ফরহাদ মজহারের অপরাধ হলো তিনি গণতন্ত্রের, জনগণের ও মুক্তিযুদ্ধর সপক্ষে কথা বলেন। তাই তাকে হেয় করার জন্য তার বক্তব্য বিকৃত করে মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে। তার প্রতি কিছু গণমাধ্যমের এই আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়।
শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘আক্রান্ত গণমাধ্যম: সংকটের আবর্তে দেশ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনায় অংশ নেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান, কবি আল মাহমুদ, ফরহাদ মজহার, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিয়াস করিম, আইনজীবী ড. তুহিন মালিক প্রমুখ।
ফরহাদ মজহার বলেন, “আমাকে হেয় করতে আমার বক্তব্য সঠিকভাবে প্রচার করা হয়নি। একটি টিভি চ্যানেল আমার বক্তব্য কেটে জোড়াতালি দিয়ে বিকৃত করেছে। সেটি তারা ফলাও করে প্রচার করছে। এটা গণমাধ্যমের ভাষা হতে পারে না।”
নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে ফরহাদ মজহার বলেন, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মাহমুদুর রহমানের মতো আমাকেও ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ধরনের কটূক্তি করে একশ্রেণীর লোক লাগিয়ে আমাকে আক্রমণ করতে চাইছে।”
ফরহাদ মজহার আরো বলেন, “পটকা, ককটেল বা ইটও কেউ যেন গণমাধ্যমে না ছোড়ে, আমিও তা চাই। বর্তমান পরিস্থিতির জন্য শুধু প্রধানমন্ত্রী দায়ী নন, আমরা সবাই দায়ী। কারণ আমরা এক হতে পারিনি। কিন্তু আগামী দিনে একটি রক্তাক্ত পরিস্থিতি আসছে, তাই আমাদের সবাইকে এক্যবদ্ধ হতে হবে।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণমাধ্যম আজ বিভক্ত ও আক্রান্ত। ফলে ফরহাদ মজহারের মতো একজন সম্মানীত ব্যক্তিকে হেয় করতে তার বক্তব্য বিকৃত করে প্রকাশ করা হচ্ছে।
ফখরুল আরো বলেন, “ফরহাদ মজহার গণতন্ত্রের কথা বলেছেন। তাই তার প্রতি এই আক্রমণ। এক-এগারোর চক্রান্তের সময় যে গুটি কয়েক লোক সত্যের কলম ধরেছিলেন, ফরহাদ মজহার তার মধ্যে একজন। কিন্তু তার অপরাধ হলো গণতন্ত্রের, জনগণের ও মুক্তিযুদ্ধর সপক্ষে লিখছেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমি বিস্মিত যে ফরহাদ মজহারকে আওয়ামী লীগ সরকার এত দেরিতে কেন আক্রমণ করল। কারণ, যারাই আওয়ামী লীগের ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেছে, তাদের ওপর খুব দ্রুত আক্রমণ চালানো হয়েছে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেছেন, গণমাধ্যমও আজ দলীয়করণ হচ্ছে। সত্য কথা কোনো গণমাধ্যমের পক্ষে না গেলে তা বাঁকাভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। ফরহাদ মজহারের কথা কিছু গণমাধ্যমের পক্ষে যায়নি বলেই তাকে নিয়ে এত কটূক্তি।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী কৌশলে সাংবাদিকদের বিভক্ত করতে চাইছেন। এ কারণে ফরহাদ মজহারের বক্তব্য বিকৃত করে তার বিরুদ্ধে একটি গোষ্ঠীকে লেলিয়ে দিয়েছেন। তার সাংবাদিকতার অর্জনকে আক্রমণ করতে চাইছেন।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ফরহাদ মজহারের সম্পূর্ণ বক্তব্য প্রকাশ করা হয়নি। তার পরও তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা সরকারের পছন্দ না হলে ওই বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো যেত। কিন্তু এ ধরনের আক্রমণ গ্রহণযোগ্য নয়।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. পিয়াস করিম বলেন, একটি চক্রান্তকারী গোষ্ঠী একুশে টেলিভিশনে দেয়া ফরহাদ মজহারের বক্তব্য বিকৃত করেই চলছে। তিনি ফরহাদ মজহারের বিরুদ্ধে করা জিডির তীব্র নিন্দা জানান।
পিয়াস করিম বলেন, স্কাইপি সংলাপ প্রকাশের অভিযোগে যদি মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়, তাহলে দুই নেত্রীর ফোনালাপ রেকর্ড করার অভিযোগে তথ্যমন্ত্রীকেও গ্রেফতার করা উচিত।
ড. তুহিন মালিক বলেন, সরকার তথ্য বিকৃত করে বুদ্ধিজীবীদের হেয় করছে। বারবার আক্রমণ করার চেষ্টা করছে। তথ্য বিকৃত করার অভিযোগে তথ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানান তিনি।
ফরহাদ মজহারের প্রতি কটূক্তির তীব্র নিন্দা জানিয়ে কবি আল মাহমুদ বলেন, ফরহাদ মজহারের মতো একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এমন কটূক্তি ও আক্রমণ কিছু গণমাধ্যমের সঠিক আচরণ নয়।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আব্দুস শহিদ বলেছেন, ক্ষমতায় গিয়ে গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ করা আওয়ামী লীগের স্বভাব। দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, চ্যানেল ওয়ান, আমার দেশ ও শীর্ষ নিউজ বন্ধ করে দেয়াই এর প্রমাণ।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কবি আব্দুল হাই শিকদারের সঞ্চালনায় গোলটেবিল আলোচনায় আরো উপস্থিত ছিলেন সাবেক উপ-উপাচার্য আ স ম ইউসুফ হায়দার, সাবেক বিচারপতি আবদুর রউফ, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, সাংবাদিক শফিক রেহমান, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী প্রমুখ।