ফেলানী হত্যার সুবিচার পাওয়া যায়নি : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

0
110
Print Friendly, PDF & Email

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেছন, সীমান্তে ফেলানী হত্যার সুবিচার পাওয়া যায়নি। এ ঘটনা দুদেশের জন্য লজ্জা ও দুঃখজনক। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ফেলানী হত্যার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যনা ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, ফেলানীর বিচারের নামে পুরো জাতির সঙ্গে তামাশা করা হয়েছে। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে মারা যায় কুড়িগ্রামের মেয়ে ফেলানী। শুক্রবার ভারতীয় বিএসএফের একটি আদালতে ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষে একমাত্র অভিযুক্তকে খালাস দেয়া হয়। যুগান্তর রিপোর্টার ও প্রতিনিধির পাঠানো খবর-
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : ফেলানীর ঘটনা দুই দেশের জন্য লজ্জা ও দুঃখজনক ঘটনা। আমরা ভারতের কর্তৃপক্ষের কাছে যথাবিহিত প্রতিকার চেয়েছিলাম ফেলানী হত্যার। তারা বিএসএফের আইন অনুযায়ী সীমান্তরক্ষীদের আদালতে তা উত্থাপন করেছিল। আদালত প্রাথমিক পর্যায়ে যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, ফেলানীর ব্যাপারে আমরা যে সুবিচার আশা করেছিলাম সে সুবিচার এখনও পাওয়া যায়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর শনিবার কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী থানা ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ফেলানী হত্যা মামলার রায়সংক্রান্ত বিস্তারিত বিবরণ এখনও পাওয়া যায়নি। তা পেলে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। দুপুর সাড়ে ১২টায় নাগেশ্বরী পৌর মিলনায়তনে কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার সঞ্জয় কুমার কুণ্ডুর সভাপতিত্বে এক সুধি সমাবেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন। এসময় আরও বক্তৃতা করেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ জাফর আলী, কুড়িগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজার রহমান, পুলিশের ডিআইজি (হেডকোয়ার্টার ফাইন্যান্স অ্যান্ড বাজেট) আবুল কাশেম, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি ইকবাল বাহার চৌধুরী, কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক এবিএম আজাদ, বিশিষ্ট শিল্পপতি গোলাম মোস্তফা (সিআইপি), উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোজাম্মেল হক প্রধান প্রমুখ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেলা আড়াইটায় নাগেশ্বরী উপজেলার দুর্গম সীমান্তবর্তী কচাকাটা পুলিশ থানার নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে পার্শ্ববর্তী কচাকাটা ডিগ্রি মহাবিদ্যালয় মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন।
আইনমন্ত্রী : এদিকে ফেলানী হত্যা মামলার রায়ের বিরুদ্ধে সুযোগ থাকলে আপিল করার আহ্বান জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। তিনি বলেছেন, ভারতের আইন ও বিধি অনুসারে বিচারটি হয়েছে। রায়ে সংক্ষুব্ধরা যদি মনে করে বিচার সুষ্ঠু হয়নি তাহলে আপিলের বিধান থাকলে আপিল করা উচিত। শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আইন মন্ত্রণালয় আয়োজিত শিশু আইন ২০১৩ শীর্ষক এক কর্মশালা শেষে তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন।
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ফেলানীর স্বজনদের প্রত্যাশা ছিল ফেলানীর প্রতি যে অবিচার করা হয়েছে তার সঠিক বিচার হবে। কিন্তু আমরা জেনেছি ফেলানীর বাবা এ রায়ে সংক্ষুব্ধ হয়েছেন। তবে আপিলের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আইন মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়। বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে। সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে দুই দেশেরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
অপরদিকে কর্মশালায় আইনমন্ত্রী বলেন, অপরাধের সঙ্গে শিশুদের সম্পৃক্ততা স্ব-উদ্যোগে হয় না। শিশুদের ব্যবহার করা হয়। মাদক, সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে বলে দাবি করেন মন্ত্রী। এছাড়া কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন, আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাভোকেট কামরুল ইসলাম, ইউনিসেফের শিশু সুরক্ষা বিভাগের প্রধান রোজ অ্যানি পাপাভেরো। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত সচিব নাসরিন বেগম।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান : অপরদিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, ফেলানী হত্যার বিচারের নামে পুরো জাতির সঙ্গে তামাশা করা হয়েছে। এ রায় অনভিপ্রেত ও অনাকাক্সিক্ষত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ভারত সরকারের কাছে এ রায়ের প্রতিবাদ জানানোর আহ্বানও জানান তিনি। শনিবার রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও অপপ্রচার শীর্ষক এক আলোচনাসভা শেষে সাংবাদিকরা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশী কিশোরী ফেলানী হত্যার রায় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি এসব কথা বলেন। এ রায় আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম: ওদিকে ফেলানী হত্যার বিচারকার্যে আন্তর্জাতিক মহলকে সংযুক্ত করা হলে ওই বিশেষ আদালত স্বচ্ছতার পরিচয় দিত বলে মন্তব্য করেছে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম। শনিবার সংগঠনটির সভাপতি শামা ওবায়েদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফেলানীর নির্মম মৃত্যু আন্তর্জাতিক বিশ্বে একটি বহুল আলোচিত এবং নিগৃহীত ঘটনা।
জনদুর্ভোগ নির্মূল জাতীয় কিমিটি : অন্যদিকে ফেলানী হত্যা মামলার রায়ে বিচারের নামে অবিচার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ জনদুর্ভোগ নির্মূল জাতীয় কিমিটি। শনিবার সংগঠনের নেতারা লিখিত এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন। বিবৃতিদাতারা হলেন- সংগঠনের সদস্য সচিব আবদুর রশিদ, বাচ্চু বেপারী, আলাউদ্দিন খাঁ, মোস্তাফিজুর রহমান সুমন, আমিনুল ইসলাম প্রিন্স, আফজাল হোসেন, মিঠুন প্রমুখ।
চরমোনাইর পীর : বাংলাদেশের বন্ধু হওয়ার উপযুক্ত নয় ভারত। সামান্যতম মানবাধিকার ভারত সরকারের নীতিতে থাকলে ফেলানী হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি বিশ্ববাসী দেখতে পেত। সীমান্তের কাঁটাতারে বিএসএফের গুলিতে নিহত ফেলানীর ঝুলন্ত লাশ দীর্ঘ সময় ঝুলে থাকতে দেখেছে বিশ্ববাসী। অথচ ভারতে গঠিত আদালত দোষীকে সম্পূর্ণ নির্দোষ হিসেবে রায় দিয়েছেন। যারা এরপরও ভারতকে বন্ধু বানাবে তারা দেশ ও জনগণের শত্র“। ইসলামী আন্দোলনের আমীর ও চরমোনাইর পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম শনিবার এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।

শেয়ার করুন