বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজ পেতে বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের ঘুষ দেয়ার দায়ে কানাডীয় নির্মাণ প্রকৌশলি কোম্পানি এসএনসি-লাভালিনের সাবেক এক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করেছে পুলিশ।
পদ্মা সেতু দুর্নীতির তদন্তকারী রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (আরসিএমপি) যেসব ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করেছে তারা হলেন- এসএনসি-লাভালিনে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস, কানাডার নাগরিক জুলফিকার আলী ভূঁইয়া ও আবুল হাসান চৌধুরী। এসএনসি-লাভালিনের সাবেক দুই কর্মকর্তা রমেশ শাহ ও মোহাম্মদ ইসমাইলের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করছে আরসিএমপি। তাঁদের বিরুদ্ধে কানাডার আদালতে একটি মামলাও চলছে।
ফিন্যান্সিয়াল পোস্ট ও সিবিসি নিউজসহ কানাডার সংবাদপত্রগুলোর অনলাইন সংস্করণে গতকাল এই খবর প্রকাশিত হয়। তবে, সিবিসি ছাড়া আর কোনো পত্রিকা আবুল হাসান চৌধুরীর পরিচয় তুলে ধরেনি। সিবিসি বলেছে, আবুল হাসান চৌধুরী বাংলাদেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ লবিস্ট এবং সরকারের সাবেক একজন কর্মকর্তা বা মন্ত্রী। ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। অন্যদিকে জুলফিকার আলী ভূঁইয়াকে একজন ব্যবসায়ী বলা হয়েছে, যাঁর বাংলাদেশে ব্যবসা রয়েছে।
কানাডার ‘বিদেশে ঘুষ প্রদান আইন’ অনুযায়ী গত মঙ্গলবার কেভিন ওয়ালেসকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার আদালতে হাজিরা দেয়ার শর্তে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজের দরপত্রের বিষয়টি দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল কেভিনের।
দুদকের করা মামলায় আবুল হোসেন চৌধুরীর সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে বলা হয়েছে, এসএনসি-লাভালিনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের সাক্ষাতের ক্ষেত্রে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী যোগাযোগ স্থাপনকারীর ভূমিকা পালন করেন। রমেশ শাহর নোটবুকে এই দুই সাবেক মন্ত্রীর নাম রয়েছে। তবে, অপরাধ সংঘটনে মো. আবুল হাসান চৌধুরী ও সৈয়দ আবুল হোসেনের অপরাধ-সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি তদন্তকালে খতিয়ে দেখা হবে। এ যুক্তি দেখিয়েই এ দু’জনের বিরুদ্ধে মামলা করেনি দুদক।
এসএনসি-লাভালিনকে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে বিশ্বব্যাংক। এর ফলে আগামী ১০ বছর বিশ্বব্যাংকের কোন নির্মাণ প্রকল্পের দরপত্রে অংশ নিতে পারবে না তারা। এসএনসি-লাভালিনের সঙ্গে বাংলাদেশের পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়া নিয়ে দুর্নীতির যোগসাজশ রয়েছে বলে বিভিন্ন রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এ সেতুর কাজ পাওয়া নিয়ে ঘুষ বিনিময়ের অভিযোগ এ প্রকল্পে কর্মরত থাকা দু’ বাংলাদেশীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন থেকে সরে যায় বিশ্বব্যাংক।