২০১২ সালের ৮ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট—এক মাসেই ঢাকা রেলওয়ে থানাধীন রেললাইনের পাশ থেকে ৫২টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর বেশির ভাগই উদ্ধার করা হয়েছে গাজীপুর এলাকা থেকে। এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাকাপয়সা কেড়ে নিয়ে দুর্বৃত্তরা ট্রেনের ছাদ থেকে যাত্রীদের ফেলে দিয়ে এসব হত্যার ঘটনা ঘটাচ্ছে। আর বাংলাদেশ রেল পুলিশের (জিআরপি) তদন্ত প্রতিবেদনে এসব ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলে দাবি করা হয়েছে।
প্রথম আলোর পক্ষ থেকে এসব লাশ উদ্ধারের ঘটনাস্থলের আশপাশের লোকজন এবং এ পথে ট্রেনে নিয়মিত ভ্রমণকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ট্রেনের ছাদে যাতায়াতকারী যাত্রীদের কাছ থেকে টাকাপয়সা কেড়ে নিচ্ছে ডাকাত ও ছিনতাইকারীরা। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে যাত্রীদের ট্রেনের ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করছে। রাতের ট্রেনে এসব ডাকাত বেশি সক্রিয় থাকে। আর এ নৃশংসতার শিকার বেশির ভাগই হচ্ছেন গরিব ও শ্রমজীবী মানুষ।
সর্বশেষ গতকাল সোমবার গাজীপুরে জয়দেবপুর-রাজশাহী রেললাইনের পাশ থেকে তিনটি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আহত অবস্থায় পাওয়া যায় সুমন হোসেন (৩০) নামের একজনকে। তিনি জানান, ডাকাতিতে বাধা দেওয়ায় তাঁদের চারজনকে রোববার রাতে ট্রেনের ছাদ থেকে ফেলে দেয় দুর্বৃত্তরা।
পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাবমতে, ২০১২ সালে সারা দেশের রেললাইন ও আশপাশের এলাকা থেকে ৮৭৩টি লাশ উদ্ধার করেছে রেল পুলিশ। কিন্তু এসব মৃত্যুর বেশির ভাগই অনুদ্ঘাটিত থেকে গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, রেলওয়ের স্থাপনায় এসব হত্যার ঘটনা নিয়ে সাধারণত গা করে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কারণ, এ-সংক্রান্ত মামলা ও তদন্তের দায়িত্ব রেল পুলিশের (জিআরপি)। আর রেল পুলিশ জটিলতা এড়া
তে বেশির ভাগ লাশ উদ্ধারের ঘটনাকে দুর্ঘটনা বা আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয় এবং কাগজপত্রে তদন্তের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানতে চাইলে পুলিশের রেলওয়ে রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক সোহরাব হোসেন দাবি করেন, নিয়ম অনুযায়ী এসব ঘটনার তদন্ত করা হয়। গতকাল যে তিনজনের লাশ মিলেছে, তাঁরা ট্রেনে ধাক্কা খেয়ে মারা গেছেন বলে এখন পর্যন্ত তাঁদের কাছে তথ্য রয়েছে। তবে তিনি এ-ও বলেছেন, ট্রেনের ছাদে ডাকাতির ঘটনায় গত বছর প্রথম আলোতে খবর ছাপা হওয়ার পরে তাঁরা ঘটনাস্থলে গেছেন। বেশ কয়েকজন দুর্বৃত্ত ধরা পড়েছে। তাদের অনেকে এখন জেলে আছে।