একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগ নিয়ে পলাতক চৌধুরী মইনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ।
পুরাতন হাইকোর্টে ভবনের স্থাপিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করা হবে। সকাল সাড়ে ১০টা রায় ঘোষণার কার্যক্রম শুরু হবে।
গত ৩১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর এ মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য (সিএভি) অপেক্ষমাণ রেখে দেয় ট্রাইব্যুনাল। এরপর প্রায় এক মাস পর এ মামলাটি রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হলো।
মাত্র পাঁচ মাসেই এ মামলার কার্যক্রম শেষ হয়ে গেল। বিগত পাঁচ মাসে এ মামলার অভিযোগ আমলে নেয়া, অভিযাগ গঠন করা, সাক্ষ্যগ্রহণসহ যুক্তি উপস্থাপন সম্পন্ন হয়। এরপর মামলাটি রায়ের জন্য সিএভি অপেক্ষমাণ রেখে দেয় ট্রাইব্যুনাল।
পলাতক এই দুইজনের পক্ষে যুক্তি উস্থাপন করেন রাষ্ট্রীয় খরচে নিয়োগ পাওয়া দুই আইনজীবী আব্দুস শুক্কুর খান ও সালমা হাই টুনি।
এর আগে প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান তিন দিন তার যুক্তি উপস্থাপন সম্পন্ন করেন।
গত ২২ সেপ্টেম্বর এ মামলায় প্রসিকিউশনের সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। পলাতক এ দুই অভিযুক্তের পক্ষে কোনো সাক্ষী না থাকায় ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে এ মামলায় প্রসিকিউশন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করে ২৫ সেপ্টেম্বর শেষ করে।
চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে গত ২৪ জুন ১১টি অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল-২ এ অভিযোগ গঠন হয়।
গত ২ মে দুজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল ট্রাইব্যুনাল। তাদের গ্রেফতার করতে না পারায় তাদের হাজির হতে দুটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও হাজির না হওয়ায় তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
১৫ জুলাই প্রথম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন শহীদ অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমেদের ভাগ্নি মাসুদা বানু রত্না।
পরে আরো সাক্ষ্য দেন শহীদ মুনীর চৌধুরী, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন, অধ্যাপক সিরাজুল হক খান, সাংবাদিক সিরাজ ঊদ্দিন হোসেন, সৈয়দ নাজমুল হক, নিজাম উদ্দিন আহমেদ, ডা. আব্দুল আলীম চৌধুরী, ডা. ফজলে রাব্বি, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর সন্তানরা, সাংবাদিক আ ন ম গোলাম মোস্তফার ছেলে ও ভাই, সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সারের স্ত্রী পান্না কায়সার, চিকিৎসক মোহম্মদ মর্তুজার স্ত্রী’র ভাই ওমর হায়াৎ, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমেদের বোন ফরিদা বানু, রায়েরবাজার বধ্যভূমি থেকে বেঁচে ফিরে আসা একমাত্র ব্যক্তি দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, ফেনীর বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা শরীয়ত উল্লাহ বাঙালি এবং একাত্তরে আশরাফুজ্জামানের ভাড়া বাসার মালিকের ছেলে আলী সাজ্জাদ।
এছাড়া তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে দেয়া আরো চারজন সাক্ষীর জবানবন্দি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা করে ট্রাইব্যুনাল। তারা হলেন- স্বাধীনতার পরে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তদন্তকারী তৎকালীন এনএসআই কর্মকর্তা সামাদ তালুকদার, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়ার চৌধুরীর ছেলে তাসলিম হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর ছেলে মিশুক মুনীর ও ফেনীর বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ।
আরো সাক্ষ্য দেন আশরাফুজ্জামান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের বিরুদ্ধে তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. শাহজাহান কবীর ও মো. আতাউর রহমান। সাক্ষ্য দেয়ার পরে প্রত্যেক সাক্ষীকে জেরা করেন পলাতক আশরাফুজ্জামান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আব্দুস শুকুর খান ও সালমা হাই টুনি।
আশরাফুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের বেজড়া ভাটরা (চিলেরপাড়) গ্রামে। চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের বাড়ি ফেনীর দাগনভুঞার চানপুরে।