বাংলাদেশে অবৈধভাবে তিস্তা বাঁধ দিয়ে পানি পাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এজন্য রাজ্য পুলিশকে এই ঘটনার তদন্ত করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
বর্তমানে মমতা ব্যানার্জি উত্তরবঙ্গ সফরে রয়েছেন। সফরের এক কর্মসূচিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দার্জিলিয়ে এক সভায় দাঁড়িয়ে মমতা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে খবর পাচ্ছি বিনা অনুমতিতেই তিস্তা ব্যারাজ থেকে জল ছাড়া হচ্ছে। ভিন রাষ্ট্রে সেই জল যাচ্ছে। এই ঘটনা ভয়াবহ অপরাধ। যারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তাদের সনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে। রাজ্য পুলিশকে বলবো বিষয়টি দেখে দ্রুত রিপোর্ট দিতে।’
মমতার এমন হুমকি শুনে তড়িঘড়ি করে রাজ্য পুলিশ তিস্তা ব্যারাজের পানি প্রবাহের উপর নজরদারি শুরু করেছে বলে স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গিয়েছে। একই সঙ্গে তিস্তা ব্যারাজের কর্মীদের ওপরও সন্ধ্যা থেকে গোয়েন্দাদের চোখ পড়েছে।
মমতা ব্যানার্জির বিরোধীতার কারণেই বাংলাদেশের সঙ্গে বহু প্রতীক্ষিত তিস্তার জল বণ্টন চুক্তি করতে পারেনি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এমন কি দেশটির প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং ঢাকা সফরে গিয়ে তিস্তা চুক্তির সময়েও ওই সফর বয়কট করেন মমতা। যা কার্যত দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
যদিও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনার সঙ্গে মমতার ব্যাক্তিগত সম্পর্ক ভাল বলেই জানা যায়।
মুখ্যমন্ত্রী না হওয়ার আগেই এমন কি বিধানসভার ভোটের ফলাফলের চূড়ান্ত ঘোষণার আগেই জয়ের আভাস পাওয়ার পরই সব প্রটোকল ভেঙে শেখ হাসিনার ফোন গিয়েছিল মমতার কালিঘাটের বাড়িতে। সেই সময় মমতা নিজেও বলেছিলেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে তার দিদির সম্পর্ক। যদিও বাস্তবে সেই সুসম্পর্কের কোন সুবাতাস পাননি বাংলাদেশের মানুষ।
ন্যায্য অধিকার থাকার পরও বাংলাদেশকে তিস্তার জল দেওয়া হয়নি এমন অভিযোগ বাংলাদেশের প্রায় সব মানুষের তরফ থেকেই উঠে এসেছে বারবার।
বাংলাদেশে মমতার জনপ্রিয়তায় কার্যত ধস নামার খবর পেয়ে মমতা খানিকটা ঘুরে গিয়ে জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ জল পাক। তবে সেটি বৈজ্ঞানিক উপায়ে। এর জন্য তিনি বিশিষ্ট নদী বিশেষজ্ঞ কল্যান রুদ্রকে প্রধান করে এক সদস্য বিশিষ্ট কমিশনও গড়েছিলেন।
বাংলাদেশের পরাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মণিকে সঙ্গে নিয়ে ঘোষণা দিলেন ১৫ দিনের মধ্যে সেই রুদ্র কমিশনের রিপোর্ট তাঁর হাতে যাবে। কিন্তু দুই বছর অতিক্রান্ত হলেও আজ পর্যন্ত সেই কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ হয়নি।
ঠিক এমন এক অবস্থায় মমতা আবারও তিস্তার পানি নিয়ে বাংলাদেশিদের বিপক্ষে এই কঠোর অবস্থান নিয়েছেন।