বাংলাদেশজুড়ে মৌলবাদ ও সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিতে বিপুল বিনিয়োগ করছে আরব দেশের ১৮টি ইসলামি ব্যাংক। সে দেশে নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, তাদের সক্রিয়তাও তত বাড়ছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট রিপোর্ট হাতে আসার পরে নয়া দিল্লির কপালের ভাঁজ আরো গভীর হয়েছে। গোটা ঘটনাটির পেছনে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর ভূমিকাটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে নিজেদের আশঙ্কার কথা হাসিনা সরকারকেও ঘরোয়া ভাবে জানিয়েছে ভারত।
শনিবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দৈনিক আনন্দবাজার এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে।
আনন্দবাজার প্রতিবেদনে জানায়, রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের জামায়াতপন্থী মৌলবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোকে বিভিন্ন খাতে ঢালাও ঋণ দিচ্ছে ইসলামি ব্যাংকগুলো। গোয়েন্দারা অনুমান করছেন, বাংলাদেশে সন্ত্রাসের পরিকাঠামো তৈরি এবং অস্ত্র কেনার কাজেই এই অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে। সীমান্ত অঞ্চলে ভারত-বিরোধী কার্যকলাপে এই পুঁজি লাগানো হচ্ছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আনন্দবাজারের রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে মৌলবাদীদের আর্থিক মদদ দেয়া ব্যাংকগুলোর অধিকাংশই সৌদি আরবের। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, কুয়েত এবং কাতারের কিছু ব্যাংকের কার্যকলাপও খুবই সন্দেহজনক। রিপোর্টে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ (আইবিবিএল) ও সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংককে (এসআইবিএল)।
আনন্দবাজার জানায়, ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয় দেখে অবাক হয়েছে, সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগের ভূরি ভূরি প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমের কিছু দেশ অকাতরে ডলার ঢালছে ওই দু’টি ব্যাংকে। সৌদি আরবের আল রাঝি ব্যাংক বাংলাদেশে টাকা ঢালতে সক্রিয়। আইবিবিএল-এর ৩৭ শতাংশ অংশীদারি রয়েছে আল রাঝি-র হাতে। বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-র মাথা শায়খ আব্দুর রহমান এবং তার সহযোগী সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই-ও এক সময়ে পুঁজির জন্য এই ব্যাংকটির ওপর নির্ভরশীল ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সেন্ট্রাল ব্যাংকই প্রথম কয়েকটি ইসলামি ব্যাংকের সন্দেহজনক কাজকর্ম লক্ষ করে। সন্দেহভাজন গ্রাহকদের লেনদেন খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে তারা বেশ কিছু ব্যাংককে নির্দেশ দেয়।আইন ভেঙে জঙ্গি সংগঠনকে টাকা দেয়ার জন্য এই আইবিবিএল-কে তিন-তিন বার জরিমানা করা হয়েছে। তবে তাতে কাজের কাজ বিশেষ হয়েছে বলে মনে হয় না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লক্ষ করেছে, বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ইসলামি ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ইসলামি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘লাজনাত আল-বির আল-ইসলাম’, যারা আল কায়দার অন্যতম অর্থদাতা হিসেবে পরিচিত।
আনন্দবাজার জানায়, বাংলাদেশে বর্তমান হরতাল ও রাজনৈতিক অস্থিরতার বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সাউথ ব্লক। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনার সঙ্গেও সম্প্রতি দিল্লিতে এ বিষয়ে কথা হয়েছে পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংহের। তবে আমেরিকার বিশ্লেষণে একমত হতে পারেনি দিল্লি।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, সরকারি সূত্রের খবর, বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াত জোটের মৌলবাদী রাজনীতি, হেফাজতে ইসলামের উত্থান ও প্রকাশ্য-গোপনে ভারত-বিরোধী প্রচার যথেষ্টই অস্বস্তিতে রেখেছে দিল্লিকে। ভোট পর্যন্ত এই অরাজক পরিস্থিতি চলবে বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারিভাবে দিল্লির অবস্থান, বাংলাদেশে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কারণ, সরকার বদলায় কিন্তু বিদেশনীতির অভিমুখ একই থাকে। কিন্তু দিল্লির আশঙ্কা, মৌলবাদী রাজনীতির বাড়বাড়ন্তে ভোটের আগে ও পরে বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক ধর্মীয় সংখ্যালঘু মানুষ ভারতীয় ভূখণ্ডে চলে আসতে পারেন।
আনন্দবাজারের মতে, চলতি অরাজক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশে হুজি এবং জেএমবি-র মতো জঙ্গি সংগঠনের উত্থানও নয়া দিল্লির মাথা ব্যথার বিষয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করছে, বাংলাদেশে মৌলবাদী রাজনীতি এবং অস্থিরতা বাড়লে গোটা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। আইএসআই যে পরিস্থিতির সুবিধা নিতে পারে।
