নেতৃত্বের শূন্যতায় বিপর্যস্ত জামায়াত

0
213
Print Friendly, PDF & Email

মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ ১০ নেতা কারাগারে। একাধিক মামলার ফেরারি আসামি দলের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমদ ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। দল চালাচ্ছেন তৃতীয় ও চতুর্থ সারির নেতারা। ভারপ্রাপ্ত শীর্ষ নেতারাও খুব একটা প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না। তার মধ্যে আবার আদালত অবমাননা মামলায় দুই মাসের জেল দেওয়া হয়েছে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলসহ দলীয় একজন এমপিকে। অন্যদিকে- সারা দেশে হাজার হাজার নেতা-কর্মী কারারুদ্ধ। মামলা হয়েছে কয়েক লাখ কর্মীর নামে। সহিংস হরতাল-আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছে দুই শতাধিক। ফলে দলের সর্বস্তরে নেতৃত্বের যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে- জামায়াত তা পূরণ করতে পারছে না কিছুতেই।

জানা যায়, দলটির ২১ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের ১২ জন কারাগারে, সাতজন বিভিন্ন মামলার আসামি হয়ে আত্দগোপনে। দলের ঢাকা মহানগর কমিটির সবাই আত্দগোপনে। সারা দেশে কার্যালয় বন্ধ। ঈদের পর কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না ভারপ্রাপ্তরা। মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দলটির সাবেক শীর্ষ ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক গোলাম আযম, বর্তমান নেতা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মাওলানা আবদুস সোবহান, মুহম্মদ কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লা, এটিএম আজহারুল ইসলাম, মীর কাসেম আলী ও মাওলানা ইউসুফের বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। ইতোমধ্যে মাওলানা সাঈদী, কামারুজ্জামান ও মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড, কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন ও অধ্যাপক গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও জামায়াত শিবিরের শত শত নেতা-কর্মী এখনো কারাগারে বন্দী। দেশব্যাপী অব্যাহত ধরপাকড়ের কারণে সক্রিয় নেতা-কর্মীরাও এখন আত্দগোপনে। দলীয় কার্যালয় দূরের কথা, বাসা-বাড়ি, ব্যক্তিগত অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও যেতে পারছেন না। ঝটিকা মিছিল, ভাঙচুর ছাড়া চলছে না প্রকাশ্য কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম। নিত্যনতুন কৌশল নির্ধারণ করেও খুব সুবিধা করতে পারছে না দায়িত্বপ্রাপ্তরা। সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে অনেকে বিদেশ পাড়ি জমাচ্ছেন। কেউ কেউ বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি নিচ্ছেন। এ অবস্থায় দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির কারণে গত ১৩ ও ১৪ আগস্ট দুই দিনের হরতালে রাজধানীসহ সারা দেশে কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া কোথাও শক্তি প্রদর্শন করতে পারেনি জামায়াত-শিবির। এরপর আর নতুন কোনো কর্মসূচি দিতে পারছে না। জামায়াতের তথ্য অনুযায়ী, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ৫৬ মাসে বিভিন্ন অভিযোগে দায়ের করা ২৭ হাজারের মতো মামলায় দলটির ৫ লাখ ২০ হাজার নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে সারা দেশে গ্রেফতার হয় ৪৫ হাজার নেতা-কর্মী। এ ছাড়াও গ্রেফতার আতঙ্কে ঘরছাড়া সারা দেশের অধিকাংশ সক্রিয় নেতা-কর্মী। ঝটিকা মিছিল, হামলা, ওয়েবসাইট, ই-মেইল এবং এসএমএস তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর প্রধান মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবমিলিয়ে রাজনৈতিকভাবে জামায়াত গভীর সংকটে পড়ছে। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার জন্য উচ্চ আদালতে করা রিটের রায় জামায়াতের বিপক্ষে গেলে দলটি পুরোপুরি বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। কিন্তু ভারপ্রাপ্তরা নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণসহ ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ করতে পারছে না। এদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমদ ও কেন্দ্রীয় নেতা শফিকুল ইসলাম মাসুদ একাধিক মামলার আসামি হওয়ায় দলের অনেক কর্মসূচিতেই আর অংশ নিতে পারছেন না। ফলে তাদের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট শূন্যতা দেখা দিয়েছে।

তবে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ এমপি বলেন অন্যকথা। তিনি বলেন, জামায়াতের একজন কর্মীও দল পরিচালনা করতে সক্ষম। কাজেই দলে কোনো নেতৃত্বের শূন্যতা নেই। তিনি বলেন, সরকার শুরু থেকেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় জামায়াত-শিবিরের ওপর নানাভাবে অন্যায় আচরণ করেছে। কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশের কোথাও জামায়াতকে প্রকাশ্যে সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক তৎপরতা চালাতে দিচ্ছে না সরকার। এমনকি ঘরোয়া সভা-সমাবেশকে গোপন বৈঠক উল্লেখ করে পুলিশ হয়রানি করছে অহরহ। যা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক এবং অগণতান্ত্রিক আচরণের বহিঃপ্রকাশ।

শেয়ার করুন