আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের অপতৎপরতা রোধে আগামী সপ্তাহে সারাদেশে বিশেষ অভিযান শুরু হচ্ছে। অভিযানের সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে থাকছে প্রায় ১০ হাজার দুর্ধর্ষ অপরাধী ও জঙ্গির নাম-ঠিকানা। এই তালিকায় আছে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের একাধিক নেতার নামও। তার পাশাপাশি হেফাজতে ইসলাম ও তাদের আশ্রয়দাতা সাতটি ইসলামী দলের নেতাদের নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। বিশেষ অভিযানের মূল লক্ষ্য, অপরাধী ধরার পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা। তাছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অপরাধীদের অবাধ বিচরণ ও বিরোধী জোটের আন্দোলনের নামে যাতে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড না হয় সে জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিশেষ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু যুগান্তরকে জানিয়েছেন, অভিযান বলতে কিছু নেই। অপরাধীদের ধরতে সব সময়ই চেষ্টা চলে। তবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ঢাকাসহ সারাদেশে একটি বিশেষ অভিযান চালানো হবে। এ জন্য পুলিশ সদর দফতরকে কিছু দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আশা করি আগামী সপ্তাহ থেকে ওই অভিযানটি শুরু হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের নেতাদের দমন-পীড়নের জন্য অভিযান নয়। জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের ধরতেই এই অভিযান। এ ব্যাপারে প্রতিমন্ত্রী সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, হঠাৎ করে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে। আগের চেয়ে খুনখারাবির ঘটনা বেড়ে গেছে। তাছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা তো রয়েছেই। বিশেষ করে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। দিন দিন আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। পুরনো সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি নতুন নতুন অপরাধীর আনাগোনা বেড়েছে। হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে চুরি, ডাকাতি, অপহরণসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের ঘটনা ঘটেই চলেছে। আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করে চলেছেন। মন্ত্রণালয়ে সর্বশেষ বৈঠক হয় গত সপ্তাহে। ওই বৈঠকে র্যাব ও পুলিশের পাশাপাশি সবক’টি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে রাখা, গ্রেফতার, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক দ্রব্য উদ্ধার করতে সারাদেশে বিশেষ অভিযান চালানো হবে। তবে অভিযানের কোনো নাম থাকবে না। এলাকাভিত্তিক অপরাধীদের তালিকা হালনাগাদ করা হবে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পেয়ে পুলিশ সদর দফতর মেট্রোপলিটন এলাকার পুলিশ কমিশনার ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়। বার্তা পেয়ে পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তারা নড়েচড়ে বসেন। অপরাধীদের পুরনো তালিকাগুলো হালনাগাদ করার নির্দেশ দেয়া হয় ওসিদের। ইতিমধ্যে তালিকা হালনাগাদও করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, আগামী সপ্তাহে সারাদেশে বিশেষ অভিযান শুরু হবে। ইতিমধ্যে কয়েকটি স্থানে অভিযান চলছে। কিন্তু আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। তালিকায় প্রায় ১০ হাজার দুর্ধর্ষ অপরাধী ও জঙ্গির নাম রয়েছে। তার পাশাপাশি কিছু রাজনৈতিক নেতারও নাম রয়েছে। তবে তারা দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা নয়। তারা ওয়ার্ডভিত্তিক নেতা। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের লালন-পালন ও ইচ্ছাকৃতভাবে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, চিহ্নিত সন্ত্রাসী, অবৈধ অস্ত্রধারী, মাদক বিক্রেতা, ডাকাত গ্র“প, পরিবহন চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, গার্মেন্ট সেক্টরে চাঁদাবাজি, ঝুট ব্যবসায়ী ও ছিনতাইকারীসহ একাধিক ক্যাটাগরির অপরাধীর বিরুদ্ধে এই অভিযান।
গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, গতানুগতিক যে অভিযান চলে আসছে তা অব্যাহত আছে। অপরাধী গ্রেফতার, আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করতে পুলিশ সদর দফতর একটি বিশেষ অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছে। আশা করি আগামী সপ্তাহে তা শুরু হবে।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ সদর দফতর থেকে বিশেষ অভিযান পরিচালনার জন্য একটি চিঠি পাঠিয়েছে। আমার এলাকায় অভিযান শুরু হয়েছে।
তালিকাভুক্ত : তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের পারিবারিক পরিচয়, তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, কোন থানায় কয়টি মামলা, বড় ধরনের অপরাধ করে গ্রেফতার হয়েছে কিনা এবং রাজনৈতিক পরিচয়, কবে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে তা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তালিকার মধ্যে সর্ব শীর্ষে রয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকা। তারপর সিএমপি। তালিকাভুক্তদের মধ্যে গুলশানের চঞ্চল, রাকিব, হায়দার আলী, কবির গাজী, হোসেন গাজী, রাজ্জাক, সাত্তার, আজিজ ওরফে রুবেল, শফিক সর্দার, রাকিবুল হাসান পলাশ, বাড্ডার আবু হায়দার বাবু, জয়নাল, খলিল, সৈয়দ আসিফ ওরফে ইন্ডিয়ান বাবু, জাকির হোসেন ওরফে রুপক, ইমরান, মাইনুল হোসেন ওরফে সুমন ওরফে বিমান সুমন, আমিনুল ইসলাম ওরফে সুমন, মাসুম, রবিউল, কাবিল, কোতোয়ালির-রফিকুল ইসলাম কাজল, সাব্বির, মিন্টু ঘোষ, খোকন ওরফে কাইল্লা খোকন, হাবিব ওরফে টাইগার হাবিব, বাবুল, সাঈদ আহম্মদ রানা, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে নুর উত্তম সাহা ওরফে আসিক ওরফে রবিন, অহিদ শেখ, বাছির, ময়না, নজরুল ইসলাম ওরফে খুকুমনি, গোজা ফরিদ, মোশারফ হোসেন, আবদুল জব্বার মুন্না, ফাত্তা মিয়া, চায়না বাবু, আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে বড় বাবু, শামীম আহম্মদ ওরফে ভুট্টু, মিরপুর, কাফরুল ও ক্যান্টমেন্টে আব্বাস উদ্দিন ওরফে কিলার আব্বাস, বাবু, মুছা, কানা সেলিম, হালিম ওরফে ওবাইদুর রহমান, হাবিবুর রহমান ওরফে তাজ, মরন ওরফে মিলন, সোহরাব হোসেন ওরফে শাহীন ওরফে মেজর, ইব্রাহিম, মিজান ওরফে পেটকাটা মিজান, হৃদয় প্রমুখ।