দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৭০০ কোটি মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। এই রিজার্ভ দিয়ে দেশের অন্তত ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। নভেম্বর মাসে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বকেয়া আমদানি বিল পরিশোধের ফলে রিজার্ভ কিছুটা কমে আসবে। তবে আইএমএফের বর্ধিত ঋণ সুবিধার ১৪ কোটি ডলার ঋণ পেলে রিজার্ভ আরও বেড়ে যাবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দিন শেষে রিজার্ভ ১ হাজার ৭১০ কোটি ৬৯ লাখ মর্কিন ডলারে দাঁড়ায়, যা এর আগের অর্থবছরের অক্টোবর মাসে ছিল এক হাজার ২৩৩ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। সে হিসেবে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তৃতীয় কিস্তির ঋণ যোগ হলে রিজার্ভ আরও বাড়বে। সূত্রমতে, আইএমএফের বর্ধিত ঋণ সুবিধার তৃতীয় কিস্তির রিজার্ভে ১৪ কোটি ৫ লাখ ডলার যোগ হবে, যা আগামী নভেম্বরে ছাড়ার কথা রয়েছে।
রিজার্ভ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক ব্যাখ্যায় বলেছে, রেমিট্যান্স প্রবাহ ও জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে কার্যরতদের পাঠানো রেমিট্যান্স উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এছাড়া মোবাইল কোম্পানিগুলো থেকে বৈদেশিক মুদ্রা প্রাপ্তি এবং রপ্তানি বিল দ্রুত সময়ে নিষ্পন্ন হওয়ায় রিজার্ভ বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও বলেছে, খাদ্য আমদানি হ্রাস, আমদানিযোগ্য পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে হ্রাস এবং বিলাস দ্রব্যের আমদানি নিরুৎসাহিত হওয়ায় সার্বিক আমদানি ব্যয় কম হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে দেশের ৬ মাসের আমদানি দায় মেটানো সম্ভব, যা অভ্যন্তরীণ বৈদেশিক মুদ্রা বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বর্তমান সরকার প্রথম ২২ মাস বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এক হাজার কোটি ডলারের ওপরে ছিল। যা ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বড় ধরণের ওঠানামা শুরু হয়। অক্টোবরে রিজার্ভ এক হাজার কোটি ডলারে পৌঁছালেও তা স্থায়ী হয়নি। এর পরের মাস নভেম্বরেই রিজার্ভ আবারও নয়শ’ কোটি ডলারে নেমে আসে। ২০১২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত রিজার্ভ ৯ শ’ কোটি ডলারে অবস্থান করার পর ফেব্রুয়ারি মাসে এক হাজার কোটি ডলারে পৌঁছায়, তবে আকু পেমেন্টের পর তা আবার নেমে যায়। গত এপ্রিলে তা আবার এক হাজার কোটি ডলারের ওপরে উঠলেও তা আবার নেমে যায়। এরপর জুন মাসে এক হাজার কোটি ডলারের ওপরে উঠে। তবে গত অর্থবছর জুড়েই রিজার্ভ এক হাজার থেকে ১৫০০ কোটি ডলারে অবস্থান করছিল। যার ধারাবাহিকতা চলতি অর্থবছরেও অব্যাহত রয়েছে।








