রাজশাহীতে গণযোগাযোগ অধিদফতর ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে গতকাল আয়োজিত সংলাপ অনুষ্ঠানে ব্যাপক হট্টগোল সৃষ্টি হয়। সাধারণ দর্শক-শ্রোতাদের প্রশ্ন করতে না দেয়ায় তারা একে সাজানো অনুষ্ঠান আখ্যায়িত করে অডিটরিয়ামে ব্যাপক হৈচৈ শুরু করে। পরে তথ্যমন্ত্রী পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হলে হট্টগোলের মধ্যেই অনুষ্ঠান শেষ হয়। গতকাল পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ডা. কাইছার রহমান চৌধুরী মিলনায়তনে ‘শান্তি-উন্নয়ন-গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ শীর্ষক তৃতীয় এ গণসংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে আমার দেশ পত্রিকার ছাপা সরকারিভাবে বন্ধ করে দেয়া নিয়ে আবারও মিথ্যাচার করেছেন তথ্যমন্ত্রী। নিজস্ব প্রেস ও বিকল্প প্রেসে পুলিশ মামলা দিয়ে কর্মীদের গ্রেফতার করে সরকার ছাপা বন্ধ করে দেয়ার পরও অংশগ্রহণকারীদের এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধে বিশ্বাস করে না। আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করা হয়নি। তারা ইচ্ছে করলে যে কোনো ছাপাখানা থেকে পত্রিকাটি প্রকাশ করতে পারে। তবে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগে পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কারাগারে আটক রয়েছেন।
এছাড়া দেশের একটি বিশেষ পরিস্থিতির মুহূর্তে দিগন্ত টিভি ও ইসলামী টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। তবে তা সাময়িক। যে কোনো মুহূর্তে চ্যানেল দুটির সম্প্রচার শুরু হবে। এ নিয়ে চ্যানেল দুটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, গত পৌনে পাঁচ বছরে দেশে উন্নয়নের একটি ধারা সূচিত হয়েছে। দারিদ্র্য জয়, জঙ্গিবাদ দূর ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের এ ধারাকে বাধাগ্রস্ত করা বিরোধীদের একটি এজেন্ডা। যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গিবাদী জামায়াতকে নিয়ে বিএনপি সেই এজেন্ডা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে।
তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, সরকার কওমি মাদরাসা দখল করছে বলে আল্লামা শফী যে অভিযোগ এনেছেন তা সঠিক নয়। বরং কওমি মাদরাসাগুলোকে একটি কাঠামোর মধ্যে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত কওমি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ওই সনদ দেবেন। তবে এ প্রস্তাবনাটি সরকারের বিবেচনাধীন বলে জানান তিনি।
এতে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণযোগাযোগ অধিদফতরের মহাপরিচালক তাসির উদ্দিন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রা-ভিসি প্রফেসর চৌধুরী সারওয়ার জাহান সজল।
এদিকে অনুষ্ঠিত ওই সংলাপে প্রশ্ন করার সুযোগ না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অংশগ্রহণকারীদের একটি বড় অংশ। তাদের অভিযোগ, সংলাপের অধিকাংশ সময়জুড়ে মন্ত্রী নিজেই বক্তৃতা করেছেন। সরকারের বিরুদ্ধে যায় এমন প্রশ্ন গ্রহণ করা হয়নি। এ নিয়ে অনুষ্ঠান চলাকালে হট্টগোল শুরু করেন তারা। এছাড়া সরকারি দল সমর্থকদের সুযোগ দেয়া হয়েছে। অনেক প্রশ্নের জবাব দেননি মন্ত্রী। প্রশ্ন করা হয়নি এমন বিষয় অবতারণা করেছেন তিনি। এ সময় গণসংলাপের নামে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানকে দলীয় সংলাপ বলেও অভিযোগ করেন তারা।
দুপুর ১২টা ১২ মিনিট থেকে শুরু হওয়া ওই গণসংলাপ শেষ হয় বেলা ১টা ২৪ মিনিটে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার অনুষ্ঠাটি সরাসরি সম্প্রচার করে। এতে রাজশাহীর বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ অংশ নেন।
পরে গণসংলাপ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, সর্বদলীয় না নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার—এ নিয়ে এখনো আলোচনার দরজা খোলা রয়েছে। কিন্তু বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট অহেতুক হরতাল ডেকে সেই আলোচনা বাধাগ্রস্ত করছে। কোনো শর্ত দিয়ে নয়, বরং খোলামেলা আলোচনা হতে পারে।







