সরকারের টাকা মেরে দিলেন উপদেষ্টা মন্ত্রী রাজনীতিবিদ

0
177
Print Friendly, PDF & Email

বকেয়া অর্থ পরিশোধ না করার কারণে সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিদের ১০টি আইজিডবি্লউ বন্ধ করে দিয়েছে বিটিআরসি। কোনো লোকসান না হলেও পুরো টাকা মেরে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে তারা বকেয়া ফেলেছেন ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। দীর্ঘদিন চুপ থাকলেও বিটিআরসি শেষ পর্যন্ত প্রভাবশালী মন্ত্রী, উপদেষ্টা, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির একাধিক শীর্ষ নেতার মালিকানাধীন এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু টাকা উদ্ধার কীভাবে হবে তা কেউ জানে না কিংবা স্পষ্ট হয়নি।
বিষয়টি মোটেই ভালো চোখে দেখছেন না ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, এটা হচ্ছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনীতি ও ব্যবসাকে একাকার করে ফেলা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় ও প্রভাব খাটিয়ে রাজনীতিবিদরা ব্যবসায় জড়াচ্ছেন। আর প্রভাবশালীরা জড়িত থাকায় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো রাজস্ব পাচ্ছে না বা আদায় করতে পারছে না। তিনি বলেন, ব্যবসা থেকে রাজনীতিকে আলাদা করা জরুরি। আমরা চাই, ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে আসুন। কিন্তু তারা যদি মুনাফা অর্জনের জন্য রাজনীতিতে আসেন তখন রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষ আস্থা হারায়। শাসনব্যবস্থা ক্রমাগত ভেঙে পড়ে।
বিটিআরসি সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে অপারেটস (আইজিডব্লিউ) রয়েছে ২৯টি। এর মধ্যে রয়েছে প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিদের মালিকানাধীন ভিশন টেল, ওয়ান এশিয়া অ্যালায়েন্স গেটওয়ে, সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড, ফাস্ট কমিউনিকেশন্স লিমিটেড, মোস ফাইভ টেল লিমিটেড, ভেনাস টেলিকম, অ্যাপল নেটওয়ার্ক লিমিটেড, র্যাংকস টেল, রাতুল ও এসএম কমিউনিকেশন্স। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পাওনা বর্তমানে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের মধ্যে রয়েছেন সরকারের একাধিক প্রভাবশালী মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টা, আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক ও ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য। শুরু থেকে তাদের মালিকানাধীন এ প্রতিষ্ঠানগুলো বিটিআরসির পাওনা বকেয়া রেখে আসছে। এর ফলে ধীরে ধীরে পাওনার পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। অর্থ পরিশোধের জন্য বিটিআরসির পক্ষ থেকে বার বার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে পাওনা পরিশোধ না করে সময় ক্ষেপণ করে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, সরকারের শেষ সময়ে এসে পাওনা পরিশোধ না করে এ প্রতিষ্ঠানগুলো সরকার পরিবর্তনের পর কার্যক্রম গুটিয়ে নেবে। এ কারণেই তারা পুরো অর্থ মেরে দেওয়ার উদ্দেশ্যে পাওনা পরিশধো করা থেকে বিরত রয়েছে। বিটিআরসি সূত্র জানায়, ডিসেম্বরের শেষে তাদের কাছে যেখানে পাওনার পরিমাণ ছিল ৩৭৭ কোটি টাকা। দ্বিতীয় কোয়ার্টারে এসে মার্চে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৩৩ কোটিতে। তৃতীয় কোয়ার্টার অর্থাৎ গত জুনের শেষে পাওনার পরিমাণ হয়ে যায় ৯৪৭ কোটি টাকা। আগস্ট পর্যন্ত বিটিআরসির পাওনা ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কিছু টাকা পরিশোধ করলেও বর্তমানে বিটিআরসির পাওনার পরিমাণ প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। সূত্র জানায়, পাওনা পরিশোধ না করায় আগস্টে চারটি আইজিডবি্লউর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিল বিটিআরসি। কিন্তু প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের চাপে সেবার তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ২৬ আগস্টের মধ্যে ছয়টি অপারেটরকে ৫০০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে সময় বেঁধে দেয় বিটিআরসি। কিন্তু এতেও কাজ হয়নি। বিটিআরসির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বকেয়া পরিশোধ না করা প্রতিষ্ঠানগুলো মন্ত্রী, উপদেষ্টা, এমপিসহ প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের মালিকানাধীন হওয়ায় বিটিআরসি কঠোর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। বলতে গেলে এদের ওপর বিটিআরসির কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের শেষ সময়ে এসে রাজনৈতিক বিবেচনায় পাওয়া এসব লাইসেন্সের মালিকরা বিটিআরসিকে টাকা দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তারা কলের পুরো টাকাই রেখে দিচ্ছেন, যার ফলে সরকারের হাজার কোটি রাজস্ব চলে যাচ্ছে আইজিডব্লিউ প্রতিষ্ঠানগুলোর পকেটে। বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন আহমদ এ প্রসঙ্গে বলেন, নির্ধারিত সময়ের পরও সরকারের পাওনা টাকা জমা না দেওয়ায় ওই ১০টি প্রতিষ্ঠানের কল টারমিনেশন সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাওনা বুঝে পেলে তারা পুনরায় কল টারমিনেট করার সুযোগ পাবে।

শেয়ার করুন