বান কি-মুনের ফোনে ইতিবাচক প্রধানমন্ত্রী

0
520
Print Friendly, PDF & Email

নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে বিরোধীদল সংসদের আগামী অধিবেশনে কোনো প্রস্তাব দিলে তা স্বাগত জানানো হবে বলে জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বান কি-মুনের ফোনে ইতিবাচক প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন। ফাইল ছবি
 
শুক্রবার দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুনের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
 
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সমকালকে জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে জাতিসংঘ মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীকে টেলিফোন করেন এবং ফোনে তারা প্রায় আধা ঘণ্টা কথা বলেন।

তিনি জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা জাতিসংঘ মহাসচিবকে বলেন, “বিরোধীদলের যেকোনো প্রস্তাবকে আমরা স্বাগত জানাব যদি তা জাতীয় সংসদের আসন্ন অধিবেশনে দেয়া হয়।”
এছাড়া তিনি নিজে এবং তার সরকার সব সময়ই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো সমস্যার সমাধানে বিশ্বাসী বলেও জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানান প্রধানমন্ত্রী।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষ ৯০ দিনে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের’ অধীনে আগামী নির্বাচন হওয়ার কথা। ২০১১ সালে উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার পর সংবিধানে এই সংশোধনী আনা হয়।
আগামী সাধারণ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে এবং জনগণ কোনো বাধা-বিপত্তি ছাড়াই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে বলে শেখ হাসিনা দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করেন।
তবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ‘নির্দলীয় সরকারের’ অধীনে আগামী নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসছে। ‘নির্দলীয় সরকার’ ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচন হতে না দেওয়ার কথা এর আগেও বিএনপির পক্ষ থেকে একাধিকবার বলা হয়েছে।
 
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর থেকে আগামী বছরের ২৪ জানুয়ারির মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে।
 
এর আগে বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে আলোচনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে জানিয়ে বান কি-মুনকে শেখ হাসিনা বলেন, “ওই প্রস্তাবের কোনো জবাব না দিয়ে তিনি [খালেদা জিয়া] সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন এবং পরবর্তীতে বিরোধীদল সরকারের পতনের লক্ষ্যে সহিংসতা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যকর কার্যকলাপের মাধ্যমে দেশের শান্তি ও রাজনৈতিক পরিবেশ বিনষ্ট করে।”
 
বিরোধীদল নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে সংসদে একটি মুলতবি প্রস্তাব এনেছিল এবং সরকারি দল এই মুলতবি প্রস্তাব নিয়ে সংসদে আলোচনা করতে সম্মতি দিয়েছিল- উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “কিন্তু বিরোধীদল সমস্যার সমাধান চায় না বলে তিন ঘণ্টার মধ্যেই তাদের মুলতবি প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।”
 
তিনি বলেন, “সরকারি দল আলোচনা, সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মাধ্যমে রাজনৈতিক ইস্যুর সমাধান চায় বলেই জাতীয় সংসদে ইস্যুটি নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিল।”
 
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী সন্নিবেশিত করা হয়েছে- উল্লেখ করে জাতিসংঘ মহাসচিবকে প্রধানমন্ত্রী জানান, সর্বোচ্চ আদালত সংবিধানের ১৩তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেছে এবং যেকোনো অনির্বাচিত সরকার সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আদালত বলেছে, ‘কেবলমাত্র নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই দেশ চালাবে।’
 
সুশীল সমাজ এবং মিডিয়া প্রতিনিধিসহ সকল অংশীদারদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর সংসদীয় বিশেষ কমিটি সংবিধানের এই সংশোধনী আনে- উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “এই বিশেষ কমিটি আইনপ্রণেতা ছাড়াও সকল মহলের সঙ্গে আলোচনা করেছে এবং সংসদের ইতিহাসে অতীতে এতো দীর্ঘ সময় ধরে কখনো আলোচনা করা হয়নি।”
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার শান্তি চায় এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর দেখতে চায়। আগামী সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে যা যা করা দরকার তার সবই নিশ্চিত করা হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী এ সময় বান কি-মুনকে জানান।
 
আগামী সাধারণ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে এবং জনগণ কোনো বাধা-বিপত্তি ছাড়াই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে বলেও প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
 
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সহস্রাবব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) লক্ষ্যসমূহ অর্জনে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সাফল্যের প্রশংসা করে বান কি-মুন বলেন, “তার (শেখ হাসিনা) মতো নেতৃত্ব বাংলাদেশে দরকার।”
 
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে- উল্লেখ করে জাতিসংঘ মহাসচিব আশা প্রকাশ করেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্র, অর্থনীতি এবং জঙ্গিবাদ বিরোধী কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আশা প্রকাশ করেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্র, অর্থনীতি এবং জঙ্গিবাদ বিরোধী কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে।

দেশের পরিস্থিতি ও সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবকে অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতিসংঘ মহাসচিব আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানান।
 
প্রধানমন্ত্রী এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে জানান, জাতিসংঘ অধিবেশনে তার যোগদান নির্ভর করবে জাতীয় সংসদের অধিবেশন পরিস্থিতির ওপর। কেননা এ সময় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের অধিবেশন চলবে।
 
প্রধানমন্ত্রী সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরে আসার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকেও আমন্ত্রণ জানান।
 
বিএনপি ‘নির্দলীয় সরকারের’ দাবি জানিয়ে আসলও সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে দেন সংবিধান থেকে তার সরকার ‘এক চুলও’ নড়বে না।
 
প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের জবাবে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেন, নির্দলীয় সরকারের দাবির আন্দোলনের বাতাসে চুল উড়ে যাবে।
 
এ অবস্থায় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মহল থেকে সংলাপের কথা বলা হচ্ছে।

শেয়ার করুন