‘আক্রমণের জন্য নয়, আত্মরক্ষার জন্যই দা-কুড়াল’

0
178
Print Friendly, PDF & Email

কারও ওপর আক্রমণের জন্য নয়, বরং লগি-বৈঠা বাহিনীর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্যই ‘দা-কুড়াল’ নিয়ে প্রস্তুত থাকার কথা বলেছেন ঢাকা মহানগর বিএনপির আহবায়ক সাদেক হোসেন খোকা। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়ে ঢাকার সাবেক এই মেয়র বলেন, লগি-বৈঠা বাহিনীর ২০০৬ সালের সেই বিভিষীকামায় নৃশংসতা এখনও সবার চোখে ভাসে। প্রকাশ্যে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ খুন করার পর সেই মৃতদেহের ওপর উল¬াসনৃত্য করার ভয়ংকর দৃশ্য মানুষ আজও ভুলেনি। সেই পটভূমিতেই আমি বলেছি যে, নৌকা মার্কার সমর্থকরা যদি এবারও নদী কিংবা খালে-বিলে নৌকা রেখে লগি-বৈঠা নিয়ে ঢাকায় এসে রাজপথে পিটিয়ে মানুষ খুন করার চেষ্টা করে, তাহলে ধানের শীষের সমর্থকরাও যেন আত্মরক্ষার জন্য নিজেদের জীবন সংগ্রামের নিত্যসঙ্গী কাস্তে, দা, কুড়াল কিংবা টেঁটা-বল¬ম নিয়ে প্রস্তুত থাকে। কারও ওপর আক্রমণ করার জন্য এটা বলা হয়নি। আত্মরক্ষা করবার অধিকার প্রত্যেক মানুষেরই আছে। তারা যদি ভাবে যে, রাজধানীতে এসে লগি-বৈঠার তান্ডব বারবার করবে, তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা আরও বলেন, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, হরতাল আহবানকারীদের ঘরের ভিতর থেকে ধরে এনে হত্যা করার জন্য। তার এই বক্তব্যের পর দেশের মানুষ আতঙ্কের মধ্যে আছে। আমরা ভেবেছিলাম তার এই ভয়ঙ্কর বক্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করবেন। কিন্তু সে রকম কিছু না করে উল্টো বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর নানাভাবে দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে। হুমকি দেওয়া হচ্ছে রাজপথ দখলের। সবমিলিয়ে এমন আবহ সৃষ্টি করা হয়েছে যে, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের জীবনের বিনিময়ে হলেও সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চায়। কিন্তু দেশের মানুষ তাদেরকে সেই সুযোগ কিছুতেই দেবে না। অসহায়ের মতো বসে বসে মার খাবে না। মানুষ এবার আত্মরক্ষার জন্য অন্যায়ের বিরূদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। এটা তাদের ন্যায়সঙ্গত সাংবিধানিক অধিকার।
অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃনা তারে যেন তৃণসম দহে -কবিতার এই উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, আত্মরক্ষার আহবানের মধ্যে অন্যায় বা অপরাধের কিছু থাকতে পারে না। এটা মানুষের জন্মগত মৌলিক অধিকার। আমাদের ধর্মেও আত্মরক্ষার জন্য পাল্টা আঘাতের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। মরহুম মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীও আমাদেরকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছেন, নিজেকের রক্ষার জন্য পাল্টা আঘাত হানার শিক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু আজকের ক্ষমতাসীনরা একদিকে নিজেদের অন্যায়-অপরাধকে আড়াল করছে, অন্যদিকে বিরোধী দলের আত্মরক্ষার চেষ্টাকে অপরাধ হিসাবে সামনে নিয়ে আসার অপচেষ্টায় লিপ্ত।
শুক্রবারের পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ সম্পর্কে সাদেক হোসেন খোকা বলেন, দল ও জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাদের পূর্বনির্ধারিত সমাবেশটি যথাসময়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হবে। এটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। তিনি বলেন, এই অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই আমরা একদিন অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করে পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ গড়েছি। আজ স্বাধীনতার এতবছর পরও সেই অধিকারের জন্য আমাদের লড়াই করতে হচ্ছে, যা খুবই বেদনাদায়ক। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, শুক্রবারের নির্ধারিত সমাবেশ আমরা সফল করবোই। এরপরও সরকার আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা দিলে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে কি করতে হবে, সেই সিদ্ধান্ত আমরা তখন নেবো। সমাবেশে বাধা দেওয়া হলে বিক্ষোভ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে পারে বলেও হুঁশিয়ারী দেন তিনি।
ভবিষ্যত আন্দোলন কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, আন্দোলন সফল করার জন্য প্রয়োজনীয় সব রকম কর্মসূচিই ঠিক করা আছে। সময়মতো সব কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সরকারি দলের রাজপথ দখলের হুঁংকার ফাঁকা আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই নয়। বিগত ৫ বছর ধরে লুটপাট আর নানা রকম অন্যায়-অপরাধের দায় নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা এখন পলায়নপর। সুতরাং রাজপথ দূরের কথা, তাদেরকে নিজেদের বাড়িঘরেই খুঁজে পাওয়া যাবে না।

শেয়ার করুন