একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধেরর বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তসংস্থার প্রধানসহ প্রসিকিউশন টিমের প্রায় ডজন খানেক ব্যক্তি আগামী (দশম) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ লক্ষ্যে রবিবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র ক্রয় করেছেন অর্ধডজন প্রার্থী। বাকিরা এ সপ্তাহের মধ্যে মনোনয়নপত্র ক্রয়ের কথা ভাবছেন।
রবিবার মনোনয়নপত্র ক্রয় করেছেন- তদন্ত সংস্থার প্রধান আব্দুল হান্নান খান (নেত্রকোনা-৫), জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সানাউল হক (কিশোগঞ্জ-৩), মোখলেসুর রহমান বাদল (কিশোরগঞ্জ-২), সুলতান মাহমুদ সিমন (শরীয়তপুর-২), নূরজাহান বেগম মুক্তা (চাঁদপুর-৫) ও সৈয়দ সাইদুল হক সুমন (হবিগঞ্জ-৪)।
এছাড়া মনোনয়ন ক্রয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে- প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী, একেএম সাইফুল ইসলাম, আবুল কালাম ও তদন্ত সংস্থার কয়েকজন কর্মকর্তা।
আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র বিক্রি প্রকিয়া শুরু হয়েছে। প্রথম দিন দলের ৬৭৮ প্রার্থী মনোনয়ন কিনেছেন।
সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৬৭৮ জনের মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে, তাতে এক কোটি ৬৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস।
এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২১৫, রংপুর থেকে ৮০, রাজশাহী থেকে ৭৫, খুলনা থেকে ৯৫, চট্টগ্রাম থেকে ১০৩, বরিশাল থেকে ৫৮, সিলেট থেকে ৫২টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে।
যারা মনোনয়নপত্র ক্রয় করেছেন শিগগিরই তারা পদত্যাগের কথাও ভাবছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, ‘যারা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে নমিনেশনপত্র জমা দেবেন, তারা এখান থেকে পদত্যাগ করেই দেবেন।’
এদিকে, মনোনয়নপত্র ক্রয় করে নিজ নিজ এলাকার রাস্তাঘাট, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন বলে দাবি সকলেরই।
মনোনয়ন ক্রয় করে জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য তারা তৃণমূলে স্থানীয় জনগণের সঙ্গেই সম্পর্ক বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছেন। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান আব্দুল হান্নান খান দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসিবে লড়াই করতে চান। এখানে বর্তমানে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল।
এছাড়া তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সানাউল হক কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তারাইল)। বর্তমানে ওই আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক। একই আসনে এর আগে আওয়ামী লীগ থেকে সানাউল হকের বড় ভাই সংসদ সদস্য ছিলেন।
প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোখলেসুর রহমান বাদল কিশোরগঞ্জ-২ (পাকুন্দিয়া-কটিয়াদি) আসনে নির্বাচন করতে চান। এখানে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপকর ডা. আবদুল মান্নান।
প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন মনোনয়ন চাচ্ছেন- শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া-সখিপুর) আসনে। ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হলেন- জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী।
প্রসিকিউটর নূরজাহান বেগম মুক্তা প্রার্থী হতে চান চাঁদপুর-৫ (হাজিগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসনে। এ এলাকার বর্তমান সংসদ সদস্য হচ্ছেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম (বীর উত্তম)।
প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইদুল হক সুমন হবিগঞ্জ-৪ (চুনাড়ঘাট ও মাধবপুর) আসনে থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানা গেছে। ওই আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের এনামুল হক মোস্তফা শহীদ।
মনোনয়ন প্রত্যাশিরা মনে করেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশানুযায়ী মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের কাজে দায়িত্ব পালন করায় দলীয়ভাবে সমর্থিত হবেন এবং জনগণের পূর্ণ সমর্থন পেয়ে নির্বাচনে জয়ী হবেন।’