নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে এবার নতুন রূপরেখা দিলেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
বুধবার বিকাল ৪টায় প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের মেঘনা হলে (দ্বিতীয়তলা) বিকল্পধারা আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ রূপরেখা দেন তিনি।
খালেদা জিয়ার নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাবের ভিত্তিতে বি. চেীধুরী বলেন, ‘একজন সম্মানিত নাগরিককে প্রধান উপদেষ্টা করার ব্যাপারে দুই নেত্রী ঐক্যমতে পৌঁছাতে না পারলে ওই ১০ জন উপদেষ্টা ঐক্যমতের ভিত্তিতে ১০ জনের বাইরে থেকে কোনো একজন সম্মানিত নাগরিককে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মনোনীত করবেন। এই ক্ষমতা তাদের দিতে হবে।’
প্রসঙ্গত, বর্তমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে পাঁচ দলের যৌথ প্রস্তাবনা নিয়ে বিকল্পধারা বাংলাদেশ, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম, জেএসডি সভাপতি আ.স.ম আবদুর রব এবং নাগরিক ঐক্যের যৌথ উদ্যোগে আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখার কথা বিকল্পধারার পক্ষ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম ছাড়া বাকিরা এতে উপস্থিত ছিলেন না। ব্যানারেও ছিল শুধু বিকল্পধারার নাম।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক নরুল ইসলাম ব্যাপারী, সহ-সভাপতি প্রকৌশলী মো. ইউসুফ, শহিদুল ইসলাম, শাহ আম্মেদ বাদল, যুবধারারর সভাপতি ওবাইদুল হক মৃধা, শ্রমিকধারার সভাপতি আইনুল হক, কেন্দ্রীয় নেতা স্থপতি মাহফুজ, আজিজ আকন্দ, সেচ্ছাসেবকধারার সভাপতি বিএম নিজাম প্রমুখ।
প্রস্তাবনাটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রস্তাবনা
চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পরবর্তীতে মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে দু’টি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রস্তাব দু’টি পরষ্পর বিপরীতমুখী হলেও আলোচনা ও সংলাপের দ্বার উন্মোক্ত হয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। স্পষ্টতা ও নিরপেক্ষতার বিচারে বিকল্পধারা বাংলাদেশ মনে করে মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রীর প্রস্তাবটি আলোচনার টেবিলে বিবেচনাযোগ্য। একই সাথে মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রস্তাবটির তিনটি দুর্বল দিক আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
১। ১৯৯৬ ও ২০০১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্য থেকে ৫জন করে মোট ১০জন উপদেষ্টা পাওয়া না গেলে অথবা কেউ কেউ সম্মত না হলে পরবর্তী করণীয় কি হওয়া উচিৎ তা উল্লেখ নেই।
২। দুই নেত্রী এবং তাদের স্ব স্ব দল আলোচনার মাধ্যমে একজন সম্মানিত নাগরিককে প্রধান উপদেষ্টা করার ব্যপারে ঐক্যমতে না পৌছালে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তারও উল্লেখ নেই।
৩। আসন্ন সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রীর প্রস্তাবটি বাস্তব সম্মত এবং সময় উপযোগী হলেও যেহেতু মানুষ মরণশীল তাই এ প্রস্তাবটি কোন স্থায়ী সমাধান হতে পারে না । বাংলাদেশের রাজনীতির বাস্তবতা ও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশাকে মাথায় রেখে সকল রাজনৈতিক দলের আলোচনার মাধ্যমে একটি নির্বাচনকালিন সরকারের স্থায়ী রূপরেখা চুড়ান্ত করা জরুরী।
এমতাবস্থায় আমাদের বিকল্প প্রস্তাব নিম্ন রূপ:
১. ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্য থেকে ১০ জন উপদেষ্টা না পাওয়া গেলে, ১৪ দল ও ১৮ দলের বাহিরের দলগুলোর মধ্য থেকে যেমন, জাতীয় পাটি, গণফোরাম, কৃষক শ্রমীক জনতালীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রীক দল, বাসদ, সিপিডি, ইসলামী আন্দোলন, নাগরীক ঐক্য এবং বিকল্পধারা বাংলাদেশ, এ দলগুলো জাতীয় স্বার্থকে মাথায় রেখে আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যমতের ভিত্তিতে শূন্য স্থান পূরণ করবেন।
২. এক জন সম্মানিত নাগরিককে প্রধান উপদেষ্টা করার ব্যাপারে দুই নেত্রী ঐক্যমতে পৌছাতে না পারলে ঐ ১০জন উপদেষ্টা ঐক্যমতের ভিত্তিতে ১০জনের বাইরে থেকে কোন একজন সম্মানিত নাগরিককে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মনোনীত করবেন।
৩. সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পাশাপাশি বাংলাদেশের জনগণ প্রত্যাশা করে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও দূর্নীতি দমনে নির্দলীয় ও অরাজনৈতিক নাগরিক সমাজ যথাযথ ভূমিকা পালন করবে। এ অবস্থায় আমরা প্রস্তাব করছি বাংলাদেশের যথাসম্ভব সকল পেশাজীবীদের মধ্যথেকে নূন্যতম প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্ধারিত মেয়াদের জন্য স্থায়ীভাবে একটি জাতীয় নাগরিক কাউন্সিল গঠন করা যেতে পারে। যে কাউন্সিল নির্বাচন কালিন সময়ে অর্ন্তবতিকালিন সরকার হিসেবে দায়ীত্ব পালন করবে এবং নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও দূর্নীতি দমন কমিশনের সকল কর্মকান্ড তত্ত্বাবধায়ণ করবেন। এ কাউন্সিলের কাঠামো, নির্বাচন পদ্ধতি ও কর্মক্ষমতা সকল দলের আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারন করার প্রস্তাব করছি।
বিকল্পপধারা বাংলাদেশ বিশ্বাস করে সকল সময় নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার ও দূর্নীতি দমন কমিশন দল নিরপেক্ষ নাগরিক সমাজের অধিনন্ত থাকলে ক্ষমতাসীনরা, বিরোধীদল সমূহ অথবা যে কোন নাগরিক দূর্নীতিগ্রস্থ হলে বা মানবাধিকার লঙ্গন করলে তাদেরও বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। এ বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি নান্দনিক ও নুতন ধারার রাজনীতির প্রবর্তন হতে পারে।