সরকার ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রীর বাসভবনে সরকার ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নীতিনির্ধারকদের কয়েক জনের বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ফখরুল এই অভিযোগ করেন। গতকাল রোববার বিএনপির ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মির্তারা সংবিধানে অনেক অস্পষ্টতা রেখেছে। সে অস্পষ্টতার মধ্য দিয়ে তারা ক্ষমতাকে আরও দীর্ঘ করতে চায়।’ কিন্তু জনগণ এই অপচেষ্টা প্রতিহত করবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। সরকারি টাকায়’ বিভিন্ন সভা-সমাবেশে গিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করছেন বলেও দাবি করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করার জন্য নেতা-কর্মীদের আন্দোলন-সংগ্রাম করার আহ্বান জানান তিনি।
সরকারের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার রাতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী শফিক আহমেদের ইন্দিরা রোডের বাসভবনে সরকার ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নীতিনির্ধারকদের কয়েকজন এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন। রাত ৮টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে অংশ নেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সংস্থাপনবিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খান, এ বি এম রিয়াজুল কবীর কাওছার ও আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব (চলতি দায়িত্বে) আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক।
বৈঠকে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়। মেয়াদ শেষের পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে কি না, তা নিয়েও আলোচনা হয়। সংবিধান অনুসারে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন হলে দল বা সরকারের জন্য কতটুকু ভালো হবে, তা নিয়েও বৈঠকে পর্যালোচনা করা হয় বলে জানা গেছে। এ ছাড়া বর্তমান সংবিধানে সংসদ বহাল রেখেই নির্বাচনের বিধান আছে। বৈঠকে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন করা যায় কি না, সে ব্যাপারেও দীর্ঘ আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। তবে নির্বাচন নিয়ে বৈঠক করার কথা অস্বীকার করেছেন আইনমন্ত্রী। সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, আইনমন্ত্রীর বাসভবনে গত শুক্রবার রাতের বৈঠকে নির্বাচনের সময় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। বৈঠকে কেউ মত দেন, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দিতে হলে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে। আবার কেউ বলেন, সংবিধান সংশোধন করতে হবে না। তবে একটি বিষয়ে তারা একমত পোষণ করেন যে, যা কিছুই করা হোক না কেন, সংবিধান সংশোধন করা যাবে না। কারণ, এতে করে নানা প্রশ্ন উত্থাপিত হবে। বৈঠক সূত্র আরও জানায়, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের তিন মাস, অর্থাৎ আগামী ২৪ জানুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে বৈঠকে মত প্রকাশ করা হয়। সংবিধান সংশোধন করে মেয়াদ শেষের পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করার পক্ষে মত দেননি উপস্থিত নেতারা। এ প্রসঙ্গে বৈঠকে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী সংবিধান সংশোধনের বিপক্ষে অনড় অবস্থান নিয়েছেন। নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারণ নিয়ে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হলে বিরোধী দল নানা প্রশ্ন তুলে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে আরও বৈঠক করা হবে বলে জানা গেছে।
জা ফখরুল।
আইনমন্ত্রীর বাসায় বৈঠক প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার চক্রান্ত শুরু করেছে।