প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে দলটি জাতিকে আরেকবার সেবা দিতে পারে। তিনি বলেন, ‘গত নির্বাচনের আপনারা আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছেন। বিনিময়ে আওয়ামী লীগ আপনাদের শান্তি ও নিরাপত্তা দিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে স্থানীয় ঝিনাইদহ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ইতিপূর্বে এই ঝিনাইদহসহ দক্ষিণাঞ্চল সন্ত্রাসকবলিত ছিল। আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে সেই সন্ত্রাস বন্ধ করেছিলাম। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর আবার বেড়ে যায় খুনোখুনি। আমরা এবার ক্ষমতায় আসার পর মানুষ সন্ত্রাসমুক্ত দেশ পেয়েছে।’ তিনি ঝিনাইদহের প্রয়াত বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীর নামোল্লেখ করে বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসীরা তাঁদের খুন করেছে। তারা হত্যার রাজনীতি করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী বলেছেন, তিনি হাসিনামুক্ত বাংলাদেশ চান। এর প্রমাণ তাঁরা ইতিমধ্যে দিয়েছেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তাঁরা আমাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল।’ তিনি বলেন, বিএনপি মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছিল। তাই তাদের অধীনে ভোটে জনগণের আস্থা নেই। আর আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আবদুল হাইয়ের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তৃতা করেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী সাহারা খাতুন, দলের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, সাংসদ আলী আজগর প্রমুখ। শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে নেতা-কর্মী ও দলীয় সমর্থকেরা সকাল থেকেই সমাবেশ স্থলে আসতে শুরু করেন। দুপুরের মধ্যেই বিদ্যালয় মাঠ ভরে যায়। প্রধানমন্ত্রী চারটা পাঁচ মিনিটে শুরু করে চারটা ২৪ মিনিট পর্যন্ত বক্তৃতা করেন। আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় তিনি দ্রুত শেষ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্যঘাটতি থেকে দেশে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এনেছি। এক কোটি ১৯ লাখ ছাত্রের হাতে বিনা মূল্যে বই তুলে দিয়েছি। বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ দিচ্ছি।’ শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশ সম্মান অর্জন করে। আর জামায়াত-বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশ বারবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়।
বিরোধী দলের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলের নেত্রীর ছেলেরা বিদেশে টাকা পাচার করেছে। শুনলেও লজ্জা লাগে। এমনকি বিএনপি নেত্রী এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন। তিনি জানেন, তিনি অন্যায় করছেন। তাই তিনি এখন আদালতে যেতেও ভয় পান।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডার ও হেফাজতে ইসলাম পবিত্র কোরআন শরিফে আগুন দিয়েছে। তারা মসজিদে হামলা করেছে। যারা কাবা শরিফের ছবি নিয়ে ব্যঙ্গ করে, তারা ইসলামের হেফাজত করতে পারে না।
জনসভায় যোগ দেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য প্রেরণা ৭১-এর উদ্বোধন করেন। পরে জনসভা মঞ্চে তিনি মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত ভবন, ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ, ঝিনাইদহ মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ঝিনাইদহ ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।