আলীগ বিএনপিকে সতর্কবার্তা

0
157
Print Friendly, PDF & Email

রাজনৈতিক পরিস্থিতি ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নের’ দিকে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে সতর্ক করে দিয়েছেন বাংলাদেশস্থ কূটনীতিকরা। পাশাপাশি শুরুতেই শীর্ষ পর্যায়ে না গিয়ে দলীয় পর্যায়ে সংলাপ করার তাগিদ দিয়েছেন তারা। কূটনীতিকরা বলেছেন, মহাসচিব পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা করে সংলাপের ক্ষেত্র প্রস্তুত করার পর শীর্ষ দুই নেত্রী সংলাপে মিলিত হলে ফলাফল ভালো হতে পারে।
এদিকে, কূটনীতিকদের পরামর্শে দলীয় পর্যায়ে নতুন করে সংলাপ শুরুর জোর চেষ্টা চলছে বড় দুই দলে। দু-একদিনের মধ্যে এ প্রশ্নে আনুষ্ঠানিক আলাপ হতে পারে।
জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী যুগান্তরকে বলেন, সংলাপের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি। কারণ আমরা সবাই দেশকে ভালোবাসি। সুতরাং একটি পথ অবশ্যই বেরিয়ে আসবে বলে মনে করি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে নৈরাশ্যবাদী হওয়া ঠিক নয়। তাই আমি এখনও আশা করব, সরকার ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসবে। দেশকে তারা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে না। মজিনার সঙ্গে আলাপের বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পক্ষপাতী। মজিনা এ কথাটিই বারবার বলার চেষ্টা করছেন।
বুধবার কূটনীতিকদের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা দুই দলের মহাসচিবের সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠককালে দলীয় পর্যায়ে নতুন করে সংলাপ শুরুর তাগিদ দেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেন মজিনা। এ সময় সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে সংঘাত হলে এ অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘিœত হবে। দুই সপ্তাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়ার আগে দুই দলের মহাসচিবকে সার্বক্ষণিক নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখারও অনুরোধ জানান মজিনা।
সূত্র মতে, মজিনার পরামর্শের সূত্র ধরে সৈয়দ আশরাফ ও প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কূটনীতিকদের এ পরামর্শের কথা তাকে জানান। এছাড়া প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার মধ্যে না করে সংলাপ দলীয় বা মহাসচিব পর্যায়ে শুরু করা যায় কিনা তা নিয়ে ওই দুই নেতা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন। এদিকে বিএনপিতেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র মতে, শীর্ষ দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া সম্মত হলে নতুন করে সংলাপ আবার মহাসচিব পর্যায়ে শুরু হবে। আর তাদের আলোচনার অগ্রগতির সূত্র ধরেই গণভবনে আবারও আমন্ত্রণ জানানো হবে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে।
প্রসঙ্গত দুই নেত্রীর মধ্যে সংলাপের সম্ভাবনার বিষয়টি কিছুটা জটিল হয়ে পড়েছে। অনেকের মতে, এক্ষেত্রে দু’জনেরই ‘ইগো’ সমস্যা। ফলে কে আবার নতুন করে শুরু করবেন এ সমস্যা এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে দুই দলের বেশ কিছু নেতা সংলাপ নিয়ে উল্টো কথা ও পরস্পরে দোষারোপের বোলচাল শুরু করায় পরিস্থিতি আরও কিছুটা ঘোলাটে হয়। তাই এরকম এক পরিস্থিতির মধ্যেই জটিলতা দূর করার জন্য সরকার ও বিরোধী দলের দায়িত্বশীল কয়েক নেতা নতুন উদ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে কূটনীতিকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে এবং প্রভাবশালী দেশগুলোর পাশাপাশি জাতিসংঘের মনোভাব জানেন এমন নেতারা শুরু থেকেই সংলাপের পক্ষে। কারণ তারা জানেন, সংলাপ না হলে অনেক খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। আর এতে করে বাংলাদেশকে পড়তে হতে পারে বেশ বিপর্যয়ের মধ্যে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহল এ ব্যাপারে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
কূটনৈতিক মহলের খবর, সরকারের মধ্যে সৈয়দ আশরাফ ও গওহর রিজভীসহ বেশ কয়েক নেতা শুরু থেকেই সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে আগ্রহী। কিন্তু দায়িত্বহীন, বিশেষ করে সরকারে ও দলে সুনাম নেই এমন নেতারা সংলাপের বিপক্ষে। অথরিটি না থাকা সত্ত্বেও তারা সংলাপের বিরুদ্ধে প্রায় প্রতিদিনই কথা বলেন। ফলে সংলাপের ব্যাপারে আগ্রহী নেতারা এদের ওপরে প্রচণ্ড বিরক্ত। অনেকের মতে, এদের কারণেই সংলাপ নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিকে মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির অধিকাংশ নেতাই সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে আগ্রহী। গত কয়েক বছর দেশে সংঘাত-সহিংসতা অনেকটা এসব নেতাই ঠেকিয়ে রেখেছেন বলে মনে করা হয়। কেননা, জামায়াত ও হেফাজতে ইসলামীসহ অপর একটি অংশ অনেক আগেই চূড়ান্ত আন্দোলনে গিয়ে সরকার পতনের আন্দোলনে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিচ্ছিল।

শেয়ার করুন