প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন-কালীন সরকার নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেতা বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি নির্বাচিত প্রতিনিধি চান না। উনি ফিরে গেছেন অনেক পেছনে। জনগণ আগে বাড়ে, আর বিরোধীদলীয় নেত্রী পিছু হাঁটেন।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলোর উপদেষ্টাদের প্রতি বেগম খালেদা জিয়ার এতই শ্রদ্ধাবোধ থাকলে তিনি কেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমানকে ভয় দেখাতে ছাত্রদলের গুন্ডা লেলিয়ে দিয়েছিলেন?
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে গোর এ শহীদ ময়দানে আয়োজিত সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ভূমি প্রতিমন্ত্রী ও দলের জেলা কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যস্থাপনামন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীর, সভাপতিপতি-মণ্ডলীর সদস্য সতীশচন্দ্র রায়, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাংসদ ইকবালুর রহিম, মনোরঞ্জনশীল গোপাল, আজিজুল হক চৌধুরী প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৩৭ মিনিট বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে বলেন, ‘সাংসদদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আগামী নির্বাচনের আগে সর্বদলীয় সরকার গঠনের জন্য কয়েক দিন আগে আমি প্রস্তাব দিয়েছি। সেই প্রস্তাব বিরোধীদলীয় নেত্রীর পছন্দ হয়নি। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলবে। আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত মে মাসে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সংলাপ অনুষ্ঠানে আমার প্রস্তাবও বেগম জিয়া প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং পাল্টা তিনি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমাকে ক্ষমতা ও দেশ ছাড়ার আলটিমেটাম দেন। তিনি জামায়াত-শিবির আর হেফাজতে ইসলামের ওপর নির্ভর করলেন।’
বর্তমান সরকারের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য ২০০৮ সালের মতো আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে আমাদের সব অর্জন ধ্বংস এবং সম্পদ, মর্যাদা, শান্তি-সমৃদ্ধি ও জনজীবন থেকে স্বস্তি কেড়ে নেবে।’ আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিতে তিনি জনসভায় উপস্থিত ব্যক্তিদের প্রতিশ্রুতি করান।
জনসভায় দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে খালেদা জিয়ার প্রস্তাব অসাংবিধানিক। তাঁর প্রস্তাব মানতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার স্বার্থে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের আবার নির্বাচিত করতে হবে।
এর আগে দুপুর দুইটা ৩০ মিনিটের মধ্যে গোর এ শহীদ মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। চারটা তিন মিনিটে প্রধানমন্ত্রী জনসভাস্থলে আসেন। তিনি বর্তমান সরকারের মেয়াদে শেষ হওয়া ৩৩৯ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৮টি প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন এবং ৭০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন আটটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
নির্মাণকাজ শেষে উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, দিনাজপুর থেকে বিরল উপজেলার ঠনঠনিয়াপাড়া সীমান্ত পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ মিটারগেজ থেকে ডুয়েল গেজে উন্নীতকরণ, ৫০০ শয্যার দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুতল ড. এম এ ওয়াজেদ ভবন, মোহনপুরে আত্রাই নদীতে রাবার ড্যাম ইত্যাদি।