প্রস্তাবিত ‘সর্বদলীয় সরকারে’ থাকা এবং প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে না গেলে তাতে অংশগ্রহণ করা না-করা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি জাতীয় পার্টি (জাপা)। এ বিষয়ে অবস্থান প্রকাশের জন্য জাপার চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ আরও কিছুদিন সময় নেবেন। এরশাদের ঘনিষ্ঠ জাপার তিনজন নেতার সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলে জানা গেছে, দলের নেতাদের মতামত জানতে এরশাদ জাপার যৌথ সভা ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ২০ নভেম্বরের পর এই সভা হতে পারে। এরপর রাজনৈতিক পরিস্থিতি বুঝে বিষয়টি পরিষ্কার করতে চান তিনি।
অবশ্য সরকারি সূত্রগুলো বলছে, তারা মনে করে, শেখ হাসিনার সরকারের অধীন নির্বাচনে বিএনপি না গেলেও মহাজোটের শরিক দল হিসেবে জাপা তাতে অংশ নেবে। ইতিমধ্যে নির্বাচনকালীন ‘সর্বদলীয় সরকারের’ মন্ত্রিসভায় এরশাদের ভাই বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদেরসহ জাপার আরও দুজন নেতাকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে দলটিকে। যদিও এ দুই নেতার একজন প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। তবে দলের অপর এক নেতা সর্বদলীয় মন্ত্রিসভায় যেতে জোর চেষ্টা করছেন বলে তিনি জানান।
জানতে চাইলে জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাপা নির্বাচনে যাবে কি না, সে ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ওই সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত সর্বদলীয় সরকারে যোগদানের প্রশ্নই আসে না।’
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, পাঁচ দিনের সফর শেষে সিঙ্গাপুর থেকে গত মঙ্গলবার দেশে ফেরেন এরশাদ। পরদিন তিনি দলের মহাসচিবকে ডেকে ১৬ নভেম্বর সহযোগী সংগঠন জাতীয় যুব সংহতির কাউন্সিল এবং তার পরে জাপার যৌথ সভা আয়োজনের নির্দেশনা দেন। যৌথ সভায় জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটি ও দলের সব সহযোগী সংগঠন এবং জেলা কমিটির সভাপতি-সম্পাদকেরা থাকবেন। ওই সভায় আগামী নির্বাচন ও নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারে যাওয়া না-যাওয়ার বিষয়ে নেতাদের মতামত চাইবেন এরশাদ।
প্রায় দুই বছর ধরে বর্তমান সরকারের কড়া সমালোচনা এবং মহাজোট ছাড়ার হুংকার দিয়ে আসছিলেন এরশাদ। সর্বশেষ তিনি আওয়ামী লীগকে ‘বেইমান’ বলে আখ্যায়িত করে ২৫ অক্টোবরের আগেই মহাজোট ছাড়ার ঘোষণাও দেন। এরপর দুই সপ্তাহ চলে গেছে, কিন্তু এরশাদ নিশ্চুপ। এর মধ্যে এরশাদ তাঁর ছোট ভাই ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জি এম কাদেরকে নিয়ে সিঙ্গাপুরে যান। এরশাদের এই সফর নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে ও রাজনৈতিক মহলে নানা ধরনের কথা হচ্ছে। যদিও দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জি এম কাদেরের চোখের চিকিৎসা করানোর জন্য তাঁর সঙ্গে গেছেন এরশাদ।
জাপার দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা সরকারের অধীন নির্বাচনে যেতে এরশাদ তাঁর দেশি-বিদেশি মিত্রদের কাছ থেকে বেশ চাপে আছেন। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকেও যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু এরশাদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত সময় নিয়ে পরিস্থিতি বুঝতে চাইছেন।
তবে জাপার সভাপতিমণ্ডলীর দুজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, একতরফা নির্বাচনে অংশ নিয়ে এরশাদ নিজের রাজনৈতিক ‘কেলেঙ্কারি’ আর বাড়াতে চাইছেন না। কারণ, শেখ হাসিনার সরকারের অধীন নির্বাচনে গেলে একসময় তাঁর বানানো ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দলের তকমা তাঁকেই গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া এরশাদ ইতিপূর্বে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বলেছেন, কোনো পাতানো নির্বাচনে অংশ নিয়ে ‘দালাল’ হয়ে মরতে চান না তিনি। সর্বশেষ ২১ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনেও তিনি বলেন, ‘সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন জাতি ও পৃথিবীর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। জাতীয় পার্টি সেই নির্বাচন করবে না।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাপার মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, তাঁদের দলের চেয়ারম্যান আগের অবস্থানেই আছেন। জাপা সব দলের অংশগ্রহণ সাপেক্ষে নির্বাচনে যাবে এবং এককভাবে নির্বাচন করবে।