১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোতে প্রকাশিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র-সংক্রান্ত দুটি প্রতিবেদন সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
ব্যাখ্যায় ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তুতি নিয়ে সন্তুষ্ট নয় রাশিয়া’ কথাটি তথ্যভিত্তিক নয় বলে দাবি করে প্রস্তুতিমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয়েক্সপোর্টের সন্তোষের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রস্তুতিমূলক কাজে রাশিয়ার কাছ থেকে নেওয়া ৫০ কোটি ডলার ঋণ নিয়ে প্রশ্ন ওঠার বিষয়টিও তথ্যভিত্তিক নয় বলে দাবি করা হয়েছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, মস্কোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাইফুল হক রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে গত আগস্টে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আলেক্সান্ডার মানতিৎস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠকে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার নিকোলায়েভকে উদ্ধৃত করে বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তুতিমূলক কাজে রাশিয়ার কাছ থেকে নেওয়া ৫০ কোটি ডলার ঋণের কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সন্তোষজনক নয়। ঢাকায় পরমাণু তথ্যকেন্দ্র স্থাপন কাজের অগ্রগতি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অনুযায়ী এগোচ্ছে না। এসব বিষয়সহ নানা কারণে বাংলাদেশে পুতিনের সফর আয়োজন সম্ভব নয়। কাজেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তুতি নিয়ে রাশিয়া সন্তুষ্ট নয় বলে প্রতিবেদনে উল্লিখিত বক্তব্য সম্পূর্ণ তথ্যভিত্তিক। বরং মন্ত্রণালয়ের দাবি অসত্য।
মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, পুতিনের প্রতিনিধি হিসেবে একজন মন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করবেন বলে ধারণা পাওয়া গেছে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবারও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২ অক্টোবর রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে রাশিয়ার কোনো মন্ত্রী আসার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি।
প্রস্তুতিমূলক কাজের জন্য আনা ৫০ কোটি ডলার ঋণ কোন খাতে কত খরচ হবে, তা নির্ধারণ করা হয়নি বলে প্রশ্ন তুলেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো। তাই এ ঋণের ব্যাপারে সরকারের মধ্যেই প্রশ্ন রয়েছে।
‘প্রস্তুতি ছাড়াই শুরু হচ্ছে কাজ’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিও তথ্যভিত্তিক নয় বলে উল্লেখ করে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রক্রিয়ায় আইএইএর মাইলস্টোন অনুসরণ, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় কমিটিসহ একাধিক কমিটি, ওয়ার্কিং গ্রুপ ও সাব গ্রুপ গঠনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
কিন্তু প্রথম আলোর প্রতিবেদনে তথ্যকেন্দ্র স্থাপন, পিপলস কমিটি গঠনসহ কিছু প্রাথমিক ও অপরিহার্য কাজ করা হয়নি বলা হয়েছিল। সেগুলো সম্পূর্ণ তথ্যভিত্তিক। যেগুলো করা হয়েছে তার সঙ্গে এগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই। তা ছাড়া উল্লিখিত কমিটি, ওয়ার্কিং গ্রুপ ও সাব গ্রুপগুলোতে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন সম্পর্কে অভিজ্ঞ লোকের অভাব সম্পর্কে যে তথ্য প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে, তা-ও তথ্যভিত্তিক।
ব্যাখ্যায় দাবি করা হয়েছে, কাজের প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকায় রুশ সরকার নাখোশ এ কথা অবাস্তব। এ বিষয়ে ওপরের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, কথাটি অবাস্তব নয়।
ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, রাশিয়ার কাছ থেকে ঋণ আনা অত্যন্ত কঠিন কাজ। সে জন্য বহু লোক মিলে অনেকবার রাশিয়া ভ্রমণের দরকার ছিল। আর প্রকল্প এলাকা রূপপুরে হেলিকপ্টারে করে যাওয়া হয়েছে একবার। তা ছাড়া ৫০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধে পাঁচ বছর ‘গ্রেস পিরিয়ড’ থাকায় কার্যত সময় পাওয়া যাবে ১০ বছর।