হাসিনা ও খালেদা জিয়া’কে বান কি মুনের টেলিফোন

0
181
Print Friendly, PDF & Email

বান কি মুনকে প্রধানমন্ত্রী
বিরোধী দলের প্রস্তাবকে স্বাগত জানাবে সরকার

আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্তমান সংবিধানের আলোকেই হবে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, তবে আসন্ন সংসদ অধিবেশনে বিরোধী দল যদি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আনে বা আলোচনা করতে চায় তাকে স্বাগত জানাবে তার সরকার।

শুক্রবার সকালে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ফোন করলে তার সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তার সরকার আলোচনা ও সংলাপের বিরোধী নয়। তিনি এর আগেও প্রধান বিরোধী দলকে সংলাপের প্রস্তাব দেন। কিন্তু বিরোধী দলীয় নেত্রী সংলাপে সাড়া দেওয়ার পরিবর্তে আলটিমেটাম দিয়ে দেশে অস্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতা সৃষ্টির চেষ্টা চালান বলেও জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। 

প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী জানান, শুক্রবার সকালে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে প্রায় আধা ঘণ্টা কথা বলেন। তিনি জানান, কুশল বিনিময় ছাড়াও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকসহ সার্বিক বিষয়ে কথা হয়েছে তাদের মধ্যে।

১৫ ও ২১ আগস্টের ঘটনায় শেখ হাসিনাকে সমবেদনা জানিয়ে বান কি মুন তাকে জাতিসংঘের আসন্ন সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলেও জানান ইকবাল সোবহান চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীও বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিবকে।

আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমেই নির্বাচন ও ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। অনির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া, নির্বাচনের আয়োজন বা ক্ষমতা হস্তান্তর সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের জনগণের রায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরই দেশ পরিচালনার অধিকার রয়েছে। জনগণও সেটা চায়।

তার সরকারের সময়কালে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন নির্বাচনের উদাহরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের প্রধান নির্বাহীকে আরও জানান, এ সরকারের সময়ে উপ-নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন মিলিয়ে প্রায় ৬ হাজার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব নির্বাচনের মাধ্যমে প্রায় ৩৬ হাজার জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। অনেক স্থানে সরকার দলীয় প্রার্থীও পরাজিত হয়েছেন। দেশের মানুষ, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল, পর্যবেক্ষক এবং দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মিডিয়া অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত সেসব নির্বাচনের প্রশংসা করেছেন।
 
প্রধানমন্ত্রী বান কি মুনকে আরও বলেন, পঁচাত্তরে জাতির জনককে হত্যার পর গত ৩৮ বছরের ইতিহাসে কখনও অসাংবিধানিকভাবে, কখনও অস্থিরতার মধ্য দিয়ে নির্বাচন বা ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও সরকার জনগণের স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ও ক্ষমতার পরিবর্তন চায় এবং এ বিষয়ে দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর।   

সংবিধানের আলোকেই তাই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আসন্ন নির্বাচন সম্পন্ন করে  জনরায়ের ভিত্তিতে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে- দৃঢ়তার সঙ্গে এ কথাও উচ্চারণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে বলেও জানান বান কি মুনকে। তিনি বলেন, সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে সংসদীয় বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়। সেখানে বিরোধী দলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা সে কমিটিতে যোগ দেয়নি। সুশীল সমাজ, ব্যবসায়ী, মিডিয়াসহ দেশের সর্বস্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে তাদের মতামত ও সুপারিশ নেওয়া হয়েছে।

সকলের মতামত ও পরামর্শের আলোকে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদে দীর্ঘ আলোচনা ও প্রক্রিয়ার পর সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিরোধী দল গত সংসদ অধিবেশনের আগে মুলতবি প্রস্তাব দিয়েছিল এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো সরকারি দল বিরোধী দলের মুলতবি প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছিল। সেটা নিয়ে আলোচনার সুযোগ ছিল। কিন্তু অধিবেশন শুরুর আগেই বিরোধী দল সেই মুলতবি প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিয়ে আলোচনার পথকে রুদ্ধ করে দেয়।

তারপরও আগামী ১২ সেপ্টেম্বর যে সংসদ বসতে যাচ্ছে, সেখানে আলোচনার সুযোগ রয়েছে। বিরোধী দল যদি কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আনতে বা আলোচনা করতে চায়, তাহলে সরকার তাকে স্বাগত জানাবে।

আগামী দিনগুলোতে বিরোধী দল গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে। দেশের মানুষের চাওয়া অনুসারে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন আয়োজন ও সে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা দেবে- এমনটাই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

খালেদা-বান কি মুন টেলি সংলাপ
জাতিসংঘ সব দলকে নির্বাচনে চায়

জাতিসংঘ বাংলাদেশে সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন চায়। বিএনপির চেয়ারপারসন ও বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে ফোন করে এ কথা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন।

তবে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না বলে তাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।

খালেদা বলেছেন, তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে চান এবং সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন চান। কিন্তু বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। 

সংলাপের জন্য তিনি সব সময়ই প্রস্তুত আছেন বলেও উল্লেখ করেন খালেদা জিয়া।

জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন শুক্রবার সন্ধ্যায় ফোন করেন খালেদা জিয়াকে। ফোনে বিএনপি প্রধানের সঙ্গে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক ও আগামী নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন বান কি মুন।

জাতিসংঘ বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং জাতিসংঘ এ পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন বলেও খালেদাকে বলেন বান কি মুন।

সন্ধ্যা পৌনে ৭টা থেকে সোয়া ৭টা পর্যন্ত আধা ঘন্টা বান কি মুনের সঙ্গে খালেদা জিয়ার এ ফোনালাপ হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে কথা বলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই খালেদা জিয়াকেও ফোন করলেন বান কি মুন।
 
এ সম্পর্কে রাতে গুলশানে খালেদার রাজনৈতিক কার্যালয়ে জরুরি ব্রিফিং ডেকে বিস্তারিত জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মির্জা ফখরুল জানান, বান কি মুন খালেদাকে বলেছেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং জাতিসংঘ এ পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন।

জাতিসংঘ দেশে সকল দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন চায় বলেও খালেদাকে জানিয়েছেন মহাসচিব। একই সঙ্গে তিনি সরকার ও বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন।

জবাবে খালেদা জিয়া জানিয়েছেন, সংলাপের জন্য তিনি সব সময়ই প্রস্তুত আছেন।

এর আগে সকাল এগারোটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে তার সঙ্গেও আধা ঘণ্টা কথা বলেন বান কি মুন। সে সময় আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্তমান সংবিধানের আলোকেই হবে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানিয়েছেন, তবে আসন্ন সংসদ অধিবেশনে বিরোধী দল যদি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আনে বা আলোচনা করতে চায় তাকে স্বাগত জানাবে তার সরকার।

তার সরকার ও দল আলোচনা ও সংলাপের বিরোধী নয় বলে জানিয়ে জাতীয় সংসদে সেটি হতে পারে বলেও ইঙ্গিত করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেয়ার করুন