সাবেক স্বৈরশাসক ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নতুন নির্বাচনী তত্ত্ব কোনো বিশেষ সরকারের সম্ভাবনা সামনে রেখে করা হয়েছে বলে মনে করেন একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। আর রাজনীতিবদরা বলছেন, এই তত্ত্ব উদ্ভট ও অবাস্তব। আর জাতীয় পার্টির নেতারা মনে করেন, এরশাদের এই ফর্মুলার মাধ্যমে বর্তমান রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
সাধারণ মানুষের মধ্যেও এরশাদের এই নির্বাচনী তত্ত্ব নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয়েছে। তারা সংশয় প্রকাশ করছেন, এটা কি এরশাদের তত্ত্ব? হঠাৎ এই রাজনৈতিক উত্তুঙ্গ সময়ে এমন প্রস্তাব নিয়ে হাজির হলেন কেন? এই তত্ত্ব কি রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে?
জাপা চেয়ারম্যান তার এই নির্বাচনী তত্ত্বের বিষয়ে প্রথম কথা বলেন গত মাসে রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতির নতুন কমিটির পরিচিতি সভায়। এর পরের দিন মহানগর নাট্যমঞ্চে গ্রাম্য ডাক্তারদের সম্মেলনেও বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। আর গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তার নির্বাচনী প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরেন।
এই প্রস্তাব তুলে ধরার আগে এরশাদের সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়া সফর নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তার এই সফর শেষে দেশে ফিরে হঠাৎ প্রস্তাব তুলে ধরার বিষয়টি জাতীয় পার্টির একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্যও আগে থেকে জানতেন না।
জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা জানান, গত ২৬ আগস্ট ছেলে এরিকের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যান এরশাদ। সে সময় এরশাদের ভারতে যাওয়ার কথা ছিল। ভারত গেলে নানা সমালোচনা হয় বলে তিনি ভারতের ভিসা নিশ্চিত করেও পরে তা বাতিল করেন।
এরপর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে যান দক্ষিণ কোরিয়া। মূলত দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ফিরেই এরশাদ ঘন ঘন এ প্রস্তাব দিচ্ছেন।
এর আগে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় ঐক্যজোট থেকে বেরিয়ে এরশাদ এমনই একটি প্রস্তাব তুলে ধরেছিলেন। সে সময় এরশাদের সঙ্গে চরমোনাইয়ের প্রয়াত পীর মাওলানা ফজলুল করিমের নেতৃত্বাধীন ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলন জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিল।
এবার এরশাদ তার প্রস্তাবে বলেন, জাতীয় পরিষদের আসনসংখ্যা হবে ৩০০। প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন নির্ধারণ করবে কোন দল কোন কোটায় কত আসন পাবে। যে দল সর্বাধিক ভোট পাবে, সে দলই ভগ্নাংশের সুযোগ লাভ করবে। অর্থাৎ কোনো দল কাস্টিং ভোটের ১ শতাংশ পেলে তারা তিনটি আসন পাবে। ১ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পেলে চারটি আসন পাবে। অবশ্যই ভগ্নাংশের যোগফলের সুবিধা সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত দল ভোগ করবে।
এরশাদ আরো বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্ধারণ করবে কোন আসনে কোন দলের প্রার্থী প্রতিনিধিত্ব করবেন। সে ক্ষেত্রে দলের প্রাপ্ত ভোটাধিক্য প্রথম বিবেচনা হিসেবে গণ্য হবে।
এ ছাড়া যেকোনো নির্বাচনে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাহী ক্ষমতার বলে দায়িত্ব পালন করবে এবং নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
তবে নির্বাচনের সময় সরকারে কারা থাকবে, কিংবা নির্বাচন দলীয় বা তত্ত্বাবধাক অথবা অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে হবে কি না, সে বিষয়ে কিছু বলেননি এরশাদ।
এরশাদের প্রস্তাবের বিষয়ে কথা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল অব. মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি এরশাদের প্রস্তাবকে অসমর্থনযোগ্য উল্লেখ করে নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “এরশাদের এ প্রস্তাব সমর্থনযোগ্য নয়। সারা দেশের মানুষ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। দেশের প্রতিটি আসনের প্রার্থীরা নিজ নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে চান। হঠাৎ করে তার এ প্রস্তাব জনগণ মেনে নেবে না। আর জনগণ যদি না মানে তাহলে এর মাধ্যমে কোনো ষড়যন্ত্রও বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।”