সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্নে দাবি আদায়ে হরতাল কর্মসূচি দিয়ে বিরোধী দল রাজপথ দখলের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। চলছে তাদের সহিংস কর্মসূচি। এদিকে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচনের লক্ষ্য স্থির করে কেন্দ্রীয়ভাবে চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রস্তুতি। তা সত্ত্বেও দলটির কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রীরা এলাকায় থাকছেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ সত্ত্বেও বিরোধী দলের হরতাল-সহিংসতা প্রতিরোধে তারা মাঠে নেই। এলাকা ছেড়ে রাজধানী ঢাকাতেই সময় কাটাতে ব্যস্ত এসব নেতা। এ নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।
অথচ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অধিকাংশই এলাকায় থেকে সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলন এগিয়ে নেয়ার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যশোরের তরিকুল ইসলাম, চট্টগ্রামের আবদুল্লাহ আল নোমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, রাজশাহীর মিজানুর রহমান মিনু, বরিশালের মজিবর রহমান সরোয়ারসহ প্রায় সব নেতাই এলাকায় আন্দোলন কর্মসূচিতে রয়েছেন। শুধু ভিন্ন চিত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। মন্ত্রীরা তো যান না, কেন্দ্রীয় নেতারাও এ সময় ঢাকায় অবস্থান করেন। হরতালসহ বিরোধী দলের অন্যান্য কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগেই ফিরে আসেন ঢাকায়।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ঢাকায় বিভিন্ন ছোট-খাটো সংগঠনের কর্মসূচিতে নিয়মিত বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি মাঝে-মধ্যেই এলাকায় যান। তবে এলাকায় তো নয়ই, ঢাকায় রাজপথেও তাকে দেখা যায় না। দলের প্রচার সম্পাদক এবং বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এলাকায় গেলেও তার নির্বাচনী এলাকা রাঙ্গুনিয়ায় থাকেন না। মৌলবাদীদের আখড়া হিসেবে পরিচিত এ এলাকায় সহিংসতা প্রতিরোধে তিনি কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেননি। বিরোধী দলের কর্মসূচি মোকাবেলায় চট্টগ্রামেও তাকে কখনোই দেখা যায় না। দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী মাহমুদ আলী দিনাজপুরে তার এলাকায় যান না বলেই চলে। তিনি সর্বশেষ ঈদ করেছেন ঢাকায়। তবে, ঈদের আগে একবার এলাকায় গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। এলাকায় রাজনীতির মাঠেও সক্রিয় নন তিনি।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা ফারুখ মোহাম্মদের বিরুদ্ধেও এলাকায় না যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তিনি এই মুহূর্তে ঢাকায় অবস্থান করছেন। যশোরে গেলেও নির্বাচনী এলাকায় না গিয়ে তিনি সার্কিট হাউসে বসেই নেতাকর্মীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে ঢাকায় ফেরেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যশোরে বিরোধী দলের হরতাল ও সহিংস কর্মসূচি প্রতিরোধে গত পাঁচ বছরে তার কোনো ভূমিকাই নেই। সর্বশেষ চৌগাছায় একটি ব্রিজ উদ্বোধন করে ঢাকায় ফেরেন তিনি। এরপর আর এলাকায় যাননি।
রংপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ আশিকুর রহমান এলাকায় যান না বলে অভিযোগ নেতাকর্মীদের। গত দুই ঈদেও তিনি এলাকায় ছিলেন না। জানা যায়, যেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় পীরগঞ্জ সফরে গিয়েছিলেন সেদিন সপরিবারে পীরগঞ্জে উপস্থিত ছিলেন আশিকুর রহমান। এরপর নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে একদিনের জন্য তিনি মিঠাপুকুর যান। কিন্তু হরতাল-আন্দোলন প্রতিরোধে কখনোই এলাকায় রাজপথে নামেননি। সাবেক এ আমলার বিরুদ্ধে এলাকার লোকজনের অভিযোগ তাকে ‘স্যার’ না বললে তিনি অসম্মান বোধ করেন। মেঘনা ব্যাংক ও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক সরকারদলীয় এই সংসদ সদস্যকে রংপুরে বিরোধী দলের কর্মসূচি মোকাবেলায় কখনোই পায়নি এলাকার নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও শ্রমমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু সম্প্রতি তার এলাকা নরসিংদীতে যাওয়া শুরু করেছেন। লোকমান হত্যাকাণ্ডের পর অনেকদিন এলাকায় যাননি তিনি। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মন্ত্রী রাজুর এক ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। রাজু এলাকায় আন্দোলন-সংগ্রাম বিরোধী কর্মকাণ্ডে সক্রিয় নন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন এলাকায় গেলেও বিরোধী দলের আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবেলায় কোন ভূমিকা রাখেন না। ক্ষোভের কারণে নেতাকর্মীরাও তার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেন।
জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত সাতক্ষীরা। সেখানকার এমপি ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী আফম রুহুল হক। তিনি কদাচিৎ এলাকায় যান। সম্প্রতি এ জেলায় মৌলবাদী জামায়াত-শিবির তাণ্ডব চালালেও ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের দেখতে যাননি এ মন্ত্রী। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ রয়েছে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের।
সহিংসতা ছাড়া রাজশাহীতে হরতাল পালন হয়েছে- এমন দৃষ্টান্ত নেই। তারপরও সেখানে এসব মোকাবেলায় কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি সরকারি দলের পক্ষ থেকে। নেই জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকরী প্রতিরোধ। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী এলাকায় থাকলেও বলতে গেলে ঘরে বসে থাকেন।
বিরোধী দলের কোনো কর্মসূচিতে সিলেটে দুই মন্ত্রী আবুল মাল আবুল মুহিত ও নুরুল ইসলাম নাহিদকে স্থানীয় নেতাকর্মীরা সর্বশেষ কখন দেখেছেন তা মনে করতে পারেন না। তারা সব সময় ঢাকায় থাকতে পছন্দ করেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এ দুই নেতাকে ঢাকার কর্মসূচিতেও কখনোই দেখা যায় না।