শিক্ষকের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক দেখে ফেলায় কাফরুলে ছাত্র খুন

0
215
Print Friendly, PDF & Email

রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় গত বৃহস্পতিবার উদ্ধার হওয়া বস্তাবন্দি লাশের পরিচয় মিলেছে। উদ্ধার করা লাশের পরিচয় সজল চন্দ্র মজুমদার (১৭)। সে উত্তর কাফরুল উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল। এক মহিলার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের কথা ফাঁস হওয়ার ভয়ে কোচিং শিক্ষক সবুজ সূত্রধর তাকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ সজলের পরিবারের। পুলিশ সবুজকে গ্রেফতার করেছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে ওই মহিলাকেও।
সজলের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন থানার বড় মানিকদা গ্রামে। নদীভাঙ্গনের কারণে ওই বাড়ি এখন নেই। ঢাকার উত্তর কাফরুল এলাকায় ১২৬৮ নম্বর কচুক্ষেত বাজারের বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকত সে। সেলুন দোকান থেকে বাবার অর্জিত টাকায় চলত তাদের পরিবার। এক ভাই এক বোনের মধ্যে সজল বড় ছিল।  
 সজলের বাবা শ্যামল চন্দ্র শীল বলেন, গত ২৮ আগস্ট হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্মাষ্টমি ছিল। এ উপলক্ষে বাসায় বিভিন্ন রকমের খাবার তৈরি হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কিছু খাবার নিয়ে আরেক আত্মীয়র বাসায় যায় সজল। সেখান থেকে ফিরে বাসায় গেইট দিয়ে ঢোকার সময় কেউ একজন তাকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তিনি জানান, রাত ৮টার দিকে একটি অপরিচিত মোবাইল থেকে সজলের কোচিং শিক্ষক সবুজ সূত্রধর তাকে ফোন করে জানান- সজল তার কাছে আছে। ফেরত পেতে ৫০ হাজার টাকা লাগবে। বিকাশের মাধ্যমে তাকে টাকা দেয়ার জন্য বলা হয়। ওই রাতেই বিষয়টি কাফরুল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন সজলের মা সুচিত্রা রানী। পরদিন অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে থানায় মামলা করেন বাবা শ্যামল চন্দ্রশীল।
 
নিখোঁজের পরদিন গত বৃহস্পতিবার ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের মাটিকাটা বাজার এলাকা থেকে সজলের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশ। তার পরনে কালো গেঞ্জি ও থ্রি কোয়াটার প্যান্ট ছিল। তখন পর্যন্ত পুলিশ সজলের পরিচয় পায়নি। বুধবার কাফরুল থানা থেকে সজলের লাশের খবর পায় তার পরিবার। বৃহস্পতিবার সকালে তার বাবাসহ অন্যান্য আতœীয়-সজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে যেয়ে তার লাশ সনাক্ত করেন।
এদিকে কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, বুধবার রাতে সবুজ সুত্রধরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি হত্যার কথা শিকার করেছেন। মায়ের অপারেশনের টাকার জন্য তিনি এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ মো. মনিরুজ্জামান বলেন, প্রীতির সঙ্গে সবুজের অবৈধ সম্পর্ক ছিল, এটি সত্য। আরো একাধিক মহিলার সঙ্গেও তার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু সবুজ বলছেন মায়ের চিকিৎসার জন্য টাকা দরকার, তাই সজলকে অপহরণ করা হয়। পরে হত্যা করে।
ওসি জানান, উত্তর কাফরুলে ফ্যান্টাসি এডুকেশন কেয়ার নামে একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করতেন সবুজ। তার বাবা জন্ম থেকে বোবা। মায়ের কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। তার অপারেশনের জন্য টাকা দরকার। সজলকে প্রথমে হত্যার উদ্দেশ্য ছিল না তার। কিন্তু সজল যেহেতু তাকে চেনে, ছেড়ে দিলে সব বলে দিবে। এজন্য পরিবারের পক্ষ থেকে টাকা না পেয়ে তাকে হত্যা করা হয়। প্রথমে জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়। তারপর বালিশচাপা দিয়ে শাস্বরোধ করে হত্যা করা হয় বলে জানান ওয়াজেদ আলী। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রীতিকেও আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি ওয়াজেদ। তবে তাকে ছাড়িয়ে নিতে থানায় জোর তদবির চলছে বলে জানা গেছে।
নিহতের বাবা শ্যামল চন্দ্রশীল জানান, তার ছেলে কোচিং শিক্ষক সজুব সুত্রধরের কাছে পড়ত। প্রীতি ওরফে মর্জিনা নামের আরেক বিবাহিত মহিলা ওই শিক্ষকের কাছে পড়তেন। তার সঙ্গে শিক্ষকের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। সজল তাদের অবৈধ সম্পর্ক দেখে ফেলে। বিষয়টি চেপে রাখতে শিক্ষককে দিয়ে ওই মহিলা সজলকে খুন করায়। সজলের বাবা বলেন, তার ছেলেকে খুন করতে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা সবুজকে প্রীতি দিয়েছিলেন বলে তিনি শুনেছেন।

শেয়ার করুন