জামায়াত ইসলামী মুক্তিযুদ্ধের সময় প্যারা-মিলিশিয়া বাহিনী হিসেবে কাজ করেছে বলে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে চৌধুরী মঈনউদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের মামলার রায়ে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই পর্যবেক্ষণ দেয়।
রায়ে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার প্রাক্কালে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে প্রবাসী এই দুই বাংলাদেশিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার আদেশ দেয়া হয়। একইসঙ্গে তাদের দেশে ফেরত এনে রায় কার্যকরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলার রায়ের মধ্যদিয়ে আবারো জামায়াতের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। এতে জামায়াত ইসলামী মুক্তিযুদ্ধের সময় প্যারা-মিলিশিয়া বাহিনী হিসেবে কাজ করেছে বলে রায়ে পর্যবেক্ষণ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আবদুল কাদের মোল্লার রায়ে জামায়াত ইসলামীকে একটি ক্রিমিনাল সংগঠন সাব্যস্ত করে রায়ে পর্যবেক্ষণ দেয় ট্রাইব্যুাল।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, একাত্তর সালে আল-বদরের এই নেতারা সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিয়েই মাস্টার মাইন্ড হিসেবে কাজ করেছে।
সকাল ১১টার দিকে ট্রাইব্যুনাল এজলাসে উঠেন বিচারপতিরা। এরপর চেয়ারম্যান ওবায়দুল হাসান, বলেন ১৫৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের মধ্যে সংক্ষিপ্ত ৪১ পৃষ্ঠা পাঠ করা হবে।
রায়ের সংক্ষিপ্তসারের প্রথম অংশ উপস্থাপন করেন বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম, দ্বিতীয় অংশ বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া উপস্থাপন করেন এবং শেষ অংশ পাঠ করেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ওবায়দুল হাসান।
এছাড়া রায়ে বলা হয়, একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের মূল নায়ক ছিল চৌধুরী মঈনউদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান। তাদের এই নৃশংস অপরাধের জন্য তারা ‘শুধু এবং শুধুমাত্র’ ফাঁসির যোগ্য। তাদের মৃত্যুদণ্ড না হলে তা হতো বিচারের ব্যর্থতা।
প্রসিকিউশনের এক সাক্ষীর সাক্ষ্যের উদ্বৃতি দিয়ে ট্রাইব্যুনাল বলে, চৌধুরী মঈন উদ্দীন ১৯৭১ এর পর দুইবার বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। একবার জিয়াউর রহমানের আমলে আরেকবার এইচএম এরশাদের আমলে। এ সময় তারা পুলিশ প্রটেকশন এবং পাকিস্তান দূতাবাসের গাড়িতে করে এসেছিল। এত নৃশংস খুনির জন্য রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা- ‘কি লজ্জা, লজ্জা!’
এদুজনের বিরুদ্ধে আনীত ১১টি অভিযোগের সবকটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের ফাঁসি দেয়া হয়। এর মধ্যে ৬, ৭, ৯ এবং ১০নং অভিযোগের সঙ্গে তাদের প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণের বিষয়টি প্রসিকিউশন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণে সক্ষম হয়েছে। বাকি অভিযোগগুলোর সঙ্গেও তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয়েছে।
ট্রাইব্যুনাল বলে, দণ্ডিতরা বর্তমানে বিদেশে পলাতক রয়েছে। এদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করতে রাষ্ট্র প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এদিকে, রায় ঘোষণাকে ঘিরে ট্রাইব্যুনাল এলাকার নিরাপত্তা জোড়দার করা হয়। রায় ঘোষণাকালে মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্যাতনের শিকার ব্যক্তি, শহীদ পরিববারের সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও এ বিচার অনুষ্ঠানে আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত অনেকেই ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন