বোরকা পরার অপরাধে রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন মেধাবী ছাত্রীকে বহিষ্কারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের নেতারা। তারা বলেছেন, বোরকা পরতে শুধু বাধা দেয়াই নয়, একজন মেধাবী ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের মাধ্যমে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে ধৃষ্টতা দেখিয়েছে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরাসরি ইসলামের বিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
অবিলম্বে এ বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে ধর্মপ্রাণ মুসলমান রাজপথে নামতে বাধ্য হবে বলেও হুশিয়ারি দেন বিভিন্ন ইসলামী ও সমমনা দলগুলোর নেতারা। গতকাল মানববন্ধন, সভা-সমাবেশ ও পৃথক বিবৃতির মাধ্যমে তারা এসব নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল রোববার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন।
ইশা ছাত্র আন্দোলনের মানববন্ধন : হিজার পরার কারণে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে গতকাল বিকাল ৪টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন। এতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রেসিডিয়ামের অন্যতম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী বলেন, ৯০ ভাগ মুসলমানের এই দেশে হিজাব পরার কারণে হাফসা ইসলামকে বহিষ্কার করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এসব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈতিকতাহীন শিক্ষার কারণে ঐশীর মতো তরুণ-তরুণীর জন্ম হচ্ছে। যেখানে আমেরিকা, ব্রিটেনের মতো খ্রিস্টান অধ্যুষিত দেশে হিজাব পরার অধিকার স্বীকৃত; সেখানে বাংলাদেশের মতো একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে তাতে গোটা জাতি আজ বিক্ষুব্ধ। তিনি অবিলম্বে হাফসা ইসলামের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার এবং হিজাববিরোধী সব আইন বাতিলের আহ্বান জানান। অন্যথায় এদেশের তৌহিদি জনতা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামবিরোধী অবস্থানের কারণে দেশ থেকে উত্খাত করতে বাধ্য হবে। এ সময় অন্যদের মধ্যে ইশা ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর পূর্বের সভাপতি মুহাম্মদ ফখরুদ্দিন রাজী, কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এইচ.এম. রফিকুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল কেএম আনিসুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
খেলাফত আন্দোলন : খেলাফত আন্দোলনে আমির ও হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফ বলেছেন, অমুসলিম দেশগুলোতে মুসলিম নারীদের হিজাব পরতে কোনো বাধা না থাকলেও ৯০ শতাংশ মুসলমানের বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অগণতান্ত্রিক আচরণ। এ ধরনের ধৃষ্টতা ইসলাম ও মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। তিনি গতকাল বাদ আছর রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর মাদরাসায় আলেমদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বোরকা পরতে শুধু বাধা দেয়াই নয়, একজন মেধাবী ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের মাধ্যমে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে ধৃষ্টতা দেখিয়েছে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। ইসলাম নির্মূলের এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
খেলাফত মজলিস : সংগঠনটির আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের গতকাল রোববার এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, ছাত্রী বহিষ্কারের মাধ্যমে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এ দেশে ইসলাম ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধানকে অবজ্ঞার পাশাপাশি যুব সমাজকে আরও নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করছে। অনতিবিলম্বে সংশ্লিষ্ট ছাত্রীর বহিষ্কারের আদেশ নিঃশর্ত প্রত্যাহার করতে হবে। নতুবা এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান শুধু তাদের এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বাধ্য করতে রাজপথে নেমে আসবে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস : বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান, সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী ও মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন কবীর এক যুক্ত বিবৃতিতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার দাবি জানান।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম : জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতারা বলেছেন, ইসলামবিদ্বেষী আওয়ামী সরকারের ইন্ধনেই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হাফছা ইসলামকে হিজাব পরার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দেশের মানুষ কোনোদিন এটা বরদাশত করবে না। গতকাল রোববার বিকালে রাজধানীর পল্টন কার্যালয়ে মুফতি রেজাউল করীমের সভাপতিত্বে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের জরুরি সভায় নেতারা একথা বলেন।
প্রসঙ্গত, গত ৩ সেপ্টেম্বর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারের ছাত্রী হাফসা ইসলামকে হিজাব পরার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে ওই ছাত্রীর পরিবার ও সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন।