আগামী নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের যে প্রস্তাব খালেদা জিয়া দিয়েছেন, তা আনুষ্ঠানিকভাবে সংসদে পেশ করেছে বিরোধী দল।
বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদের বৈঠকে যোগ দিয়ে বিএনপির সিনিয়র সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বৈঠকে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে এ প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনার জন্য পেশ করে বলেন, ”বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়া ও সংসদ সদস্যপের পক্ষে প্রস্তাব রাখছি যে, আলোচনার মাধ্যমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায় সরকারের বিষয়টি সুরাহার হওয়া দরকার। এ বিষয়ে যত দ্রুত সমাধান হয়, ততই মঙ্গল।”
খালেদা জিয়ার ওই প্রস্তাব মতে জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, ”১৯৯৬ ও ২০০১ সালে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দুটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে। ওই সরকারের উপদেষ্টারা তাদের নিরপেক্ষতার জন্য সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছিলেন। ওই দুটি নির্বাচনের একটিতে আওয়ামী লীগ এবং একটিতে বিএনপি বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে।”
এই দুই সরকারের ২০ উপদেষ্টার মধ্য থেকে বর্তমাননে সরকারি দল পাঁচজন এবং বিরোধী দল পাঁচজনের নাম প্রস্তাব করবে। তারা আসন্ন নির্বাচনকালীন সরকারের উপদেষ্টা হবেন। আর সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিকে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন সম্মানিত নাগরিককে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নির্ধারণ করা হবে। জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, ”আশা করি দেশের শান্তি ও স্থিতিশিলতার জন্য, গণতন্ত্রের স্বার্থে এই প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী গ্রহণ করবেন।”
তিনি বলেন, ”বর্তমান সংসদ ভেঙে দেয়ার আগে প্রয়োজনে ওই অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচিত করে দিতে পারে। সংসদ যেভাবে রাষ্ট্রপতি, স্পিকার ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্যদের নির্বাচিত করেন, ওই উপদেষ্টাদেরও সেভাবে নির্বাচিত করা হবে।”
একতরফা নির্বাচন করলে দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হবে উল্লেখ করে জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, ”খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমেই গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব।”
তবে জমিরউদ্দিন সরকারের এই প্রস্তাবের পরে আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ”বিরোধী দল এই প্রস্তাবটি যদি পয়েন্ট অব অর্ডারে না এনে সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী সুনর্দিষ্টভাবে প্রস্তাব দেয়, তাহলে এটির ওপর সংসদে আলোচনা হতে পারে।”
এর আগে বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর মুলতবি প্রস্তাব এনেও তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে উল্লেখ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ”বিরোধী দলীয় নেতা ১৯৯৬ এব ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায় সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্য থেকে যে ১০জনকে বাছাইয়ের প্রস্তাব করেছেন, সেটা বাস্তবসম্মত নয়। কারণ ওই ১৮ জনের মধ্যে ইতিমধ্যে চারজন মারা গেছেন। দুজন অপরাগতা প্রকাশ করেছেন। সুতরাং আমরা ১০ জন কোথায় পাব?”
তোফায়েল বলেন, ”১৯৯৬ সালের নির্বাচনের হেরে যাবার পরে ওই সময়ে খালেদা জিয়া তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। তিনি পরিকল্পিতভাবে বিএনপিকে হারিয়ে দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ আনেন। নিবাচনে তিনি কারচুপির অভিযোগ আনেন। সুতরাং এখন তিনি কী করে ওই উপদেষ্টাদের নিয়েই সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন?”
এরপর জমিরউদ্দিন সরকার আবার পয়েন্ট অব অর্ডারে বলেন, ”তোফায়েল আহমেদ একটা নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা দিয়ে কার্যত আমাদের প্রস্তাবটি উড়িয়ে দিয়েছেন। আমাদের প্রস্তাবটি ছিল প্রধানমন্ত্রীর কাছে।”