হটিটির ভালোবাসার সংসার প্রায় দুই মাইল পথ হেঁটে নিঝুম দ্বীপের গভীর বনের মধ্যে ঢুকে গেলাম।

0
254
Print Friendly, PDF & Email

সীমান্ত দীপু
দুপুরের কড়া রোদ মাথায় নিয়ে প্রায় দুই মাইল পথ হেঁটে নিঝুম দ্বীপের গভীর বনের মধ্যে ঢুকে গেলাম। বনের ভেতর হাঁটতে ভালোই লাগছিল। ডুবুরি খালের মুখ থেকে যেতে হবে চৌধুরী খালের শেষ প্রান্ত। এ খালের কোল ঘেঁষে বনের অবস্থা ভালো। তাই হরিণের আনাগোনা বেশি।হটিটির ভালোবাসার সংসার
 
প্রায় ঘণ্টা দুই হাঁটলে পাওয়া যাবে চৌধুরী খাল। হরিণশুমারির জন্য এসেছি বলে ওই এলাকায় যেতেই হবে। বনের ভেতরের ২৪টি খালের একটি হলো এই চৌধুরী খাল। খুজে পাওয়া মোটেও সহজ নয়। সঙ্গে থাকা জিপিএস দেখে দেখে পথের নিশানা ঠিক করছি।
 
দুপুর গড়িয়ে বিকেলবেলায় খালের মুখের দেখা পেলাম। সেখানেই ঘাপটি মেরে বসে সঙ্গে আনা শুকনো খাবার খাচ্ছিলাম। এমন সময় একটি পাখির ঘনঘন আওয়াজ কানে ভেসে এলো। উঠে দাঁড়াতেই পাখিটির চেঁচামেচি আরও বেড়ে গেল। উড়ে যাওয়ার ধরন দেখেই বুঝে ফেললাম পাখিটি হটিটিই হবে। তার আওয়াজ শুনে পিছু নিলাম।
 
কিছুক্ষণ তার পিছু নিয়ে বুঝলাম, পাখিটি আমাকে বোকা বানিয়েছে। তার বাসার আশপাশ থেকে পাখিটি আমাকে অন্যদিকে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এতদিন শুনেছি হটিটি নাকি যে কোনো প্রাণীকে বোকা বানিয়ে নিজের সংসার নিরাপদ রাখার চেষ্টা করে। আজ তার প্রমাণ পেলাম। সত্যিই পাখিটির বুদ্ধির তুলনা হয় না।
শুধু হটিটি নয়, এর জাতভাইরাও একই কাজ করে। বাংলাদেশে হটিটি পরিবারে সদস্যসংখ্যা পাঁচ। এ পাঁচ প্রজাতির হটিটির মধ্যে আমরা সহজেই যাকে দেখি, তার নাম হটিটি বা লাল-লতিকা টি-টি। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই একে দেখা যায়। এ প্রজাতিটির লাল ঠোঁট ও পা লম্বা। যে কোনো জলাশয়ের আশপাশে একে খুঁজে পাওয়া যায়।
 
ভোর ও গোধূলিতে এরা সবচেয়ে বেশি কর্মচঞ্চল; পূর্ণিমা রাতেও কর্মচঞ্চল থাকে; বেশ উঁচু স্বরে অবিরাম ডাকে :ডিড-ইউ-ডু-ইট, ডিড-ইউ-ডু-ইট। মার্চ-সেপ্টেম্বর মাসে প্রজননকালে জোড়া বাঁধে ও প্রজনন এলাকা ঠিক করে এবং পানির ধারে উদ্ভিদের মধ্যে বা দালানের ছাদে পাতার ডাঁটা, ঘাস ইত্যাদি দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে।
 
ডিমগুলো বাদামি, সংখ্যায় ৩-৪টি। ডিমগুলো কেমোফ্লেজ বিধায় যে কারও নজরে কম আসে। হটিটি এমনই একটি পাখি যাদের কাছে যে কোনো প্রাণীরই শেখার আছে অনেক কিছু। তাদের ভালোবাসার সংসার সত্যিই অদ্ভুত! আসুন হটিটিকে ভালোবাসতে শিখি।

শেয়ার করুন