বিআইবিএমের সেমিনার অর্থনীতিতে নগণ্য পুঁজিবাজার

0
240
Print Friendly, PDF & Email

দেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে (জিডিপি) ব্যাংক খাতের অংশগ্রহণ ক্রমান্বয়ে বাড়লেও পুঁজিবাজারের অংশগ্রহণ এখনো আশানুরূপ নয়। ২০১১ সালে জিডিপিতে ব্যাংক খাতের অবদান ছিল প্রায় ৪৪ শতাংশ। আর শুধু প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর ভিত্তিতে শেয়ারবাজারের অবদান ছিল শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত এক সেমিনারে গতকাল শনিবার এ তথ্য তুলে ধরা হয়। রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএমের সম্মেলনকক্ষে ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ব্যাংক ও শেয়ারবাজারের অবদান: পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
মূল প্রবন্ধে উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে আলোচকেরা বলেন, বাংলাদেশে শেয়ারবাজারের ইতিহাস দীর্ঘদিনের হলেও কেন জিডিপিতে এর অংশগ্রহণ বাড়ছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার।
বিআইবিএমের মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধূরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক সদস্য ও প্রাইম ব্যাংকের বর্তমান উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াছিন আলী, জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর মিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদ ওসমান ইমাম।
এতে আরও বক্তব্য দেন মূল প্রবন্ধ প্রস্তুতকারক দলের সদস্য ও মেট্রোপলিটন চেম্বারের (এমসিসিআই) জ্যেষ্ঠ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হাবিবুল্লাহ বাহার এবং বিআইবিএমের শিক্ষক প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জি।
ইব্রাহিম খালেদ বলেন, বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাস বেশ পুরোনো। স্বাধীনতার পর ব্যাংক ও শেয়ারবাজার প্রায় একই সঙ্গে যাত্রা শুরু করেছে। তার পরও জিডিপিতে ব্যাংকের অবদান বাড়লেও কেন শেয়ারবাজারের অবদান বাড়ল না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। ব্যাংকিং খাতে যেমন নানা সময়ে নানা আঘাত এসেছে, তেমনি শেয়ারবাজারেও আঘাত এসেছে। কিন্তু ব্যাংকিং খাত এসব আঘাত সামাল দিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হলেও শেয়ারবাজারের ক্ষেত্রে তা ঘটেনি।
ইব্রাহিম খালেদ আরও বলেন, ‘২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের পর তদন্ত করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, শেয়ারবাজারে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকাটি ছিল বলতে গেলে সহযোগীর। নিয়ন্ত্রকের ভূমিকার পরিবর্তে তারা নানা কাজে সহযোগীর ভূমিকা পালন করেছে। এ কারণে নানা অনিয়ম ঘটেছে সেখানে। ২০১০ সালের ধসের পর শুধু শেয়ারবাজার একা ডুবেনি, সেখানে মাত্রাতিরিক্ত বিনিয়োগ করে ব্যাংকগুলোও ডুবেছে।’
পুঁজিবাজার তদন্ত কমিটির এই প্রধান আরও বলেন, ‘শেয়ারবাজার কখনোই ব্যাংকের বিনিয়োগ-নির্ভর হওয়া উচিত নয়। এমনকি আমানতকারীর টাকাও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের কোনো বিধান বিশ্বের কোথাও নেই। পাশাপাশি শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগের আধিক্য থাকাও ভালো নয়। কারণ, বিদেশি বিনিয়োগের আধিক্য থাকলে কী ধরনের দুর্যোগ নেমে আসে, তা আমরা ১৯৯৭ সালে এশিয়ার আর্থিক সংকটের সময় দেখেছি।’
ইব্রাহিম খালেদ আরও বলেন, ‘স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথক্করণের (ডিমিউচুয়ালাইজেশন) কাজ চলছে। দুই স্টক এক্সচেঞ্জ অতি সহজে বলতে গেলে বিনা যুদ্ধে এটি মেনে নিয়েছে। এতে কিছুটা সন্দেহ তৈরি হয়েছে। আর শেয়ারবাজারে ডিমিউচুয়ালাইজেশন সম্পন্ন হলেও আগামী পাঁচ বছরে তার কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। পাঁচ বছর পর হয়তো এটির সুফল পাওয়া যাবে।’
ইয়াছিন আলী বলেন, ৫০ কোটি টাকার বেশি মূলধনের কোম্পানি হলেই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির বাধ্যতামূলক একটি আইন আছে। কিন্তু সেটি কেউ মানে না। জিডিপিতে শেয়ারবাজারের অবদান বাড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। বড় মূলধনের কোম্পানিগুলোর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে যাতে বাধ্য করা যায়, সে জন্য এসব কোম্পানির ব্যাংকঋণ সীমিত করে দেওয়া উচিত। আবার অনেক কোম্পানি আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিকে ভয় পায় বলে শেয়ারবাজারে আসতে চায় না। তাই কোম্পানির তালিকাভুক্তি বাড়াতে হলে সরকারের নীতিনির্ধারকদের এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
ওসমান ইমাম বলেন, শুধু আইপিওর ভিত্তিতে জিডিপিতে শেয়ারবাজারের অবদানের হিসাব করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অধিকারমূলক বা রাইট শেয়ারের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হলে তা আরও বাড়ত।
জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, ধীরে ধীরে শেয়ারবাজারের পরিধি ও বিস্তৃতি বাড়ছে। অনেক কোম্পানি এখন ব্যাংক ঋণের পরিবর্তে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহে এগিয়ে আসছে। বাজারের পরিধি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেও শক্তিশালী করতে হবে।

শেয়ার করুন