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকের অধিকাংশ সময় জুড়েই ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র নিয়ে আলোচনা হয়। কারা এ জন্য দায়ী এবং তাদের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায় কি না তা-ও বিবেচনা করা হয়। এ ব্যাপারে নিয়োগ কমিটির চেয়ারম্যান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ গত রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের (প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের) কাছে মতামত পাঠানো হবে।
কর্তৃপক্ষই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। নিয়োগ কমিটির অন্য একাধিক সূত্র জানায়, বৈঠকে সিদ্ধান্ত ও মতামত প্রেরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, দেশের যেসব এলকায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে সেসব অঞ্চলের পরীক্ষা বাতিল করা হবে এবং মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত পাওয়া গেলে পরে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হবে। এ ছাড়া যেসব এলাকার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে তাদের কারণ দর্শানো বা তদন্ত কমিটি গঠন যেকোনো একটি করা হবে। এ দিকে মন্ত্রণালয়ের অন্য একটি সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ অঞ্চলের নিয়োগ প্রশ্ন ফাঁসের সত্যতা পাওয়া গেছে এবং এ অঞ্চলের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল হবে সবার আগে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। তবে ময়মনসিংহ অঞ্চলের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সত্যতা পাওয়া গেছে। পরীক্ষার দিন ময়মনসিংহে ১৮ জন প্রশ্নসহ হাতেনাতে ধরা পড়েছে। পরীক্ষার স্বচ্ছতা ধরে রাখতে ময়মনসিংহ অঞ্চলের পরীক্ষা বাতিল করা হবে।
মন্ত্রণালয় ও ডিপিই সূত্র জানায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য সাত হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। শুক্রবার দেশের ৬১টি জেলায় ১৩৬২টি কেন্দ্রে এ লিখিত পরীক্ষা হয়। লিখিত পরীক্ষায় ৯ লাখ ৬৮ হাজার ১২৭ জন চাকরিপ্রার্থী অংশ নেন।
আমাদের ময়মনসিংহ অফিস জানায়, জেলার ইসলামিয়া একাডেমি কেন্দ্রের অনেক পরীার্থীকে পরীক্ষার আগে প্রশ্নের উত্তরপত্র পড়তে দেখা গেছে। পরীক্ষার আগে এসব প্রশ্নপত্রের কপি, ফটোকপি ও হাতে লেখা কপি পুরো শহরে বিক্রি হয়। বিক্রি হওয়া প্রশ্নের সাথে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া গেছে। যারা আগে থেকে প্রশ্নপত্র হাতে পেয়েছেন তারা ৪০ মিনিটের মধ্যেই পরীক্ষা শেষ করে কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যান। ময়মনসিংহ অঞ্চলে পরীক্ষার কিছুক্ষণ আগে মাত্র ১০০ টাকায় প্রশ্নপত্র বিক্রি করা হয়। এ দিকে সিরাজগঞ্জে অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে দুই শিক্ষকসহ সাতজনকে বহিষ্কার করা হয়। যশোরে ভুয়া প্রশ্নপত্র বিক্রির অভিযোগে এক যুবককে গ্রেফতার করে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।