জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন বলে দলটির স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন। গত শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা জাতীয় পার্টির এক সভায় দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি জাহাঙ্গীর মো. আদেল দলের চেয়ারম্যানের গ্রেপ্তারের এ আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছেন বলে তাঁরা জানিয়েছেন।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর মো. আদেল কালের বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিক। আপনারাই তো আমার চেয়ে বেশি জানবেন। আমি যা বলেছি, তা বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। আমি ঢাকার পথে আছি। সেখানে গিয়ে ভালোভাবে জেনে এ বিষয়ে বলতে পারব।’ দলটির স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতা আদেল তাঁদের বলেছেন, সরকারি দলের সঙ্গে জাতীয় পার্টির বনিবনা হচ্ছে না। সে কারণে যেকোনো সময় গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় দলের চেয়ারম্যান মানসিকভাবে প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের এক সভায় এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। দলের যুগ্ম মহাসচিব মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘উনি (জাহাঙ্গীর মো. আদেল) কিভাবে কোন চিত্মা থেকে এ কথা বলেছেন, তা আমার জানা নেই। তবে নীতিনির্ধারক হিসেবে এ বিষয়ে আমার চেয়ে বেশি তো উনারই জানার কথা।’ তিনি বলেন, ‘সরকার যেভাবে ধরপাকড় শুরু করেছে তাতে যে কেউই তো গ্রেপ্তার আতঙ্কে থাকতে পারেন।
এ ছাড়া সরকার চাইছে তাদের কথামতো আমরা চলি। নির্বাচন নিয়ে সরকারি দলের সঙ্গে আমাদের বনিবনা হচ্ছে না। আমাদের চেয়ারম্যান তো বলে দিয়েছেন, সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া আমরা নির্বাচনে যাব না। এসব কারণে গ্রেপ্তার আতঙ্কের বিষয়টি অমূলক কিছু নয়।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রচারণা চালাতে ও দলীয় সভায় অংশ নিতে গত শুক্রবার আখাউড়ায় আসেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর মো. আদেল। এ সময় তিনি নির্বাচন প্রসঙ্গে আলোচনাকালে দলের চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার হতে পারেন বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন।
বৈঠকে উপস্থিত জাতীয় পার্টির নেতা মো. ইসহাক সিদ্দিকী শুভ বলেন, ‘দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর মো. আদেল বলেছেন আমাদের চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার হতে পারেন। চেয়ারম্যান নিজেই এ শঙ্কা প্রকাশ করে জাহাঙ্গীর মো. আদেলের সঙ্গে কথা বলেন। এমনকি এক সভায় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যরাও দলের চেয়ারম্যানকে জেলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। কেননা মহাজোট ছাড়ার প্রশ্ন এলেই তো চেয়ারম্যানকে জেলে যেতে হবে- এমন কথাও জাহাঙ্গীর মো. আদেল সভায় বলেছেন।’ আখাউড়া উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক নজরুল হক ধনু বলেন, ‘জাহাঙ্গীর মো. আদেল আমাদের এও জানিয়েছেন, এরশাদ জেলে গেলে তাঁর ছেলে এরিককে দেখে রাখার জন্যও দলের নেতাদের তিনি বলে রেখেছেন।’
এিদেক এক বিবৃতিতে এরশাদ বলেছেন, গণতন্ত্রের অজানা ভবিষ্যত্ নিয়ে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিবৃতিতে এইচ এম এরশাদ দাবি করেছেন, তাঁর শাসনামলের পর গণতান্ত্রিক শাসন ‘নামেমাত্র’ বহাল থাকলেও গণতান্ত্রিক আচার-আচরণ-পরিবেশ ২২ বছর ধরে বিঘ্নিত হয়ে আসছে। তাঁর মতে, এখন গণতন্ত্রের নামে যা চলছে তাকে হিংসা-হানাহানি-সংঘাত ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার প্রবণতা বলা যায়। তিনি বলেন, ‘আমার শাসনামলের পর এ পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতায় আড়াই হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে বলে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে।
বর্তমানে দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তাই গণতন্ত্রের ভবিষ্যত্ নিয়ে আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি।’ এরশাদ বলেছেন, জাতীয় পার্টির মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই গণতন্ত্রকে নিষ্কণ্টক রাখতে তিনি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আজীবন সংগ্রাম করে যাবেন এবং গণতন্ত্র দিবসের মর্যাদা রক্ষা করবেন। ১৯৮৬ সালের ১০ নভেম্বর জাতীয় সংসদে এরশাদ ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘জনগণের প্রত্যাশিত গণতন্ত্রের ভিত আজ রচিত হলো, যা কেউ কোনোদিন নস্যাত্ করতে পারবে না।’