পিলখানা হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ড পাওয়া আসামিরা রায়ের নকল পচ্ছেন না, ফলে সময়মতো আপিল করতে পারবেন কি না আশঙ্কা করছেন তারা। কেননা, মামলার রায় বিশাল বলে তা কপি করে অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সারতে অনেক সময় লাগবে। অথচ রায় ঘোষণার সাত দিনের মধ্যে আপিলের জন্য বলা হয়েছে রায়ে।
এদিকে আসামিরা নিজ খরচে রায়ের নকল তুলতে চাইলে প্রত্যেকের খরচ পড়বে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। আর সরকারের মোট খরচ হবে ১৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
পিলখানা হত্যা মামলার রায় মোট চার হাজার পৃষ্ঠার। মামলার ৮৫০ আসামিকে রায়ের নকল দেয়ার জন্য প্রয়োজন ৩৫ লাখ স্ট্যাম্প কাগজ। তাতে রায় কম্পোজ করার পর তুলনাকারককে ৩৫ লাখ পাতায় স্বাক্ষর করতে হবে। এ জন্য বিপুল টাকার পাশাপাশি যেমন লোকবলের প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন সময়ের। হিসাব করে দেখা গেছে, সরকারের খরচে সবাইকে রায়ের নকল সরবরাহ করলে মোট ব্যয় হবে ১৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
মহানগর দায়রা জজ মো. জহুরুল হক জানান, আদালতের সীমিত লোক ও সামর্থ্য দিয়ে এত দ্রুত সবাইকে রায়ের কপি দেয়া সম্ভব হবে না। তবে কীভাবে রায়ের কপি দ্রুত সরবরাহ করা যায়, তা ভেবে দেখবেন বলে জানান তিনি।
পিলখানা হত্যা মামলার নিয়মিত আইনজীবী অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক লাল এ প্রতিবেদককে বলেন, আদালত যথাসম্ভব দ্রুত রায়ের কপি সরবরাহের কথা জানালেও কবে নাগাদ সরবরাহ করতে পারবেন, তা বলেননি।
গত বৃহস্পতিবার ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭১ ধারার বিধানমতে বিনামূল্যে রায়ের অনুলিপি চেয়ে আবেদন করেন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ১৩৯ জন আসামি। কিন্তু সময়মতো নকল পাবেন কি না এই নিশ্চয়তা তাদের দিতে পারছে না কেউ। এদিকে রায় দেয়ার তারিখ থেকে সাত দিনের মধ্যে ফাঁসির দণ্ড পাওয়া আসামিদের আপিলের কথা রায়ে বলা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে রায়ের অনুলিপি না পেলে তারা আপিল করতে পারবেন না।
পিলখানা হত্যা মামলার নিয়মিত আইনজীবী অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক লাল জানান, “জজ আদালত কর্তৃক আসামিদের দেয়া সাজার বিপরীতে হাইকোর্টে আপিল করতে রায়ের সার্টিফায়েড কপির প্রয়োজন হয়। পিলখানা হত্যাযজ্ঞ মামলাটির প্রায় চার হাজার পৃষ্ঠা। আদালতে মামলার সার্টিফায়েড কপি তুলতে প্রতি পৃষ্ঠায় আমাদের ৩০ টাকা করে দিতে হয় । সেই হিসাবে প্রত্যেক আসামিকে নিজ খরচে একেকটি রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি তুলতে খরচ পড়বে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা।”
প্রসঙ্গত, ৫ নভেম্বর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান পিলখানা হত্যাযজ্ঞ মামলায় ১৫২ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে।
এই মামলার রায়ে ৪১৭ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৬১ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পায়। আর বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে ২৭৭ জনকে।