বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট বাদ নির্বাচনের ছক ফাইনাল করেছে সরকার। ওই ছক অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক মহড়াও এরইমধ্যে শুরু হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে সংলাপের বিষয়টি ‘ডিপ ফ্রিজে’ পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন আন্তর্জাতিক চাপ ছাড়া বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান একেবারেই অসম্ভব বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এককভাবে নির্বাচন করার জন্য আনুষ্ঠানিক মহড়ার অংশ হিসেবে সর্বশেষ বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিন সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এমকে আনোয়ার এবং ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী আবদুল আওয়াল মিন্টু ও আইনজীবী শিমুল বিশ্বাসকেও। এছাড়া ১৮ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এখন অনেকেই গ্রেপ্তার আতঙ্কে আত্মগোপনে।
শুধু তাই নয়, যে কেউ অন্য দলে যোগ দিয়ে নির্বাচন করতে পারবেন, এই বিধান রেখে আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে বিএনপিকে ভাঙা, রাজনৈতিক নেতাদের কেনা-বেচার মাধ্যমে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অধিকসংখ্যক দল ও নেতার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার ছকের অংশ হিসেবে এসব করা হচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এছাড়া করা বিএনপির ডামি হিসেবে বিএনএফকে নিবন্ধন দিচ্ছে কমিশন। পর্যবক্ষেক মহলের মতে, এটা সরকারের ইচ্ছারই প্রতিফলন।
এদিকে নির্বাচন কমিশন এতদিন নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিরোধিতা করলেও সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশানার কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘আইনে যাই থাক, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হবে। আগামী নির্বাচনে ১৮ দলীয় জোটের আন্দালন দমাতেই এ সিদ্ধান্ত, বলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
তফসিল ঘোষণার আগেই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে এক প্রকার অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তাই এখন শুধু বাকি তফসিল ঘোষণা, নির্বাচন অনুষ্ঠান, আর দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতাসীনদের সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিকতা।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি এবং আরপিও সংশোধন নির্বাচনের মহড়া কি-না, এ প্রশ্নে আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বাংলামেইলকে বলেন, ‘ডেফিনেটলি। আমরা নির্বাচনের প্রস্ততি গ্রহণ করছি। নির্বাচনে কোনো দল এলো কি এলো না সেটা বড় কথা নয়। নির্বাচন আমাদের করতে হবে।’
বেগম খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ কি-না, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জিজ্ঞাসা করুন।’
সংলাপ প্রশ্নে কামরুল বলেন, ‘বর্তমানে বিরোধী দল তথা বিএনপি যে পথে হাঁটছে তাতে সংলাপের সম্ভাবনা ক্ষীণ। গতকাল যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা বিভিন্ন ঘটনার উস্কানিদাতা। এছাড়া আবদুল আওয়াল মিন্টু সন্ত্রাসী ঘটনার অর্থ যোগানদাতা। তাই জানমাল রক্ষায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি আসলে নির্বাচনে আসবে না।’
বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার কথা বলতে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘সংলাপ নিয়ে সরকার খেলছে।’
তিনি বলেন, ‘ক্রমেই সরকারে স্বরূপ উন্মোচিত হচ্ছে। আরপিও সংশোধন, নেতাদের গ্রেপ্তার, বিএনএফকে নিবন্ধন দেয়ার প্রক্রিয়া শুধু বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করার মহড়া নয়, এটা হলো বাকশাল প্রতিষ্ঠা করার মহড়া।’
দুদু বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান যেটা ৭২ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত করেছেন, বর্তমানে তার কন্য শেখ হাসিনা তা বাস্তবায়ন করছেন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ আছেন বলে তিনি দাবি করেন।
সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্রমাগত নির্বাচন সংক্রান্ত সবকিছুই পরিষ্কার হয়ে উঠছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার অধীনেই আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ লক্ষ্যে সবকিছু এগিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বদলীয় সরকার গঠনের লক্ষ্যে সোমবার মন্ত্রীরা পদত্যাগ করবেন। এরইমধ্যে অনেকে করেছেনও। যদিও সর্বদলীয় সরকার সংবিধানে নেই।’
এ প্রসঙ্গে গ্রেপ্তারের আগে বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘ওটা সর্বদলীয় সরকার হবে না, হবে ১৪ দলীয় সরকার।’
সংলাপ প্রশ্নে ড. বদিউল আলম মজুমদার বাংলামেইলকে বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতাদের গ্রেপ্তার ও ভয়ভীতি দেখানোর ফলে আমার মনে হয় সংলাপ ডিপ ফ্রিজে চলে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার এককভাবে নির্বাচন করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন আগে বলেছে আর্মির প্রয়োজন নেই, এখন বলছে প্রয়োজন আছে। এতে জনমনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।’
বদিউল আলম বলেন, ‘বিএনপি না এলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।’
তিনি সরকারের কর্মকাণ্ডকে নির্বাচনী মহড়া না বলে এটাকে এককভাবে নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরুর কথা বলেন।