আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। ভিড় বাড়ছে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে। মধ্যরাত পর্যন্ত পরিচিত-অপরিচিত ব্যক্তিদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর মধ্যে অধিকাংশই ব্যবসায়ী, সামরিক-বেসামরিক সাবেক আমলা। অবশ্য দলের তৃণমূলের নেতারাও বসে নেই। তারাও গুলশান কার্যালয়ের পাশাপাশি যোগাযোগ রাখছেন প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে। দলের স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে সিনিয়র নেতাদের বাসায়ও এখন নেতা-কর্মীরা যাতায়াত করছেন। আবার অনেকে মনোনয়ন পেতে লন্ডনে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। গত দুই মাসে শতাধিক নেতা লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করে এসেছেন। এখনো কয়েকজন নেতা লন্ডনে অবস্থান করছেন। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা আগামীতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে এখনো আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তাতে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তারপরও নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে বিএনপি। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তাতে অংশ নেওয়ার জোর প্রস্তুতি চলছে। এক্ষেত্রে সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা দলের টিকিট পেতে যার যার মতো করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সংস্থার করা জনপ্রিয়তার জরিপে এগিয়ে আছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পৃথক জরিপে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিএনপির অবস্থান খুবই ভালো। এসব রিপোর্ট বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে নিজেদের করা বিভিন্ন পর্যায়ের জপিরের দিক থেকেও জনপ্রিয়তায় এগিয়ে রয়েছে বিএনপি। এসব বিবেচনায় দলীয় নেতাদের ছাড়াও একটি সুবিধাভোগী শ্রেণী বিএনপির প্রতি ঝুঁকে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে উচ্চবিত্ত ব্যবসায়ী, সরকারি-বেসরকারি সাবেক কর্মকর্তা, সাবেক সচিব, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ রয়েছেন। জানা গেছে, বিএনপিও দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী বাছাইয়ে পাঁচটি জরিপ চালিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৬০টি আসন ছেড়ে দিয়ে ২৪০টি আসনে দলের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকা করা হয়েছে। ওই ৬০টি আসন ১৮ দলসহ জোটে যোগ দেওয়া অন্যদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে। জরিপের একটি সাবেক সামরিক কর্মকর্তাদের মাধ্যমে, একটি সাবেক সচিবদের মাধ্যমে, একটি বেগম জিয়া দলীয়ভাবে আর অন্য দুটি তারেক রহমান নিজেই বিভিন্ন মাধ্যমে করেছেন। তাতে প্রতিটি আসনে পরপর তিন থেকে পাঁচজনকে প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে। বাছাইয়ের তালিকায় বিএনপির ত্যাগী, যোগ্য ও তারুণ্যনির্ভর দক্ষ নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। মনোনয়ন পেতে দলের বাইরেও অনেকেই বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগ করছেন।
নেতাদের লন্ডন মিশন : জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে তারেক রহমানের সুদৃষ্টি কামনায় লন্ডনে যাচ্ছেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী বিভাগের বেশ কয়েকজন নেতা ইতোমধ্যেই দেখা-সাক্ষাৎ করে এসেছেন। এখনো কেউ কেউ লন্ডনে অবস্থান করছেন। খুব শীঘ্রই আরও কয়েকজন নেতার লন্ডনে যাওয়ার কথা রয়েছে। তারেক রহমানের নিজের করা দুটি জরিপের ভিত্তিতে কাউকে কাউকে ডেকে পাঠাচ্ছেন। সাড়ে তিনশর একটি তালিকা করে তারেক রহমান নিজেই অনেককে লন্ডনে ডেকে কথা বলছেন। গত দুই মাসে অন্তত শতাধিক নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেন বলে জানা গেছে।
আশ্বাস দিচ্ছেন বিএনপির প্রভাবশালীরাও : জানা যায়, আগামী নির্বাচনে প্রার্থী নিয়ে দলীয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না দিলেও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মৌখিক আশ্বাস দিচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতারাও। স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে ভাইস চেয়ারম্যানসহ সিনিয়র নেতারা নিজ নিজ জেলার সম্ভাব্য নেতাদের প্রার্থী করতে নানাভাবে আশ্বাস দিচ্ছেন। আর এতেই খুশি মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তৃণমূলে গিয়ে নিজের সমর্থক কর্মীদের মধ্যে নিজের সুখবরটি ফলাও করে প্রকাশ করছেন তারা। অবশ্য দলের প্রার্থী করার আশ্বাসে অনেকের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনেরও অভিযোগ আসছে। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেশ কয়েকটি জেলা সফর করে দলের বেশ কয়েকজন প্রার্থীর নাম জনসমাবেশে তুলে ধরে তাদের জন্য ভোট চান। আগামী মাসে খালেদা জিয়ার বিভাগীয় সফরেও অনেক মনোনয়ন প্রার্থীর নাম ঘোষণা হতে পারে। এ ছাড়া জরিপে জনপ্রিয়তার দিক থেকে এগিয়ে থাকা তৃণমূলের অনেক নেতাকে গুলশান কার্যালয়ে ডেকে এনে বিএনপি চেয়ারপারসন নিজেও কথা বলছেন বলে জানা গেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনমুখীও। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি অবশ্যই তাতে অংশগ্রহণ করবে। বিএনপি চেয়ারপারসনসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলা সফরে সাংগঠনিক ভিত শক্তিশালী করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টিও বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মাথায় রয়েছে। তবে এসব বিষয়ে এখনো কোনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে ঊর্ধ্বতন দলীয় সূত্র।