পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ও মেলার আয়োজন করে দুবাইয়ে অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রির বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান ও কর্তাব্যক্তিদের ব্যাপারেও খোঁজ খবর নিচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কোন প্রক্রিয়ায় এটি করা হচ্ছে তাও দেখা হচ্ছে। কারণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া কেউই বিদেশে কোনো সম্পত্তি কিনতে দেশ থেকে টাকা পাঠাতে পারবে না। বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ পরিস্থিতিতে বিদেশে অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রিতে কোনো ধরনের অনিয়মের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ডামাক টাওয়ারস নামে একটি প্রতিষ্ঠান সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী দুবাইয়ে বুরজ এলাকায় সৌখিন হোটেল অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি করছে বলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছে। এজন্য বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীর গুলশানে দুইদিনের মেলারও আয়োজন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। পত্রিকার বিজ্ঞাপনে দেখা গেছে, দুবাইয়ের ওইসব অ্যাপার্টমেন্টে সর্বনিম্ন দর চার কোটি পাঁচ লাখ টাকা। সুযোগ-সুবিধার ওপর নির্ভর করে এগুলোর দর আরো বাড়বে।
তবে মাল্টিন্যাশনাল এই প্রতিষ্ঠানটির অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রির বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংককে কিছুই জানানো হয়নি। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া বিদেশে কোনো সম্পত্তি কিনতে বৈধভাবে টাকা পাঠানোর কোনো নিয়ম নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, দুবাইয়ের বুরজ এলাকায় শৌখিন হোটেল অ্যাপার্টমেন্ট কেনার জন্য যে মেলার আয়োজন করা হয়েছে সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আগে থেকে কিছুই জানানো হয়নি। তবে এক্ষেত্রে কতটুকু নিয়ম মানা হয়েছে এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকে অর্থ নিয়ে বিদেশে সম্পত্তি কেনার কোনো বিধান আইনে নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকও কাউকে বিদেশে সম্পদ কেনার অনুমতি দেবে না।
মাহফুজুর রহমান বলেন, বিদেশে অর্থ স্থানান্তর আইন-১৯৪৭ অনুযায়ীও বিদেশে কোনো সম্পদ কেনার জন্য বাংলাদেশ থেকে অর্থ নেয়ার বিধান নেই। যদি কেউ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার করে তবে অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন-২০১২ অনুযায়ী তা ফৌজদারি অপরাধ।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, চাইলে দেশ থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে সম্পত্তি কেনা যাবে না। এজন্য কোনো আইন নেই। যদি কেউ আইন লঙ্ঘন করে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া সম্পত্তি কেনার জন্য ব্যয় করা অর্থের আয়ের উৎস সম্পর্কে চাইলে দুদক অনুসন্ধান করতে পারবে বলে জানা তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র এএফএম আসাদুজ্জামান জানান, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বিদেশে অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রির বিজ্ঞাপন আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য হচ্ছে, বাংলাদেশি নাগরিকদের বিদেশে স্থাবর সম্পদ ক্রয়ে বিধিনিষেধ রয়েছে। এভাবে অর্থ প্রেরণে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৪৭ মোতাবেক এভাবে স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়ে বিধিনিষেধ রয়েছে।
সূত্র মতে, বিদেশে জমি কিংবা অ্যাপার্টমেন্ট কিনে দেশ থেকে অর্থ পরিশোধের সুযোগ না থাকলেও দু’টি দৈনিকে এ বিষয়ক একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ হয়। প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে বলা হয়, স্বপ্নের দুবাই এখন হাতের মুঠোয়। মাত্র চার কোটি পাঁচ লাখ টাকায় দুবাইতে শৌখিন হোটেল অ্যাপার্টমেন্ট। মূল্যও পরিশোধ সহজ কিস্তিতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, সংশ্লিষ্ট আইনের ৫ (১) ধারার (এ) উপধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া দেশের বাইরে অর্থ পরিশোধের সুযোগ নেই। আসাদুজ্জামান ব্যাখ্যা করে বলেন, রাষ্ট্রীয় নীতিমালা অনুযায়ী মূলধনী হিসাব খোলার কোনো বিধান নেই। তাই জমি বা অ্যাপার্টমেন্ট কেনার জন্য বিদেশে অর্থ স্থানান্তরেরও কোনো সুযোগ নেই। এদিকে বাংলাদেশে আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন এক বিবৃতি দিয়ে বিদেশি আবাসন কোম্পানির অবৈধ কর্মকা-ে বিদেশি অর্থ পাচারের আশঙ্কা করেছে।
সংগঠনটি আরো বলছে, দেশের আবাসন খাত যখন মুমূর্ষুপ্রায়, তখন এ ধরনের অবৈধ প্রচারণা আবাসন ব্যবসায়ীদের শঙ্কিত করেছে। তাই সংগঠনটি সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ দাবি করেছে।
হোম
বাংলাদেশ
ব্যবসা ও অর্থনীতি দুবাইয়ে অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রির প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক