হেফাজতে ইসলাম আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে—এমন আলোচনা রাজনৈতিক মহলে আছে। তবে সংগঠনের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী তা নাকচ করে দিয়েছেন।
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। এখানকার লোকজনের ধারণা, হেফাজত সরাসরি হস্তক্ষেপ না করলেও নির্বাচনে এ সংগঠনের কর্মীদের প্রচারণা দুই দলের প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ে প্রভাব ফেলবে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের স্থানীয় সম্ভাব্য কয়েকজন প্রার্থী ইতিমধ্যে হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে দেখা করে দোয়া নিয়েছেন। তাঁরা হাটহাজারীতে কখনো দলীয় ব্যানারে, আবার কখনো বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাটহাজারী বিএনপি ত্রিধারায় বিভক্ত। আওয়ামী লীগে তেমন কোন্দল নেই। তবে দুই দলেই একাধিক প্রার্থী রয়েছেন।
গত শুক্রবার দুপুরে হাটহাজারীর মীরেরহাটের একটি কমিউনিটি সেন্টারে বিএনপির নেতা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি প্রার্থী হবেন, দল ও জনগণ তাঁকেই চাইবে। তবে মনোনয়ন না পেলে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন। তিনি এ কথাও বলেন, ‘আল্লামা শফীর দোয়াও রয়েছে আমার সঙ্গে।’ তবে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ১৮-দলীয় জোটের হয়ে নির্বাচন করলে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা কী করবেন, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
মহাজোটের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবারও মনোনয়নপ্রত্যাশী। এলাকায় রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উন্নয়নকাজ করেছেন বলে তাঁর দাবি। তিনি বলেন, অবশিষ্ট কাজগুলো আগামীবার সমাপ্ত করবেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ ইসমাইল প্রথম আলোকে বলেন, দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সাংসদের কোনো যোগাযোগ নেই। তিনি হাটহাজারীতে গার্মেন্ট ভিলেজ, শিল্পকারখানা স্থাপন করে চাকরির ব্যবস্থা, ঘরে ঘরে গ্যাস সরবরাহসহ নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও কয়েকটি রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ছাড়া কিছুই করতে পারেননি। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আনিসুল ইসলাম।
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক এম এ সালাম এখানে নির্বাচন করতে চান। তিনি জানান, এলাকার মানুষ তাঁকেই চায়। তবে দল যাঁকে মনোনয়ন দেবে, তাঁর পক্ষে কাজ করবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রশাসনিক কাজে আল্লামা শফীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়।
হাটহাজারীর ধলই গ্রামের বাসিন্দা কলেজশিক্ষক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, সরকারের সঙ্গে হেফাজতের যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, তা দূর না হলে মনের দুঃখ থেকে তারা আওয়ামীবিরোধী প্রচারণা চালাতে পারে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাটহাজারী উপজেলায় হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা ছাড়াও মেখল মাদ্রাসা, ফতেপুর মাদ্রাসা, গুড়দুয়ারা মাদ্রাসা, মাদার্শা মাদ্রাসা, চারিয়া মাদ্রাসা, নাজিরহাট মাদ্রাসাসহ ছোট-বড় ১০টি মাদ্রাসা রয়েছে। এসব মাদ্রাসার বেশির ভাগ ছাত্র-শিক্ষক ভোটার। তা ছাড়া হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হাটহাজারীতে হওয়ায় এখানকার নির্বাচনে এ সংগঠনের প্রভাব থাকতে পারে।
হেফাজতের আমির আহমদ শফী ফটিকছড়িতে গত শনিবার এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, ভোট স্বাধীন মত। আওয়ামী লীগ-বিএনপি যাকে খুশি দেন। তবে ধর্মের ওপর জুলুম করা যাবে না।
নির্বাচনে কাকে হেফাজত সমর্থন দেবে, জানতে চাইলে জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘যারা ইসলামের জন্য ক্ষতিকর নয়, তাদের সমর্থন করব।’ এরা কারা, জানতে চাইলে তিনি এর কোনো জবাব দেননি।