জামায়াত শিবির কখন কী করে বসে, নিষিদ্ধ হলে তাদের ভোটগুলো কাদের বাক্সে যাবে? তারা সরকারের কথা না শুনলে বিএনপির কথা শুনবে? নিষিদ্ধ হলে তারা “আন্ডার গ্রাউন্ডে” চলে যাবে নাকি নতুন নামে কলংকমুক্ত “নয়া জামায়াত” আবির্ভুত হয়ে ক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে চলে যাবে?নিবন্ধন ফিরে না পেলে এবং দলীয় ব্যানারে নির্বাচন না করলে তাদের ভোট কোথায় যাবে? এরকম বিভিন্ন ধরনের “জামায়াত ভীতি” কাজ করছে দুই জোটের মধ্যে।
এটা প্রমাণিত যে, জামায়াত ছাড়া বিএনপি আন্দোলন কিংবা ভোটের রাজনীতিতে ভালো ফলাফল করতে পারবে না। আর সরকারও জানে জামায়াতই এখন রাজপথে তার প্রধান বাধা।
নিবন্ধন বাতিলের পর নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতি নিয়ে জামায়াত যতটা না উৎকন্ঠিত, তার চেয়ে বেশী দুশ্চিন্তায় দেশের প্রধান দুটি দল। আবার জামায়াত যদি নিষিদ্ধ হয়, তার পরবর্তী ফলাফল কী হবে তা নিয়েও যেন শঙ্কার শেষ নেই।
প্রধান বিরোধীদল বিএনপির বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে জামায়াত বর্তমান সরকারের আমলে প্রায় পুরোটা সময়ই রাজপথে নেমেছে। আর বিএনপি তাদেরকে কেবল ভবিষ্যৎ আন্দোলনের আশ্বাস দিয়েছে। জামায়াতের আত্মগোপনে থাকা নেতারা সেই আশ্বাসে বিশ্বাস করে তাদের আনুগত্য প্রিয় কর্মীদের পুলিশ এবং সরকারের মুখোমুখি করেছে।
জামায়াতের কর্মীরা বারবার তাদের নেতাদের বলেছে বিএনপি আন্দোলনে নামবে না। নেতারা সেই সত্যটা কর্মীদের কাছে স্বীকার করতে চাননি। শাহজাহানপুর থানার জামায়াতের এক নেতা বলেন “আমরা ময়দানের মানুষ, কর্মীরা যা আগে বুঝে, নেতারা তা একটু দেরীতেই বুঝে।
তবে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় এবং কর্মীদের কাছে মুখ রক্ষার জন্য হলেও এখন বিএনপি আন্দোলনে নেমেছে। যদিও তাদের মিডিয়া মুখী শীর্ষ
নেতারা মাঠে থাকেন না হরতাল ডেকে। জামায়াত আর বিএনপির সম্মিলিত আন্দোলন নতুন মাত্রা লাভ করেছে প্রতি সপ্তাহে টানা হরতাল কর্ম
সুচী পালনের মাধ্যমে।
সরকার করেছে নির্যাতন, আর বিএনপি করেছে জামায়াতকে হতাশ। সরকারের নির্যাতন আর বিএনপির প্রতি আস্থাহীনতা -এ অবস্থায় “জামায়াত কী করে বসে ” সেই নিয়ে টেনশনে আছে দুই প্রধান দল।
সরকার পক্ষের যারা জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল এবং নিষিদ্ধের পক্ষে কথা বলে আসছিলেন তারাও বিষয়টির ভয়াবহতা উপলব্ধি করা শুরু করেছেন। তাই জামায়াত যাতে বেশী বাড়াবাড়ি না করে সে জন্য তাদের ম্যানেজ করার চেষ্ট চলছে গোপনে। সরকারের গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী একমাত্র জামায়াত ছাড়া আর বাকীদের প্রতিরোধ মোকবেলা সরকারের জন্য সহজ।
ভোটের রাজনীতিতে এখনও জামায়াত তৃতীয় প্রধান শক্তি। মিডিয়া প্রচারণা যা-ই থাকুক না কেন, জামায়াতের প্রতি জনসমর্থন যে আরও বেড়েছে তা সরকারের জরিপে স্পষ্ট। স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে সরাসরি জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীদের অংশ গ্রহণে প্রাপ্ত ভোট তাই বলে।
বিগত হরতালগুলোতে দেখা গেছে, জামায়াত অধিকাংশ মহাসড়ক অবরোধ করার ক্ষমতা রাখে।সীমান্ত জেলাগুলোতে জামায়াতের অবস্থান অনেক শক্তিশালী। তারা যদি এককভাবে আবারও কোনো আন্দোলন গড়ে তোলে তাহলে দেশের অধিকাংশ স্থল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়ে যাবে।
আরেক নতুন শঙ্কা যোগ হয়েছে মহাজোটে। তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন খুন-খারাবীতে রূপ নিচ্ছে। আর কোন্দলে কেউ নিহত হলে তদন্ত ছাড়াই জামায়াতের কাঁধে চাপানো এখন পুলিশের একটি সাধারণ ব্যাপার। এই ধরনের ঘটনা আরও বাড়তে পারে। আশঙ্কা হচ্ছে জামায়াত নিষিদ্ধ হলে এমন ঘটনা সুবিধাবাদী গোষ্ঠী ঘটিয়ে দিয়ে জামায়াতের নাম ব্যবহার করে পার পেয়ে যেতে পারে।
ভোটের রাজনীতিতে যে জামায়াত প্রধান নিয়ামক শক্তি তা সম্প্রতি দৈনিক যুগান্তরের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়- ‘দেশব্যাপী জামায়াতের রয়েছে বিপুল সংখ্যক রিজার্ভ ভোট। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, কোনো রাখঢাক না রেখে নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করলে এবারও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই প্রধান দলের প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের পেছনে জামায়াতের ভোট গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হতে পারে”।
জামায়াত নিষিদ্ধে কেবল জামায়াতই শঙ্কিত নয়, শঙ্কা বাড়ছে জোট-মহাজোটেও।