জোটবদ্ধ নির্বাচনের কথা বলা হলেও আওয়ামী লীগ শরিকদের রেখে একাই আগাম নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার মধ্য দিয়ে রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী নির্বাচনের জন্য আগাম ভোটও চেয়েছেন দেশবাসীর কাছে। নির্বাচন বিষয়ে মহাজোটের প্রধান শক্তি আওয়ামী লীগের একক প্রচারণায় শরিকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তবে আগে থেকেই নানা কারণে শরিক দলগুলো আওয়ামী লীগের ওপর ক্ষুব্ধ। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ইতোমধ্যে তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে জোটের বাইরে গিয়ে একক নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে। আগাম নির্বাচনী প্রচারণার জন্য আওয়ামী লীগের ১৫টি টিম ১ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশে সাংগঠনিক সফর শুরু করেছে। এই টিমগুলো সাধারণ মানুষের কাছে দলের পক্ষে পুনরায় ভোট প্রার্থনার পাশাপাশি নির্বাচনী আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে কে এগিয়ে বা কে পরিচ্ছন্ন ইমেজের তাও খুঁজে বের করে দলীয় সর্বোচ্চ ফোরামে তুলে ধরবে। মাঠ পর্যায়ের এই প্রতিবেদন বিবেচনা করার জন্য অক্টোবরের প্রথম দিকেই দলটির সংসদীয় বোর্ড বৈঠক করে দলের ৩০০ আসনের খসড়া প্রার্থী তালিকা করবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এদিকে জোটের শরিকদের অভিযোগ, আগামী নির্বাচনে জোটগতভাবে যাওয়ার কথা থাকলেও প্রচারণায় ঠাঁই পায়নি তারা। এ কারণে অনেকটাই হতাশা প্রকাশ করেছেন মহাজোটের একাধিক শীর্ষ নেতা। তাদের অভিযোগ, আগামী নির্বাচনে মহাজোটের শরিকদের নিয়ে অংশগ্রহণের কথা থাকলেও আওয়ামী লীগ ‘একলা চলো নীতিতে’ প্রচারণা শুরু করেছে। ১৪ দলের নেতারা আওয়ামী লীগের এককভাবে নির্বাচনী প্রচারণার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ও হতাশ। বিএনপির নেতৃত্বে ১৮ দল যেভাবে সরকার ও ১৪ দলের বিরুদ্ধে নেমেছে তাতে আওয়ামী লীগের একার পক্ষে মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে উঠবে। ১৪ দলসহ সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে সারাদেশে নির্বাচনী প্রচারণায় নামা উচিত ছিল আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগ একক প্রচারণায় নেমে মোটেই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়নি। শরিক দলের নেতাদের দাবি, আওয়ামী লীগ এককভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে বিরোধী শক্তির সামনে মুখ থুবড়ে পড়বে। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন জানান, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর জোটগতভাবে প্রচারণা করা হবে। এখন যেটা করা হচ্ছে তা শুধু আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সফর। আমরা এ সফরের মধ্য দিয়ে দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। নেতাকর্মীদেরও সে অনুযায়ী পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে সফর শেষে শরিকদের সঙ্গে মনোনয়ন নিয়ে বৈঠক করা হবে বলেও জানান তিনি। মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা জানান, আমরা এখনও মহাজোটেই আছি। আওয়ামী লীগ নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছে এটি তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। যেকোনো দলই তাদের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে পারে। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় হলে আমরা দলীয় ফোরামে আলোচনার পরই সিদ্ধান্ত নেব জোটগত নাকি এককভাবে নির্বাচন করব। আমাদের দলীয় চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই আমাদের দলের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সফরের বিষয়ে মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিক জানান, আমরা তাদের এ সফরের বিষয়ে কিছুই জানি না। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনাই করেনি। তিনি বলেন, সরকারের যেসব কর্মকাণ্ড নিয়ে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে তা আওয়ামী লীগ এককভাবে কাটিয়ে তুলতে পারলে ভালো। না হলে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। আরও বেড়ে যাবে।