কওমি মাদ্রাসায় হাত না দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী। তিনি বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসায় হাত দেবেন না। হাত দিলে ক্ষতি হবে। স্কুল-কলেজ নিয়ে থাকেন। ব্রিটিশ সরকারও কওমি মাদ্রাসাকে ধ্বংস করতে চেয়ে পারেনি।’
হেফাজতে ইসলামের ডাকে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির আল জামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগর মাদ্রাসায় আয়োজিত ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন শেষে মসজিদে দেওয়া সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আহমদ শফী এসব কথা বলেন। সম্মেলনে সারা দেশের কওমি মাদ্রাসার নেতৃস্থানীয় প্রায় দুই হাজার আলেম অংশ নেন।
আহমদ শফী বলেন, ‘আমরা সরল মানুষ। ইসলামের জন্য কাজ করছি। আমাদের হাতে কোনো অস্ত্র নেই। হাতিয়ার আছে শুধু দোয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করি। যাতে তিনি হেদায়েতপ্রাপ্ত হন।’
দিনভর এই সম্মেলনে সরকার প্রণীত ‘কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন ২০১৩’ বাস্তবায়ন প্রচেষ্টার প্রতিবাদ এবং হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবিতে চার মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে: কওমি শিক্ষা আইন পাসের চেষ্টার প্রতিবাদে ২৫ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান, আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে হেফাজতের সব জেলা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন, ১৩ দফা দাবিতে ১৫ থেকে ৩০ নভেম্বর বিভাগীয় শহরে সুধীসমাবেশ, ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে মহাসম্মেলন এবং ১ ডিসেম্বর থেকে ৩১ জানুয়ারি সব জেলায় রেসালত সম্মেলন। এ ছাড়া কর্মসূচিতে ৫ মের ঘটনায় ‘শহীদদের কবর জিয়ারত’ ও পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি কেন্দ্রে পাঠানোর কথাও বলা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দাবি না মানলে সচিবালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
হেফাজতের ১৩ দফা উল্লেখ করে শাহ আহমদ শফী বলেন, কাউকে ক্ষমতায় বসাতে কিংবা নামাতে আমাদের এ আন্দোলন নয়। ক্ষমতায় এলে খালেদা জিয়াকেও এ দাবি মানতে হবে। হেফাজতকে অরাজনৈতিক সংগঠন দাবি করে তিনি বলেন, ভোট স্বাধীন মত। আওয়ামী লীগ, বিএনপি যাকে ইচ্ছা ভোট দিতে কোনো অপরাধ নেই। তবে ধর্মের ওপর কোনো জুলুম করা যাবে না। অনেকেই বলেন, হাসিনা-খালেদা হেফাজতকে ৭০ সিট দেবেন। এসব মিথ্যা কথা।
কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ গঠনে সরকারি উদ্যোগের বিরোধিতা করে আহমদ শফী বলেন, ‘স্কুল-কলেজে দুই পক্ষে মারামারি হয়। মাদ্রাসায় এ রকম কোনো ঘটনা নেই। এতিম-মিসকিনদের এদিক-ওদিক থেকে অর্থ সংগ্রহ করে খাওয়ানো, পরানো ও শিক্ষা দেওয়া হয়। সরকারের এসব কাজ আমরা করি। তার পরও সরকার কওমি শিক্ষা নিয়ে লেগে আছে।’
সম্মেলনে গত ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনার কথা উল্লেখ করে হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও পুলিশ সকাল ১০টার মধ্যেই আট থেকে নয়টা লাশ ফেলেছে। তিনি বলেন, সরকার শাপলা চত্বরে গুলি করে ভয় দেখিয়েছে, এবার কওমি মাদ্রাসা নিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। কওমি মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণে আইন পাস করা থেকে সরকার পিছু না হটলে লাখ লাখ লাশ পড়বে।
সম্মেলনে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন পাসের পদক্ষেপ বন্ধ, ৫ মের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত, মুফতি ওয়াক্কাসসহ গ্রেপ্তার হওয়া নেতা-কর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার, ১৩ দফা বাস্তবায়ন, মাদ্রাসার ছাত্র কমানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্য প্রত্যাহার, নারী উন্নয়ন নীতিমালার কোরআন-সুন্নাহবিরোধী ধারাসমূহ বাতিলসহ আট দফা দাবি উত্থাপন করেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব ছলিম উল্লাহ। এর আগে সম্মেলনে আহমদ শফীর লিখিত একটি বক্তব্য পড়ে শোনান তাঁর প্রেস সচিব মনির আহমদ।
সম্মেলনে ২০১ সদস্যের অভিভাবক পরিষদ ও ২৫ সদস্যের একটি উপকমিটি গঠন করা হয়। এ ছাড়া এর আগে করা সাংগঠনিক কমিটি বহাল আছে বলে জানিয়েছেন হেফাজতের আমিরের প্রেস সচিব আহমদ।